হাইস্কুলের শিক্ষকরাই হবেন মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা

ডেস্ক: সরকারী হাইস্কুলের শিক্ষকরা উপজেলা সহকারী মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হওয়ার সুযোগ পাবেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে। এ লক্ষ্যে একটি নীতিমালা চূড়ান্ত হয়েছে। বর্তমানে তা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব চৌধুরী মুফাদ আহমদ যুগান্তরকে বলেন, শিক্ষা প্রশাসনে শিক্ষকদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা ও তাদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এই নীতিমালা অনুমোদন পেলে নতুন করে কোনো অশিক্ষক মাঠপর্যায়ের শিক্ষা প্রশাসনে যুক্ত হবেন না।

প্রস্তাবিত নীতিমালা অনুযায়ী সহকারী শিক্ষকরা তিন বছরের জন্য প্রশাসনে নিয়োগ পাবেন। তিন বছর পূর্ণ হলে তারা আবার স্কুলে শিক্ষকতায় ফিরে যাবেন। তবে তাদের মধ্য থেকেই অভিজ্ঞতা ও পদোন্নতির অবস্থা বিবেচনায় পর্যায়ক্রমে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, সহকারী জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার থেকে উচ্চপর্যায় পদোন্নতি দেয়া হবে। বর্তমানে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, সহকারী জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও শিক্ষা কর্মকর্তা পদে যথাক্রমে সহকারী প্রধান শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষক পদায়নের ব্যবস্থা কার্যকর আছে। এসব শিক্ষকের মধ্য থেকে সর্বোচ্চ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) উপপরিচালক নিয়োগের রেওয়াজ আছে। বর্তমানে মাউশিতে এ ধরনের দু’জন কর্মকর্তা নিযুক্ত আছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রস্তাবিত এ নীতিমালায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন মাউশি কর্মচারীদের মধ্য থেকে ৩০ শতাংশ পদ সংরক্ষিত রাখার প্রস্তাব থাকলেও তা বাদ দেয়া হয়েছে। ইতিপূর্বে মাউশি থেকে পাঠানো খসড়া নীতিমালায় উপজেলা সহকারী মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা পদে ২০ শতাংশ সরাসরি, ৫০ শতাংশ প্রেষণ বা সহকারী শিক্ষকদের মধ্য থেকে এবং ৩০ শতাংশ মাউশি কর্মচারীদের মধ্য থেকে পূরণের প্রস্তাব ছিল। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয় সরাসরি এবং পদোন্নতির দিকটি বাদ দিয়ে জনপ্রশাসনে প্রস্তাব পাঠায়। এরপর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ‘আদর্শ নিয়োগবিধি হয়নি’ মন্তব্য করে নীতিমালা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ফেরত পাঠায়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, একটি নিয়োগবিধিতে সরাসরি নিয়োগ অবশ্যই থাকবে। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয় তা না করে নিয়োগের নামে মূলত ‘বদলি-নীতিমালা’ করেছিল।

তাই সেটি ঠিক করতে ফেরত পাঠানো হয়েছে। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বিভিন্ন যুক্তি দিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় আগের নীতিমালাটিই আবার অনুমোদনের জন্য পাঠিয়েছে। নীতিমালায় তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারীদের পদোন্নতি দিয়ে সহকারী মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে পদায়নের প্রস্তাব করা হয়েছিল। এ লক্ষ্যে গত ২৩ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে একটি নির্দেশনা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও পাঠানো হয়েছে। তবে এই নির্দেশনাও শিক্ষা মন্ত্রণালয় আমলে নেয়নি বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে চৌধুরী মুফাদ আহমেদ বলেন, ‘আমরা মাউশি কর্মচারীদের বিষয়টি রাখিনি। কেননা, মাউশি কর্মচারীরা পদোন্নতি পেয়ে তাদের সেক্টরে সর্বোচ্চ সীমায় যাক। আমরা চাই কেবল শিক্ষকরাই মাঠ প্রশাসনে কাজ করুক।’ তিনি আরও বলেন, এই নীতিমালা কার্যকর হলে শিক্ষা কর্মকর্তার পদে আর সরাসরি কোনো নিয়োগ দেয়া হবে না। তবে বর্তমানে যারা কর্মরত আছেন তারা পদোন্নতিসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাবেন।

বর্তমানে ৪৪৭টি উপজেলার মধ্যে ১১৭টি উপজেলায় মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আছেন। অপরদিকে ৬০টি সহকারী মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার পদ শূন্য আছে। এসব কর্মকর্তা মাঠপর্যায়ে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনা মূল্যে বই বিতরণ ও উপ-বৃত্তির টাকা বিতরণ থেকে শুরু করে বিভিন্ন কাজ করে থাকেন। সরকার প্রতি উপজেলায় একটি করে সরকারি হাইস্কুল স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। আগের ৩৩৫টি হাইস্কুলের সঙ্গে ইতিমধ্যে আরও ১২৩টি বেসরকারি হাইস্কুলকে সরকারি ঘোষণা করা হয়েছে।

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।