পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে যাচ্ছে সরকারি কলেজ

42720_f1ডেস্ক রিপোর্ট : দুই বছরের সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে সরকারি কলেজ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। পাইলটিং হিসেবে প্রথম ধাপে রাজধানীর ৭টি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নেয়া হবে। এরপর ধাপে ধাপে বাকি কলেজগুলো যাবে ওই অঞ্চলের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুসারে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র বলছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত রাজধানীর সাতটি সরকারি কলেজ হচ্ছে- ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, বদরুন্নেসা কলেজ, মিরপুর বাঙলা কলেজ ও তিতুমীর কলেজ। গত সোমবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে উচ্চপর্যায়ে এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। এতে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, শিক্ষা সচিব মো. সোহরাব হোসাইন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ছাড়াও মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক কর্মকর্তারা জানান, সরকারি কলেজ বিকেন্দ্রীকরণ নিয়ে সোমবারের দীর্ঘ বৈঠকে কলেজ হস্তান্তরের নানা জটিলতার কথা জানান কর্মকর্তারা। প্রায় অমীমাংসিতভাবে শেষ হওয়া বৈঠকের শেষ দিকে শিক্ষামন্ত্রী জানান, সারাদেশে একসঙ্গে শুরু করতে না পারলেও অন্তত ঢাকার কয়েকটি কলেজ দিয়ে এটা শুরু করার দরকার। কারণ এই ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে।

মন্ত্রী বলেন, পাইলটিং হিসেবে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ৭টি কলেজ দিয়ে শুরু করতে চাই। এরপর আস্তে আস্তে বাকি কলেজগুলো কিভাবে হস্তান্তর করা যায় সেটি নিয়ে আলোচনা করা যাবে। এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি এ প্রস্তাবে সায় দেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নীরব থাকার কথা জানতে চান মন্ত্রী। এ সময় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বলেন, প্রধানমন্ত্রী চাইলে অবশ্যই করতে হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসনের বিরোধিতার কারণে সরকারি কলেজগুলো হস্তান্তর করা যাচ্ছিল না। অন্যদিকে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি চান কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে যাক। এসব কারণে দীর্ঘ দিন ধরে ঝুলে ছিল বিষয়টি। সোমবারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শিগগিরই এই সাতটি কলেজের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করা হবে। কলেজগুলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে দেয়ার ক্ষেত্রে ইতিবাচক-নেতিবাচক প্রভাবসহ সার্বিক দিক পর্যালোচনা করা হয়।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আ আ ম স আরেফীন সিদ্দিক বলেন, প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা এতোদিন ধরে কেন ঝুলে আছে সেটি আমরা জানতে চেয়েছি। এরই প্রেক্ষিতে ওই বৈঠক পর্যন্ত আপডেট প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা অনুসারে কলেজ নিতে আমরা প্রস্তুত। তবে ৭টি কলেজ আমাদের দেয়া হচ্ছে এ বিষয়ে আমাদের কিছু জানানো হয়নি। বিষয়টিতে আর কোনো বিলম্ব না হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। এ বিষয়ে ইউজিসি’র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলেন, সার সংক্ষেপ তৈরি করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠাবো। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে এটি বাস্তবায়ন হওয়া জরুরি বলেও জানান তিনি।

সম্প্রতি ইউজিসি’র এক প্রতিবেদনের এ জটিলতা আরো একধাপ বাড়িয়ে দেয়। সরকারি কলেজগুলোকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নিতে হলে শুরুতেই ৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ এবং সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন পরিবর্তন, নতুন করে ৮৩০ জনবল নিয়োগ, কলেজ পরিদর্শনের জন্য দক্ষ জনবল নিয়োগ, ভৌত অবকাঠামোসহ বেশকিছু প্রস্তাব করা হয়। এর আগে ২০১৪ সালে ৩১শে আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শিক্ষা মন্ত্রণালয় পরিদর্শনকালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন সরকারি কলেজগুলো অঞ্চলভেদে সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ছেড়ে দেয়ার অনুশাসন দিয়েছিলেন। সেশন জ্যাম, শিক্ষার মান নিম্নমুখী হওয়া ইত্যাদি সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্যই প্রধানমন্ত্রী ওই অনুশাসন দেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ইউজিসি’র সাবেক সদস্য অধ্যাপক মো. মোহাব্বত খানের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটি একাধিক বৈঠক করে। বেশির ভাগ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নের পক্ষে মত দেন।

Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।