নর্থ সাউথের ৪০ ছাত্রের তথ্য চায় সরকার

নিজস্ব প্রতিবেদক: জঙ্গিবাদে বেসরকারি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়টির ৪০ ছাত্রের তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।

ইউজিসি থেকে একটি তালিকা পাঠিয়ে এই শিক্ষার্থীদের বিষয়ে বিশদ তথ্য চেয়েছে সরকার। এই ৪০ ছাত্র ক্লাসে প্রায়ই অনিয়মিত থাকেন ও দুই বছর ধরে কমবেশি ক্যাম্পাসে অনুপস্থিত।

জাতীয় দৈনিক সমকাল এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার মো. শাহজাহানকে এরই মধ্যে চিঠি দিয়ে প্রয়োজনীয় নথিপত্র প্রস্তুত রাখতে এবং সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের আজ ক্যাম্পাসে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ তদন্ত দলের প্রধান ইউজিসি সদস্য প্রফেসর ড. দিল আফরোজা বেগম। ইউজিসির একটি তদন্ত দল বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বসুন্ধরা ক্যাম্পাসে সরেজমিন তদন্তে যাচ্ছে।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, একটি গোয়েন্দা সংস্থার দেওয়া প্রাথমিক প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই অফিসিয়ালি ওই ৪০ ছাত্রের তথ্য চাওয়া হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিশ্ববিদ্যালয় উইংয়ের দায়িত্বশীল সূত্র এই ৪০ ছাত্রের তালিকা দিয়ে তথ্য চাওয়ার কথা স্বীকার করেছে। যদিও এই ৪০ ছাত্রের নাম প্রকাশ করেনি সূত্র।

এদিকে, তথ্য চাওয়া ৪০ ছাত্রের মধ্যে ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের শিক্ষার্থীই ১১ জন। এ ছাড়া বিবিএ, ফিন্যান্স ও প্রকৌশল বিষয়ের আরও কয়েকটি বিভাগের শিক্ষার্থীরা এর মধ্যে রয়েছেন।

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের (বিওটি) সদস্য মোহাম্মদ শাহজাহান জানান, সরকারের পক্ষ থেকে তাদের শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে বিভিন্ন তথ্য চাওয়া হচ্ছে। তারা সরকারকে সব ধরনের সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পাশাপাশি তারা নিজ উদ্যোগেও শিক্ষার্থী ও কর্মরত শিক্ষকদের ব্যাকগ্রাউন্ড সম্পর্কে খোঁজখবর নেবেন।

তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের কাছে গত দু’বছর অনুপস্থিত ছিল এমন ছাত্রদের তালিকা চাওয়া হয়েছে। যদিও এটা প্রস্তুত করা কঠিন। এরপরও আমরা তালিকাটি তৈরি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ ছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন বিভাগের ৩০-৪০ ছাত্রের ব্যাপারে তথ্য চাওয়া হয়েছে। আসলে প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো ছাত্রের তথ্য চাওয়া হচ্ছে। আমরা সে সব তথ্যও সরবরাহ করছি।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা জানান, এ যাবত গ্রেফতার জঙ্গিদের মধ্যে স্কলাসটিকা স্কুলের ১৪তম ব্যাচের এবং নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ ও ইইই বিভাগের ছাত্র বেশি। যে কারণে এ দুই প্রতিষ্ঠানের দিকে সন্দেহের তীর প্রবল। ওই সূত্র আরও জানায়, এ কারণে এই দুই প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট ব্যাচের সব ছাত্রের বিষয়ে খোঁজ নিতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এসব ব্যাচের ও বিভাগের আর কে কোথায় কী করছে, কে মিসিং আছে সে সব তথ্য সংগ্রহ করতে বলা হয়।

অভিযোগ উঠেছে, শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযম ও মতিউর রহমান নিজামীর ছেলেরা নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক।

গোলাম আযমের বড় ছেলে সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত আবদুল্লা হিল আমান আল আযমী নর্থ সাউথের খণ্ডকালীন শিক্ষক ও অপর ছেলে সাদমান আযমী ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক।

অন্যদিকে, মতিউর রহমান নিজামীর ছেলে নাদিম তালহা নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন। বর্তমানে তিনি পিএইচডি করতে দেশের বাইরে আছেন।

ঈদুল ফিতরের দিন শোলাকিয়ায় পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় নিহত আবীর এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। গত ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান দুই শিক্ষার্থীর সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়।

এর আগেও গত বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি ব্লগার রাজীব হায়দারকে হত্যার সঙ্গেও জড়িত থাকার অভিযোগ ছিল এ বিশ্ববিদ্যালয়েরই পাঁচ শিক্ষার্থীর ওপর। তারও আগে ২০১২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে নাশকতা চেষ্টার অভিযোগে গ্রেফতার বাংলাদেশি তরুণ কাজী মোহাম্মদ রেজওয়ানুল আহসান নাফিসও ছিলেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী।

অন্যদিকে হিযবুত তাহরীরের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে হাসনাত করিম নামে এক শিক্ষকসহ আরও তিন শিক্ষককে বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনিয়মের তদন্ত করে ইউজিসি। তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয়টির বিভিন্ন দুর্নীতির সত্যতা পাওয়া যায় বলে জানিয়েছেন ইউজিসির চেয়ারম্যান। তাদের লাইব্রেরিতে নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরীরের কিছু বইপত্রও পাওয়া যায়।

ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, ‘বৃহস্পতিবার তদন্ত দল এনএসইউতে যাবে। আমরা গত অক্টোবরে একটি তদন্ত করেছিলাম। মূলত সেই তদন্তের ফলোআপ হিসেবে এবারের তদন্ত কমিটি সেখানে যাবে। তবে সাম্প্রতিক বিষয়াবলীও এই তদন্ত কমিটি দেখবে।’

তিনি আরও বলেন, আমরা শুনেছি দু’জন যুদ্ধাপরাধীর পরিবারের সদস্যরাও ই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। ফলে সে বিষয়েও জানতে চাওয়া হবে।

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।