দীর্ঘমেয়াদি পেটের পীড়া রোগীর খাবার

Image

সাধারণত আইবিএস’র কারণে পেট ব্যথা, পেট ফাঁপা, মলত্যাগের ধরন পাল্টে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যা হয়। মলের ধরনও পাল্টে যায়। হয়তো আগে স্বাভাবিক পায়খানা হতো এখন বেশি নরম হয়ে যাচ্ছে, অথবা বেশি শক্ত হয়ে যাচ্ছে।

আইবিএস’র লক্ষণ

* স্বাভাবিক বাউয়েল মুভমেন্টে পরিবর্তন হয়, ফলে ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দেয়। * পেটে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। * মলের রং, আকার এবং ঘনত্বে পরিবর্তন হয়। * পেট ফাঁপা এবং পেটে মোচড় দেয়া। * পেটে গ্যাস এবং পেট জ্বালা। * পেট কামড়ানো, ঢেঁকুর ওঠা। * বমি, ক্ষুধা কমে যাওয়া, খুব অল্পতে পেট ভরে যাওয়া, মুখের স্বাদ নষ্ট হয়ে যাওয়া।

হতাশা, অবসাদ, ক্লান্তিবোধ। * ঘুমের সমস্যা, পেশিতে ব্যথা। * ঘন ঘন প্রস্রাবের চাপ বৃদ্ধি পাবে।

প্রকারভেদ

ইরিটেবল বাউয়েল সিনড্রম মূলত দুই প্রকার:- * আইবিএস রিলেটেড ডায়রিয়া। * আইবিএস রিলেটেড কনস্টিপশন। তবে কারও ক্ষেত্রে ডায়রিয়া বা কনস্টিপশন- এ দুই ধরনের সমস্যা একসঙ্গেই থাকে।

আইবিএস রিলেটেড ডায়রিয়ার সমস্যা থাকলে, নিম্নোক্ত নিয়মগুলো অনুসরণ করুন। * যেসব খাবারে উচ্চ পরিমাণে ইনসলিউবল ফাইবার বা অদ্রবনীয় আঁশ (অর্থাৎ যে আঁশগুলো পানিতে অদ্রবনীয়) রয়েছে সেসব খাবার আপনার খাদ্য তালিকা থেকে কমিয়ে ফেলতে হবে। যাদের আইবিএস রিলেটেড ডায়রিয়ার সমস্যা রয়েছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, সেসব খাবারে তাদের হজমে সমস্যা হয়। সেই খাবারগুলো তারা অধিক পরিমাণে খেয়ে ফেলেন। যে কারণে প্রায়ই তারা ডায়রিয়ার সমস্যায় ভোগেন। যেসব খাবারে ইনসলিউ অদ্রবনীয় আঁশ রয়েছে, সেসব হলো- গোটাশস্য বা হোল গ্রেন, গমের ভুসি, বাদাম, ফুলকপি, আলু, মটরশুঁটি, যেকোনো গাঢ় সবুজ রঙের শাকসবজি, আপেল, ডাল, অ্যাভোকেডো, স্ট্রবেরি, মাটির নিচের সবজির খোসা, বাদামি চাল। * কাঁচা যেকোনো খাবার পরিহার করা উচিত। ভালোভাবে রান্না করা খাবার খেতে হবে। সালাদ এবং কাঁচা শাকসবজি গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে। * বাইরের অস্বাস্থ্যকর খাবার যতটা সম্ভব পরিহার করা উচিত। ঘরে তৈরি স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণের ব্যাপারে জোর দিতে হবে। * অতিরিক্ত তেল এবং মসলা জাতীয় রান্না করা খাবার থেকে বিরত থাকুন। * যেসব খাবারে সরবিটল আছে, সেসব খাবার বর্জন করা। সরবিটল হচ্ছে চিনির বিকল্প। * যাদের আইবিএস রিলেটেড ডায়রিয়ার সমস্যা রয়েছে, তাদের দুধ বা দুধের তৈরি খাবার খেলে ডায়রিয়া হতে পারে। তাই একদম খালি পেটে দুধ বা দুধের তৈরি খাবার খাবেন না। * যেসব খাবারে গ্লুটেন রয়েছে, সেসব খাবার খেলে ডায়রিয়া হবে। যেমন- গম এবং গম দিয়ে তৈরি খাবার। এটা এড়ানোর জন্য রুটির বদলে ভাত খাবেন। * মিষ্টি জাতীয় খাবার বর্জন করতে হবে। * প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। প্রয়োজনে স্যালাইন খেতে হবে। কেননা, ডায়রিয়ার কারণে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে ইলেক্ট্রোলাইটস বের হয়ে যায়। * খাবার ধীরে ধীরে ভালোভাবে চিবিয়ে খাবেন।

করণীয় 

* সঠিক পরিমাণে পানি পান করবেন। এতে মল নরম হবে, কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর হবে। * দ্রবণীয় আঁশ জাতীয় খাবার গ্রহণের পরিমাণ বাড়াতে হবে। এসব খাবার হচ্ছে- বার্লি, ওটস, ওটমিল, ডুমুর, বিন্স, মিষ্টিআলু, সাইট্রাস ফল, বাদাম, ডাল, শসা, গাঁজর, সেলেরি, ফ্লাক্সসিড, নাশপাতি।

পেট ফাঁপা এবং পেট কামড়ালে যা করবেন- * অতিরিক্ত তেল এবং চর্বি জাতীয় খাদ্য পরিহার করুন। * ক্রুসিফেরাস গোত্রের সবজি যথা- ফুলকপি, পাতাকপি, ব্রকলি, মুলা, শালগম পরিহার করুন। * দ্রবণীয় আঁশ জাতীয় খাবার গ্রহণ করুন। এসব খাবার হচ্ছে- বার্লি, ওটস, ওটমিল, ডুমুর, বিন্স, মিষ্টিআলু, সাইট্রাস ফল, বাদাম, ডাল, শসা, গাঁজর, সেলেরি, ফ্লাক্সসিড ও নাশপাতি। * একবারে অনেক খাবার খাবেন না। অল্প অল্প করে কিছুক্ষণ পর পর খাবেন। এতে করে পেট খালি থাকবে না। হজমেও সমস্যা হবে না। * অল্প অল্প পানি পান করবেন। আপনার দেহের ওজন এবং পরিশ্রমের ধরন অনুযায়ী পানি পান করতে হবে। যে বিষয়গুলো আইবিএসে আক্রান্তদের মেনে চলা উচিত নিয়মিত প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার খাবেন। * গ্লুটেন সমৃদ্ধ খাবার পরিহার করুন। বিশেষ করে যাদের গ্লুটেন রহঃড়ষবৎবহপ-এর সমস্যা আছে। গ্লুটেন সমৃদ্ধ খাবার হচ্ছে- গমের আটার তৈরি যেকোনো খাবার, রুটি, বিস্কুট, কেক ইত্যাদি। এই খাবারগুলো খেলে যাদের ডায়রিয়া বা বদহজম হয়, তারা এসব খাবার পরিহার করবেন। এর পরিবর্তে চালের রুটির ভাত, চিড়া, খৈ ইত্যাদি ধরনের খাবার বেছে নিন। * দুধ এবং দুধের তৈরি খাবার খেলে যাদের সমস্যা হয়, তারা খালি পেটে দুধ এবং দুধের তৈরি খাবার খাবেন না। ভরা পেটে খাবেন। পরিমাণে কম খাবেন। এরপরও যদি সমস্যা হয়, তবে বাদ দেবেন এবং প্রতিদিন টক দই খাবেন। * যেকোনো নতুন খাবার অল্প পরিমাণে শুরু করবেন। পরিমাণ ধীরে ধীরে বাড়াবেন, তাহলে সমস্যা হবে না। তবে নতুন যেকোনো খাবার একসঙ্গে অনেক পরিমাণে খেলে হজমে সমস্যা হবে। * রান্নায় গুঁড়া মরিচ ব্যবহার করবেন না। * বাসি খাবার খাবেন না। * খাবার গ্রহণের মাঝে পানি পান করবেন না। এতে হজম প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়। *দীর্ঘক্ষণ খালি পেটে থাকবেন না, এতে আইবিএসের সমস্যা বেড়ে যাবে। * খাবার গ্রহণের সময় তাড়াহুড়ো করবেন না। ভালোভাবে চিবিয়ে খাবেন, বড় মিলগুলো অর্থাৎ ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ, ডিনার-এ তিন বেলার খাবার অন্তত ১৫ মিনিট ধরে খান। * রাতে খাবার গ্রহণ এবং ঘুমুতে যাবার মাঝে অন্তত তিন ঘণ্টা ব্যবধান থাকা উচিত। * সম্ভব হলে ঘুমুতে যাওয়ার আগে ১০ মিনিট ঘরে পায়চারী করবেন। * প্রতি বেলার খাবার সময়মতো খাবেন। * প্রতিদিন ৪৫ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা ব্যায়াম করবেন। * পর্যাপ্ত ঘুমানোর চেষ্টা করবেন, * যেসব খাবারে আপনার সমস্যা হয়, সেই খাবারগুলো পরিমাণে কম খাবেন।

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, কোলোরেক্টাল সার্জারি বিভাগ, কোলোরেক্টাল, ল্যাপারোস্কপিক ও জেনারেল সার্জন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা। চেম্বার: ১৯, গ্রীন রোড, একে কমপ্লেক্স, লিফ্‌?ট-৪, ঢাকা। যোগাযোগ-০১৭১২-৯৬৫০০৯

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।