রাজধানীর নামকরা স্কুলেও বেড়েছে ফেল, কমেছে জিপিএ-৫

Image

এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাসের হার ও জিপিএ-৫ দুটোই কমেছে। দেশের সকল বোর্ডের বেশিরভাগ স্কুলেই এই ফল বিপর্যয় ঘটেছে। এবার ঢাকা বোর্ডে অংশগ্রহণ করা ৪ লাখ ১৬ হাজার ৪২৬ শিক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ৩ লাখ ২২ হাজার ৯৩২ জন। ৯৩ হাজার ৪৯৪ শিক্ষার্থী ফেল করাতে এই বোর্ডে ফেলের হার দাঁড়িয়েছে ২২ দশমিক ৫ শতাংশ।

গতবার ১০ শতাংশ অকৃতকার্য হলেও এবার দ্বিগুণ বেড়েছে ফেলের হার। গতবার এই বোর্ডে ১৮ দশমিক ৩ শতাংশ শিক্ষার্থীর জিপিএ-৫ থাকলে এবার ৪ শতাংশ কমে সর্বোচ্চ জিপিএ ধারী শিক্ষার্থী ১৪ দশমিক ৩ শতাংশ। ফল বিপর্যয় ঘটেছে ঢাকা বোর্ডের অধীনে থাকা রাজধানীর নামকরা স্কুলগুলোতেও। ফেলের সংখ্যা বেড়ে এসব স্কুলে কমেছে জিপিএ-৫ ধারী শিক্ষার্থীর হার।

জানা যায়, চলতি বছরে এই পাবলিক পরীক্ষায় গড় পাসের হার ৮০ দশমিক ৩৯ শতাংশ। যদিও ৮৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ ছিল আগের বছরের পাসের হার। গতবারের চেয়ে এবার ৭ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়েছে ফেল করা শিক্ষার্থীর হার। ফেলের হার বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কমেছে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাও। ২০২২ সালে জিপিএ-৫ পেয়েছিল ২ লাখ ৬৯ হাজার ৬০২ জন। চলতি বছর এই সংখ্যা কমে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৫৭৮ জনে এসে দাঁড়িয়েছে।

ঢাকার নামকরা স্কুল সমূহের মধ্যে মিরপুরের মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে সবচেয়ে বেশি ফল বিপর্যয় ঘটেছে বলে মনে করছেন এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। এই স্কুলের ৩ হাজার ৮৮০ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৩ হাজার ৫৫৪ জন ফেল করেছেন। এরমধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ হাজার ২৪৮ শিক্ষার্থী। সংখ্যায় গতবারের চেয়ে পরীক্ষার্থী বাড়লেও অর্ধেকের বেশি কমেছে জিপিএ-৫। এই প্রতিষ্ঠানে ফেলের হার বেড়েছে ৮ দশমিক ১৯ শতাংশ।

২২৬ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৮১ দশমিক ৮৬ শতাংশ পাস করেছে লালবাগ সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজে। গতবার ৪ দশমিক ৯২ শতাংশ শিক্ষার্থী ফেল করলেও এর প্রায় তিনগুণ বেড়ে এবার হয়েছে ১২ দশমিক ২২ শতাংশ। আগের বারের চেয়েও জিপিএ-৫ কমেছে এবার। ২০২২ সালে ৯৯ দশমিক ৬৫ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করলেও খিলগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে এবার পাসের হার ৯৬ দশমিক ১১ শতাংশ। ফেলের হার বেড়েছে ৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ। আগের বারের ১৪৭ জন জিপিএ-৫ ধারীর এই প্রতিষ্ঠানে এবার প্রায় সমপরিমাণ পরীক্ষার্থী অংশ নিলেও সর্বোচ্চ জিপিএ পেয়েছে ৭৯ জন।

গতবার ২০০ জিপিএ-৫ পাওয়া গভমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুলে এবার সর্বোচ্চ জিপিএ পেয়েছে ১৫৫ জন। এই প্রতিষ্ঠানে ফেলের হার বেড়েছে ২ দশমিক ৭৬ শতাংশ। জিপিএ-৫ এবং পাসির হার নিম্নমুখী রাজধানীর বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজেও। গতবার ৫৩০ জন পরীক্ষা দিয়ে ৪১৩ জন জিপিএ-৫ পেলেও এবার ৬২০ পরীক্ষার্থীর মধ্যে সর্বোচ্চ জিপিএ পায় ৩৩৫ জন। এই প্রতিষ্ঠানে আগের বারের চেয়েও কমেছে পাসের হার। আগের বছর শহীদ পুলিশ স্মৃতি স্কুল এন্ড কলেজে ৬৪৮ পরীক্ষার্থীর মধ্যে জিপিএ-৫ বঞ্চিত হয় শুধুমাত্র ১৪৯ জন। এই প্রতিষ্ঠানেও এবার ৬১৬ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র ২৯২ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। এই স্কুলেও গতবারের চেয়ে কমেছে পাসের হার।

এছাড়া পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়লেও মিরপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে গতবারের চেয়ে জিপিএ-৫ কমেছে। ৩১২ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র ৭৭ জন পেয়েছে সর্বোচ্চ জিপিএ। শের-ই-বাংলা নগর সরকারি গার্লস হাই স্কুলে প্রায় সমপরিমাণ পরীক্ষার্থী অংশ নিলেও জিপিএ-৫ গতবারের চেয়ে কমেছে। ২০২২ সালে ২৪১ পরীক্ষার্থীর ১৩৪ জন জিপিএ-৫ পাওয়া এই প্রতিষ্ঠানে এবার ২৪৬ জনে সর্বোচ্চ জিপিএ পায় ৯৬জন।

পূর্বের বছরগুলোতে ভালো ফলাফল করা মনিপুর স্কুলে এবার হঠাৎ ফলাফল বিপর্যয়ে ক্ষুদ্ধ অভিভাবকরা। তাদের অভিযোগ এই স্কুলের কেন্দ্র মিরপুর গার্লস আইডিয়াল ল্যাবরেটরি ইনস্টিটিউটে নিয়মিত পরীক্ষার্থীদের সাথে নিয়মিত দুর্ব্যবহার করা হত। এছাড়া সার্বক্ষণিক ধমকের উপর রাখাসহ খাতা আটকে রাখা, ইচ্ছাকৃতভাবে প্রশ্নপত্র বিলম্বে বিতরণ ও দেরিতে অতিরিক্ত কাগজ দেয়া হত বলে অভিভাবকদের অভিযোগ কেন্দ্রের বিরুদ্ধে। এরফলে এই স্কুলের শিক্ষার্থীদের ফলাফলে এমন বিপর্যয় ঘটেছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

তানভীর হোসেন নামের এক অভিভাবকের দাবি, বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষকরা ক্লাসে শিক্ষার্থীদের টিউশনি আর কোচিংয়ের প্রতি উদ্ভুদ্ধ করে লেকচার দেয়। এতে শুধুমাত্র কোচিংয়ে অথবা বাসায় টিউটর রেখে পড়ানো শিক্ষার্থীরাই ভালো করতে পারে। সকল শিক্ষার্থীকে নিয়ে প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষকদের চিন্তা করা উচিৎ বলে মনে করেন এই অভিভাবক।

ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর মো. আবুল বাশার বলেন, এবার রেজাল্ট আগের বারের চেয়ে খারাপ হলেও পূর্বের বছরের সাথে এই বছরের প্রেক্ষাপট কিছুটা ভিন্ন। ২০২২ সালে সব বিষয়ের পরীক্ষা হয়নি। সুতরাং পরীক্ষা পদ্ধতির অমিল থাকায় এবারের এই রেজাল্টকে বিপর্যয় মনে করছেন না তিনি।

ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর তপন কুমার সরকার বলেন, মিরপুরের মনিপুর হাই স্কুলের ফলাফল বেশি খারাপ হয়েছে। এই বিষয়ে আমাদের নিকট অভিযোগও আসছে। আমরা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে এই প্রতিষ্ঠানের ফলাফল খারাপ হওয়ার বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখবো।

তিনি আরও বলেন, সাধারণত সব প্রতিষ্ঠানেই অন্যান্য বারের চেয়ে এবার ফলাফল বেশি খারাপ হয়েছে। এটির সুনির্দ্দিষ্ট কোনো কারণ বলা যায় না। কারণ গতবারের পরীক্ষার সাথে এবারের পরীক্ষা মিলবে না।

উল্লেখ্য, ২০২৩, ২০২২, ২০২১ ও ২০২০ সালের এসএসসি পরীক্ষায় ঢাকা বোর্ডের অধীনে যথাক্রমে ২২ দশমিক ৫ শতাংশ, ১০ শতাংশ, ৬ দশমিক ৮ শতাংশ ও ১৭ দশমিক শতাংশ শিক্ষার্থী ফেল করেছে। এতে দেখা যায়, অন্যান্যবারের চেয়ে ফেলের হার বেড়েছে এবারের এই পাবলিক পরীক্ষায়।

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।