এস কে দাস: বেতন ভাতা বাড়লে, বাড়বে উৎপাদনশীলতা এবং কমবে দুর্নীতি এমনটায় ভাবছে সরকার গঠিত পে-কমিশন। তবে এর সঙ্গে মোটেও একমত নন দেশের অর্থনীতিবিদ ও সমাজ বিজ্ঞানীরা। একমাত্র আইনের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমেই দুর্নীতি কমানো সম্ভব বলে মত তাদের। পরিবারের সদস্য সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে বেতন ভাতা বাড়ানোর সিদ্ধান্তের সঙ্গেও দ্বিমত রয়েছে তাদের।
জাতীয় বেতন কাঠামোভুক্ত সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য নতুন বেতন কাঠামো নির্ধারনে গত নভেম্বরে ১৭ সদস্যের বেতন ও চাকরি কমিশন গঠন করে সরকার। তবে চূড়াšত্ম প্রতিবেদন তৈরি করতে এক থেকে দেড় বছর সময় লাগবে বলে সম্প্রতি জানিয়েছে পে এ্যান্ড সার্ভিসেস কমিশন। সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারিদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে মূল্যস্ফীতি ও পরিবারের সদস্য সংখ্যার কথা মাথায় রেখে নতুন বেতন কাঠামো তৈরি হবে বলে জানানো হলেও এ সিদ্ধান্তে সাথে একমত নন সমাজ বিজ্ঞানীরা।
ঢাবির সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘বেতন কাঠামোতে পরিবারের সদস্য সংখ্যা আনা ঠিক নয়। আমাদের দেশে এর অনেক কারণ। বাংলাদেশের বেতন কাঠামো অনেক কম। দারিদ্রের কারণে দুর্নীতি, এরপর পাশাপাশি প্রাচুর্যের কারণেও দুর্নীতি বাড়ছে। বেতনটাকে যদি একটু পর্যাপ্ত করা যায়, তাহলে তার দুর্নীতি করার প্রয়োজনটা হবে না কিন্তু প্রয়োজন নেই বলে যে সে দুর্নীতি করবে না এমনটা ভাবারও কারণ নেই।’
বেতন বাড়ানো হলে সরকারি কাজে দুর্নীতি ও অনিয়ম কমে আসবে বলে মনে করা হলেও অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন এর জন্য আসলে প্রয়োজন সুশাসন। বি আইডিএস’র গবেষক ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, ‘পে কমিশন করে বড় রকমের জাম্প দেয়া হয়, তখন সার্বিকভাবে মনে করে অনেকের মতো সবারই বেতন বেড়ে গেছে। তখন এটা সার্বিকভাবে বিভিন্নভাবে প্রভাব ফেলে দৈনন্দিন জীবনে। সরকারের বেতন বৃদ্ধির ফলে যারা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিম্ন আয়ের কর্মজীবীরা আছেন তাদের উপরও একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। বেতন বাড়িয়ে কোন ভাবেই ঘুষ ও দুর্নীতি বন্ধ করা যাবে না। একমাত্র ঘুষের জন্য যে সকল আইন আছে, আইনের কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে এটা কমানো সম্ভব বেতন স্কেল বাড়লেই যে ঘুষ ও দুর্নীতি কমে যাবে বলে যা মনে করা হচ্ছে তা কখনোই কমবে না।’
বর্তমানে দেশের ১৩ লাখেরও বেশি সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীর জীবন মান উন্নয়নে নতুন বেতন কাঠামো কতটুকো ভুমিকা রাখবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে সংশ্লিষ্টদের।