ষষ্ঠ শ্রেণির পাঠ্যবই থেকে বাদ যাচ্ছে বিবর্তনবাদ !

Image

ডেস্ক | ২৬ জানুয়ারি, ২০২৩:

বিনা মূল্যের পাঠ্যবই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়ার পর থেকে বিতর্ক-সমালোচনা চলছেই। এসব বইয়ের ‘ভুল তথ্য’ ও ‘অসংগতি’ অতীতের যে কোনো সময়কে ছাড়িয়ে গেছে। বিতর্কের শীর্ষে রয়েছে ডারউইনের তত্ত্বের বিষয়টি, যেটি ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বইয়ে যুক্ত করা হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে ‘মানুষ বানর থেকে সৃষ্টি’।

শিশু শিক্ষার্থীর পাঠ্যপুস্তকে বিতর্কিত এ বিষয়টি যুক্ত করায় বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় চলছে বিতর্কের ঝড়। সংসদেও বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা চলছে। বিভিন্ন ইসলামি বক্তারা ওয়াজ মাহফিল, এমনকি জুমার খুতবায়ও বিয়ষটির প্রসঙ্গ তুলে পাঠ্যবই থেকে বিষয়টি বাদ দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

আরো পড়ুন:৬ষ্ঠ শ্রেণীর বইয়ে যৌনশিক্ষার সুড়সুড়ি

বিষয়টি আমলে নিয়ে বই থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে এই তত্ত্বটি। বাদ যাচ্ছে আরো বিতর্কিত বিষয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সমালোচনাগুলো যৌক্তিক। এই মতবাদটি মাধ্যমিক স্তরে দেওয়া কোনোভাবেই ঠিক হয়নি। এছাড়া নির্বাচনের বছরে এভাবে একটা বিতর্কিত বিষয় নিয়ে সমালোচনা হোক তা সরকার চায় না।

ডারউইনের তত্ত্বের বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই তত্ত্বটি ইসলাম ধর্মবিরোধী। শুধু তাই নয় এই মতবাদ হিন্দু ধর্মের পণ্ডিতরাও স্বীকার করেন না। এই মতবাদ ষষ্ঠ শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুশীলনী বইয়ের ১১৪ ও ১১৫ পৃষ্ঠায় ছবির মাধ্যমে দেখানো হয়েছে মানুষ আগে বানর ছিল, আর সেখান থেকেই কালের বিবর্তনে ধাপে ধাপে মানুষে রূপান্তরিত হয়েছে। বইয়ের ১১৪ নম্বর পৃষ্ঠায় শিরোনাম দেওয়া হয়েছে ‘খুঁজে দেখি মানুষের বিবর্তনের ইতিহাস’ ঠিক তার পরের পৃষ্ঠায় অর্থাৎ ১১৫ পৃষ্ঠায় ‘বিভিন্ন সময়ের মানুষ’ শিরোনাম দিয়ে চারটি ছবির মাধ্যমে দেখানো হয়েছে মানুষ আগে মূলত বানর ছিল। আর তার পরেই কয়েকটি ধাপে বানর থেকেই মানুষের আকৃতি রূপান্তরিত হয়েছে।

বিভিন্ন ভুল ত্রুটির বিষয়টি আমলে নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি গত মঙ্গলবার সম্মেলন করে পাঠ্যবইয়ে ভুল সংশোধন ও দায়ীদের ধরতে দুটি তদন্ত কমিটি করার ঘোষণা দিয়েছেন। আগামী সপ্তাহের শুরুতেই এই কমিটির সদস্যদের ব্যাপারে বিস্তারিত জানানো হবে বলে মন্ত্রী জানান। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখনই সব বই পায়নি শিক্ষার্থীরা। সব বই পাওয়া গেলে আরো ভুল বের হবে। কয়েক শ সংশোধনী দিতে হবে এনসিটিবিকে। এই ভুলের দায় কোনোভাবে এনসিটিবি ও সংশ্লিষ্ট লেখকরা এড়াতে পারেন না বলে সংশ্লিষ্টরা মত দিয়েছেন।

এদিকে সপ্তম শ্রেণির নতুন শিক্ষাক্রমে রচিত ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুশীলন’ বইয়ের ‘সরকার পরিচালনায় নারী’ শীর্ষক অধ্যায়ে তিন জন নারী নেত্বেত্বের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। এতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সংসদের স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরীর নাম ও ছবি রয়েছে। একই সঙ্গে রয়েছে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির নাম ও ছবি। আরো প্রখ্যাত নারী নেত্রী থাকার পরও তাদের নাম যুক্ত না করে শিক্ষামন্ত্রীর নাম যুক্ত করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সমালোচনাও চলছে। তবে মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ একজন জানান, ‘বইয়ে এভাবে শিক্ষামন্ত্রীর ছবি দেওয়া হয়েছে তা তিনি জানতেন না।’ বইয়ের এই অধ্যায়টি পরিমার্জনের চিন্তা রয়েছে।

এর আগে সপ্তম শ্রেণির বিজ্ঞান ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ বইয়ের একটি অংশে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক এডুকেশনাল সাইট থেকে নিয়ে হুবহু চুরি আর অনুবাদ করে ব্যবহার করার দায় স্বীকার করেন বইটির রচনা ও সম্পাদনার সঙ্গে যুক্ত থাকা প্রফেসর মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও প্রফেসর হাসিনা খান। এছাড়া মাধ্যমিক স্তরের তিনটি বইয়ে ৯টি ভুলের সংশোধন করে এনসিটিবি।

শুধু ডারউইনের মতবাদ নয়। অনেক বিতর্কিত বিষয় তুলে ধরা হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রমের বইয়ে। বিশেষ করে ধর্মীয় অনেক ইস্যুতে বিতর্কিত বিষয়গুলো তুলে ধরে ইসলামি স্কলাররা বলেছেন, প্রাচীন সভ্যতার নামে উলঙ্গ, অর্ধ উলঙ্গ মূর্তির ছবি তুলে দেওয়া হয়েছে। ট্রান্সজেন্ডার নামে পাশ্চাত্য সংস্কৃতির নতুন একটি চ্যাপ্টার যুক্ত করা হয়েছে, যার মাধ্যমে সমকামিতাকে উত্সাহিত করা হচ্ছে।

ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাবার নামেও ভুল করা হয়েছে। শেখ বাদ দিয়ে শুধু লেখা হয়েছে লুত্ফর রহমান। ষষ্ঠ শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে ‘ছেলেবেলার মুজিব’ শিরোনামে ৭ নম্বর পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে, বঙ্গবন্ধুর বাবা লুত্ফর রহমান ছিলেন সরকারি অফিসের কেরানি। অথচ তিনি ছিলেন আদালতের সেরেস্তাদার।

ষষ্ঠ শ্রেণির বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ বইয়ে ১১তম অধ্যায়ের ‘মানব শরীর’ শিরোনাম অংশে বয়ঃসন্ধিকালে কিশোর-কিশোরীর শরীরের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। অভিভাবকরা বলছেন, শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক কিংবা বাসাবাড়িতে অভিভাবকদের সামনেও এই বর্ণনা প্রকাশ করার মতো নয়। বইয়ের এসব তথ্য যারা যুক্ত করেছেন তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে।

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।