১০/১৬ বছরের উচ্চতর গ্রেড বনাম টাইম-স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড

এস এম সাইদউল্লাহ:
আশির দশকে প্রথমবারের মতো টাইম-স্কেল চালু হয়। তারও পরে সিলেকশন গ্রেড চালু হয়। একই পদে পদোন্নতি না হওয়ার ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়ার জন্য এই টাইম-স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড চালু করা হয়। জাতীয় বেতন স্কেল, ২০০৯ পর্যন্ত টাইম-স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড চালু ছিল যা ৩০ জুন ২০১৫ পর্যন্ত কার্যকর ছিল। যা পরে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীর বেতনে সমতা বিধানের লক্ষ্যে ১৪ ডিসেম্বর ২০১৫ গেজেট জারির তারিখ পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও প্রজাতন্ত্রের সরকারি কর্মচারীদের বেতনে সমতা আসেনি। কোথাও কোথাও সিনিয়র জুনিয়রের চেয়ে কম বেতন পাচ্ছেন। ফলে তাদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে।

ড. ফরাসউদ্দিন পে কমিশন প্রজাতন্ত্রের সকল কর্মচারীর পদোন্নতি চালু করার শর্তে টাইম-স্কেল ও সিলেকশন বাতিল করে ১০/১৬ বছরের স্বয়ংক্রিয় উচ্চতর গ্রেড চালুর সুপারিশ করেছিলেন। কিন্তু বাস্তবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সকল দপ্তরের কর্মচারীদের জন্য একটি বা দুইটি কমন নিয়োগবিধি করে সকল কর্মচারীদের পদোন্নতি চালু করার উদ্যোগ নিলেও এখনও পর্যন্ত তা করা সম্ভব হয়নি। ১০/১৬ বছর কীভাবে গণনা করা হবে তা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। শেষ পর্যন্ত তা উচ্চ আদালতে গড়ায়। হাইকোর্ট বিভাগ হয়ে তা এখন চূড়ান্ত নিষ্পত্তির জন্য আপিল বিভাগে রয়েছে। ১০/১৬ বছরের উচ্চতর গ্রেড উচ্চ আদালতে বিচারাধীন থাকা অবস্থায়ও কোনো কোনো দপ্তরের কর্মচারীগণ ১০/১৬ বছরের উচ্চতর গ্রেড পেয়েছেন। তবে তা খুবই কমসংখ্যক।


তা ছাড়া জাতীয় বেতন স্কেল, ২০১৫ কার্যকর হওয়ার পর প্রায় চার বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। এতোদিনে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীগণ বিশেষ করে ১০ থেকে ২০ গ্রেডের কর্মচারীগণ টাইম-স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড সুবিধা বাতিল করে ১০/১৬ বছরের উচ্চতর গ্রেড চালু করার ফলে কীভাবে কত পরিমাণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তা বুঝতে পেরেছেন। ফলে তাঁরা টাইম-স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড পুনর্বহাল করার দাবিতে সোচ্চার হচ্ছেন। এমনকি নিজেরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে কর্মসূচি দেওয়ার কথা ভাবছেন। কেউ কেউ টাইম-স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড পুনর্বহাল করার জন্য উচ্চ আদালতে রীট করার প্রস্তুতিও নিচ্ছেন। হয়তোবা অল্প সময়ের মধ্যে এ জন্য রীট দায়ের করা হবে।

কারণ, সবাই এতোদিনে বুঝে গেছেন টাইম-স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড পুনর্বহাল ছাড়া কখনওই একই পদে সিনিয়র জুনিয়রের মধ্যকার যে বেতন বৈষম্য তৈরি হয়েছে তা নিরসন হবে না।

আমারও মনে হচ্ছে কর্মচারীদের ক্ষোভ, আন্দোলন কর্মসূচি বিবেচনা করে, সবাইকে পদোন্নতি দেওয়া সম্ভব নয় বিধায় অথবা আপিল বিভাগ হতে চূড়ান্ত নিষ্পত্তির মাধ্যমে টাইম-স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড পুনরায় ফিরে আসবে। সেক্ষেত্রে আমরা ১০ থেকে ২০ গ্রেডের সরকারি কর্মচারীগণ সবচেয়ে লাভবান হবো। হয়তো শেষ পর্যন্ত তা-ই হতে যাচ্ছে। সবমহল থেকে এমনই আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
এস এম সাইদউল্লাহ
সিনিয়ার যুগ্ন সাধারন সম্পাদক,
প্রধান শিক্ষক সমিতি

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।