স্কুল ভর্তিতে ধামাকা অফার, তবুও সাড়া নেই

Image

ঢাকা,২২ নভেম্বর: শিক্ষকদের মাসিক বেতন, প্রতিষ্ঠানের ভাড়া পরিশোধ, শিক্ষার্থী হারানোর শঙ্কাসহ করোনা মহামারিতে নাভিশ্বাস উঠেছে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর। বৈশ্বিক করোনাভাইরাসের প্রভাবে দেশের সব সরকারি-বেসরকারি স্কুল-কলেজ ও কিন্ডারগার্টেন এখনও বন্ধ রয়েছে। কবে খোলা হবে এবং খুললে পরিস্থিতি কি দাঁড়াবে তা নিয়ে দিনরাত বিশ্লেষণ করে যাচ্ছেন সংশ্লিষ্ঠ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। স্কুল বন্ধ থাকায় মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া।

দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা রাজধানীর ব্যক্তি মালিকানাধীন বেশিরভাগ কিন্ডারগার্টেন ইতোমধ্যেই নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছে। অনেক কিন্ডারগার্টেন স্কুল এখন আবাসিক বাসা ভাড়া দেয়া হয়েছে। আবার কেউ কেউ স্কুলের টেবিল চেয়ারসহ শিক্ষা উপকরণগুলো বিক্রি করে সাইনবোর্ড সরিয়ে দোকান দিয়েছেন। আবার নতুন করে কিছু কিছু কিন্ডারগার্টেন খোলার চেষ্টা চলছে। তারা ব্যানার ফ্যাস্টুন লাগিয়ে অভিভাবকদের দৃষ্টি আকর্ষণের করেছেন।

উত্তরার একটি স্কুল মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে ‘ধামাকা অফার’ দিয়েছে। একই এলাকার কয়েকটি স্কুল ঘুরে দেখা যায়, প্রায় স্কুলই ভর্তিতে ছাড় দিয়েছে। ক্ষেত্র বিশেষে সেই ছাড়া ৫০ থেকে ১০০ পারসেন্ট পর্যন্ত গিয়ে ঠেকেছে।

স্কুলের পরিচালক মনিরুজ্জামানের কাছে তাদের ‘ধামাকা অফার’ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যই ‘ধামাকা অফার’। করোনার কারণে স্কুল দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় বিপুল লোকসান গুনতে হচ্ছে আমাদের। ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠার ঠিক পরের বছরেই একটি বড় ধাক্কা খেয়েছি। করোনার কারণে এবছর স্কুল বন্ধ থাকলেও সীমিত সংখ্যক শিক্ষার্থী নিয়ে আমরা অনলাইনের মাধ্যমে ক্লাস চালু রেখেছি। বর্তমানে আমাদের এখানে ১২০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। তবে অনলাইন মাত্র ২০জন শিক্ষার্থী নিয়মিত ক্লাস করছে।

এদিকে করোনা সংকটে টিভি, অনলাইন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যবহার করে বেশ কিছু সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান তাদের শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। তবে তাদের শিক্ষার মান নিয়ে খোদ শিক্ষামন্ত্রীই প্রশ্ন তুলেছেন। পাশাপাশি অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অ্যাসাইনমেন্টের নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের সুযোগ নিচ্ছেন। শিক্ষার্থীদের চলতি বছরের টিউশন ফি’র বিষয়ে মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে পরিস্কার নির্দেশনা দিয়েছে। যাতে বলা হয়েছে, কোন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে অতিরিক্ত ফি আদায় করা যাবে না, শুধুমাত্র টিউশিন ফি-ই আদায় করবে বিদ্যালয়।

চলতি শিক্ষাবর্ষ প্রায় শেষ পর্যায়ে থাকলেও এখন পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খোলার কোনো পরিকল্পনা নেই শিক্ষামন্ত্রণালয়ের। তবে এরই মধ্যে আগাম শিক্ষার্থী ভর্তির প্রতিযোগিতায় নেমেছে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো।

এবিষয়ে উত্তরা পাবলিক লাইব্রেরির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক তারেকুজ্জামান খান বলেন, দীর্ঘদিন করোনার কারণে স্কুল বন্ধ। আয় কমে যাওয়ায় অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের নিয়ে বাড়ি চলে গেছেন। এতে স্কুলগুলো শিক্ষার্থী হারাবে এটাই স্বাভাবিক। সে কারণে নতুন শিক্ষার্থী টানতে ‘ধামাকা অফার’ মত শব্দ ব্যবহার করে স্কুলগুলো ভর্তির বিজ্ঞপ্তি দিচ্ছে। এমন অফার নির্ভর বিজ্ঞাপন দিয়ে কতখানি সুশিক্ষা পাওয়া যাবে তা নিয়ে সংশয় থাকলেও বৈশ্বিক সংকটের এই সময় সংশ্লিষ্ঠদের রুটি-রুজির সংস্থান করতে এবং মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণে এমনটা করা দোষণীয় কিছু নয়।

অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অভিভাবকরা চায় সুশিক্ষা। নিজের সন্তানরা মানুষের মত মানুষ হোক, বাবা-মা ও দেশের মুখ উজ্জ্বল করুক এ চাওয়া প্রায় সব অভিভাবকের। কিন্তু পরিস্থিতি এখন এমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কবে খোলা হবে তার ঠিক নাই। একদিকে স্কুল শিক্ষকরা বেতন চাইছে। অন্যদিকে সন্তানের লেখাপড়ায় চরম ধস নেমেছে। এখন স্কুলের পুরনো বেতন দিবে না নতুন ভর্তির কথা চিন্তা করবেন তা নিয়ে দো টানা অবস্থায় রয়েছেন স্বজনরা।

এবিষয়ে খোকন, ফারুক, সোহেল, ফেরদৌসী, বনানী মল্লিক, তাজুল ইসলাম, আশরাফসহ কয়েকজন অভিভাবক বলেন, করোনাকালে আয় রোজগার বন্ধ ছিল। অফিস খোলার পর বেতন নেমে গেছে অর্ধেকে। অথচ সন্তানের স্কুলের বেতন শতভাগ। আয় বুঝে ব্যয় করতে গেলে সন্তানের পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায়। তাই মন্ত্রণালয়ের কাছে টিউশন ফি কমানোর জোর দাবি জানান তিনি।

এদিকে গত ১৭ নভেম্বর রাতে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির হেয়ার রোডের সরকারি বাসভবনে জাতিসংঘ প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বলেন, করোনার কারণে মানসম্মত শিক্ষা অর্জন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সমস্ত প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও ২০২০ সালের এইচএসসি পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হয়নি। ২০২১ সালে অনুষ্ঠিতব্য এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের প্রাতিষ্ঠানিক ক্লাস না হওয়ায় সিলেবাস সমাপ্ত করা এখন একটা বড় চ্যালেঞ্জ। তা ছাড়া কারিগরি শিক্ষার ক্ষেত্রে ব্যবহারিক ক্লাসসমূহ অনলাইনে নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় আমাদের শিশুরা সাইকলজিক্যাল বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করার মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে সংসদ টেলিভিশনের মাধ্যমে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা হয়। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা পর্যায়ে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। তারপরও আমাদের প্রায় ১০ শতাংশ শিক্ষার্থী শিক্ষা কার্যক্রমের বাইরে রয়েছে। মোট শিক্ষার্থীর তুলনায় ১০ শতাংশ অনেক বড় একটি সংখ্যা। আমরা কোন একজন শিক্ষার্থীকে পেছনে রেখে আগাতে চাই না।

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।