ওজন কমানোর স্বাস্থ্যসম্মত ডায়েট চার্ট

Image

ডেস্ক: পৃথিবীর পরিবর্তনের সাথে সাথে মানুষের ব্যস্ততা বাড়ছে। কাজের চাপে মানুষ খাদ্য গ্রহণের নিয়ম পরিবর্তন করছে। খাদ্য গ্রহণের নিয়মের কারণে মুটিয়ে যাচ্ছেন অনেকে।

আবার অনেকের স্বাস্থ্যগত অবনতি ঘটছে। আমাদের দেশীয় সংস্কৃতি অনুযায়ী খাদ্য গ্রহণের যে পদ্ধতি তাতে বেশিরভাগ মানুষেরই পেট, কোমর, আর নিতম্ব অঞ্চলে মেদ জমে যায়।

আমাদের দেশে সাধারণত সকালের খাবার খাওয়া হয় খুবই হালকা ধরনের, দুপুরে আর রাতে ভারী খাবার খাওয়া হয়। এতে বয়স পঁচিশের কোটা ছাড়ানোর আগেই মানুষ মুটিয়ে যায়।

আবার শিশুদেরও অনেকে ওভারওয়েট হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এই স্থূলতা ভোগা মানুষগুলোরও বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিহীনতা দেখা যায়। ইন্টারনেটের সুবাদে আমরা ‘ডায়েট’ শব্দটার সাথে পরিচিত হয়েছি। যার অর্থ আমরা ধরেই নিয়েছি— না খেয়ে থাকা বা ফাস্টিং।

খুব বেশি হলে ওয়াটার ফাস্টিং সাথে লেবু, ভিনেগার খেয়ে শরীরের মেদ কমানোর ব্যবস্থা করা। কিন্তু ডায়েট অর্থ না খেয়ে থাকা নয়, আর আপনার শরীর খালি পেটে লেবু বা ভিনেগার গ্রহণ করতে মোটেই প্রস্তুত থাকে না। খাবারের মধ্যে একটু ব্যালেন্স এনে নিজেকে সুস্থ আর স্বাভাবিক রাখাই সবার কাম্য।

ওজন কমাতে পরিশ্রম ও নিয়মিত ব্যায়ামের পাশাপাশি খাদ্য তালিকায় পরিবর্তন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দৈনিক এক গ্রাম প্রোটিন গ্রহণ করলে দেহে প্রোটিনের অভাব থাকে না।

৬০ কিলোগ্রাম ওজনবিশিষ্ট ব্যক্তির খাদ্য ৬০ গ্রাম প্রোটিন হলেই ভালো হয়। প্রতিমাসে একদিন ওজন মাপতে হবে, লক্ষ্য রাখতে হবে ওজন বাড়ার হার কম না বেশি।

ওজন বৃদ্ধি অসুখের লক্ষণ। মেদ, ভুঁড়ি বা অতিরিক্ত ওজন কোনোটাই সুস্বাস্থ্যের লক্ষণ নয়। বরং নানা অসুখের কারণ হয়ে দেখা দেয়—একথা সব সময় মনে রাখবেন এবং স্বাস্থ্যসচেতন হবেন।

ওজন কমানোর ডায়েট করার সময় চিনিযুক্ত খাবার, বেশি তেলে ভাজা পোড়া খাবার, মিষ্টিজাতীয় পানীয়, ট্রান্স ফ্যাটযুক্ত খাবার, প্রাণিজ ফ্যাট, রিফাইন্ড করা বা চকচকে সাদা ময়দার তৈরি খাবার, মধু বা সিরাপ জাতীয় খাবার, মিষ্টি জাতীয় শুকনা ফল এবং প্রক্রিয়াজাত করা স্নাক ফুড, স্টার্চযুক্ত সবজি (যেমন আলু, ভুট্টা, মিষ্টি আলু) কখনই খাবেন না।

আঁশবহুল খাবার যেমন ডাল, শাক, সবজি, ঢেঁকি ছাঁটা চাল, গমের আটার রুটি, টকফল বেশি খেতে হবে। বেশি বেশি ক্রুসিফেরাস ভেজিটেবিল (যেমন পাতাকপি, ফুলকপি) শিম জাতীয় সবজি, টমেটো, গাজর, পাতাযুক্ত শাক, মসুর ডাল, বাদাম খেতে হবে।

ওজন কমানোর জন্য স্বাস্থ্যসম্মত ডায়েটের পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমানো এবং দৈনিক ৪০-৪৫ মিনিট হাঁটা বা ব্যায়াম করা দরকার। ওজন কমানোর গতিকে ত্বরান্বিত করার জন্য দৈনিক কমপক্ষে ৮ ঘণ্টা ঘুমানো দরকার, কারণ পর্যাপ্ত ঘুম শরীরের মেটাবোলিজম বাড়িয়ে দেয়।

সকালে ঘুম থেকে ওঠে ব্রাশ করার পর কমপক্ষে ২ গ্লাস পানি পান করে নিবেন, আর সারাদিন তো বেশি বেশি পানি পান করবেনই। তবে উল্লিখিত খাবারগুলো যে একসাথে খেতে হবে তা নয়, এসব খাদ্য উপাদানগুলোর মধ্যে যেকোনো একটি ভাগ খেতে হবে।

সকাল: দুধ ছাড়া চা বা কফি, দুটো আটার রুটি, এক বাটি সবজি সেদ্ধ, এক বাটি কাঁচা শসা। শসা ওজন কমাতে জাদুর মতো কাজ করে।

মধ্যদুপুর: একটি ডিমের সাদা অংশ ও টক জাতীয় ফল।

দুপুর: ৫০-৭০ গ্রাম চালের ভাত। মাছ বা মুরগির ঝোল এক বাটি। এক বাটি সবজি ও শাক, শসার সালাদ, এক বাটি ডাল এবং ২৫০ গ্রাম টক দই।

বিকাল: দুধ ছাড়া চা বা কফি, মুড়ি বা বিস্কুট দুটি বা এক বাটি মুজিলি।

রাত: রাতের খাবার খাওয়ার আগে ১ গ্লাস পানি পান করে খেতে যাবেন। আটার রুটি দুটি, এক বাটি সবুজ তরকারি, এক বাটি ডাল, টকদই দিয়ে এক বাটি সালাদ। কেউ চাইলে ছোট বাটির এক বাটি ভাত খেতে পারেন।

তবে রাতে যত হালকা খাওয়া যায় ততই মঙ্গল। রাতে অল্প খেতে প্রথম প্রথম কষ্ট হবে। তবে অভ্যাস হয়ে গেলে আপনি নিজেই এর সুফল বুঝতে পারবেন।

শরবত, কোকা-কোলা, ফান্টা ইত্যাদি মৃদু পানীয়, সব রকম মিষ্টি, তেলে ভাজা খাবার, চর্বিযুক্ত মাংস, তৈলাক্ত মাছ, বাদাম, শুকনা ফল, ঘি, মাখন, সর ইত্যাদি পরিহার করা প্রয়োজন। শর্করা ও চর্বি জাতীয় খাদ্য ক্যালরির প্রধান উৎস। অধিক চর্বিযুক্ত কম ক্যালরির খাদ্যে স্থূল ব্যক্তির ওজন খুব দ্রুত কমে। ওজন হ্রাসকারী খাদ্যে ক্যালসিয়াম ও লোহার অভাব ঘটতে পারে।

এক্ষেত্রে ডিম ও কলিজা লোহার চাহিদা পূরণ করবে। চেষ্টা করবেন লবণবর্জিত খাদ্য গ্রহণ করতে। এক্ষেত্রে খাবার মেপে খাওয়ার প্রয়োজন নেই। মোটামুটি একটা হিসাব করলেই চলবে।

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।