যশোর শিক্ষাবোর্ডের ৩৩ জনকে দুদকে তলব

Image

ডেস্ত,১৫ জানুয়ারী ২০২৩: যশোর শিক্ষাবোর্ড থেকে বিভিন্ন সময় সাত কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় শিক্ষাবোর্ডের ৩৩ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। দুদকের যশোর জেলা সমন্বিত কার্যালয়ে ডাকা হয়েছে তাদের।

আগামীকাল ১৫ জানুয়ারি থেকে এই ৩৩ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করবে দুদক। যাদের ডাকা হয়েছে তাদের মধ্যে অধিকাংশ অডিট ও হিসাব শাখার বর্তমান ও তৎকালীন কর্মকর্তা-কর্মচারী। ইতিমধ্যে বোর্ড কর্তৃপক্ষ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হাতে দুদকে হাজির হওয়ার চিঠি ধরিয়ে দিয়েছেন। এ নিয়ে শিক্ষাবোর্ডে রীতিমতো তোলপাড় শুরু হয়েছে।
বিভিন্ন সময় যশোর শিক্ষাবোর্ডের হিসাব শাখা থেকে ৭ কোটি টাকা লোপাট হয়। সর্বপ্রথম ২ কোটি ৫০ লাখ ৪৪ হাজার ১০ টাকা আত্মসাতের ঘটনা ধরা পড়ে। এ নিয়ে বোর্ডের অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি গঠিত হয়।

ওই কমিটির কর্মকর্তারা তখন জানিয়েছিলেন, ২০২১ সালের বিভিন্ন সময় শিক্ষাবোর্ডের ৩৮টি চেক জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়েছে ৭ কোটি টাকা। ঘটনা জানাজানি হওয়ার একপর্যায়ে বোর্ড কর্তৃপক্ষ যশোর দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) লিখিত অভিযোগ করেন।

তৎকালীন চেয়ারম্যান প্রফেসর মোল্লা আমীর হোসেনের পরামর্শে তৎকালীন সচিব এএমএইচ আলী আর রেজা এই অভিযোগ করেন। এরপর তদন্তে নেমে দুদক দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়ায় মামলা করে। দুদক যশোরের তৎকালীন সহকারী পরিচালক মাহফুজ ইকবাল বাদী হয়ে মামলাটি করেছিলেন। মামলায় পাঁচজনকে আসামি করা হয়। আসামিদের মধ্যে বোর্ডের তৎকালীন চেয়ারম্যান মোল্লা আমীর হোসেন, সচিব এএমএইচ আলী আর রেজা, হিসাব সহকারী আব্দুস সালাম অন্যতম।

আলোচিত এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ হন যশোর দুদকের তৎকালীন উপপরিচালক নাজমুচ্ছায়াদাত। গত বছরের ডিসেম্বরে তিনি বদলি হওয়ার পর নতুন উপপরিচালক হিসেবে মো. আল আমিন যোগদান করেন।

বর্তমানে তিনি মামলাটি তদন্ত করছেন। দুদক মামলাটিকে অত্যধিক গুরুত্ব দিয়ে ঘটনার সাথে আসলে কারা কীভাবে জড়িত তার শিকড়ের সন্ধানে নেমেছে। চেষ্টা করছে একেবারেই গভীরে যাওয়ার। এ কারণে দফায় দফায় সরেজমিন তদন্ত চলছে। বর্তমানে বোর্ডের ওইসময়ের হিসাব ও অডিট শাখায় কর্মরতদের জিজ্ঞাসাবাদের উদ্যোগ নিয়েছে দুদক। তারই অংশ হিসেবে ওই ৩৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাক্ষ্য নেওয়ার জন্য ডাকা হয়েছে দুদক কার্যালয়ে।

আরো পড়ুন:কারিগরি বোর্ড থেকে বৃত্তির টাকা নেয়ার নির্দেশ শিক্ষার্থীদের

তিন দফায় এই ৩৩ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। যশোর শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষ দুদক থেকে চিঠি পাওয়ার পর বৃহস্পতিবার তালিকাভুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিষয়টি অবগত করেছে। ইতিমধ্যে অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাক্ষ্যগ্রহণ সংক্রান্ত চিঠি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ১৫ জানুয়ারি থেকে ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত এই সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন পত্র প্রাপ্তরা।

এদিকে, হিসাব সহকারী আব্দুস সালাম লিখিতভাবে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের বিষয়টি স্বীকার করেন। এরপর ২০২১ সালের অক্টোবরে তিনি দু’দফায় ৩১ লাখ টাকা ফেরত দেন। গত বছরের ৭ ফেরুয়ারি জেলা প্রশাসন ও দুদক কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে হিসাব সহকারী সালামের তালাবদ্ধ কক্ষটি খোলা হয়। তখন আলমারিতে জাল চেক, সিল ও প্যাড পাওয়া যায়।

এরপর তদন্ত বোর্ডের সুপারিশের ভিত্তিতে আব্দুস সালামকে চূড়ান্তভাবে বরখাস্ত করা হয়। গত বছরের ২৫ জুন তদন্ত কমিটি রিপোর্ট জমা দেয়। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, হিসাব সহকারী আব্দুস সালামের যোগসাজসে সাত কোটি টাকা লোপাট করা হয়েছে।

অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ার পর হিসাব সহকারী আব্দুস সালামকে শিক্ষাবোর্ড থেকে চাকরিচ্যুত করা হয়। চেয়ারম্যান প্রফেসর ডক্টর আহসান হাবীব স্বাক্ষরিত এক আদেশে চাকরিচ্যুত করা হয় তাকে।

বরখাস্তের আদেশে উল্লেখ করা হয়, হিসাব সহকারী আব্দুস সালাম শিক্ষাবোর্ডের এসটিডি হিসাব নম্বর ২৩২৩২৪০০০০০২৪ খাতের ভ্যাট, ট্যাক্স বাবদ ইস্যুকৃত নয়টি চেকের মাধ্যমে ২ কোটি ৫০ লাখ ৪৪ হাজার ১০ টাকা দুর্নীতি, চুরি, আত্মসাৎ ও তহবিল তছরুপের মাধ্যমে আত্মসাৎ করার অভিযোগে প্রথমে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

এরপর তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন বোর্ড কর্তৃপক্ষ। সালাম ওই নোটিশের জবাব দেন, যা সন্তোষজনক মনে করেনি শিক্ষাবোর্ড। এ কারণে সরকারি কর্মচারী ও চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী সালামের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ তদন্তের জন্য তদন্ত বোর্ড গঠন করা হয়। তদন্ত বোর্ডের অনুসন্ধানে আব্দুস সালামের বিরুদ্ধে ২ কোটি ৫০ লাখ ৪৪ হাজার ১০ টাকা আত্মসাতের বিষয়টি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়। দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর তার বিরুদ্ধে গুরুদন্ড প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ।

এরপর তাকে দ্বিতীয় দফায় কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়। আব্দুস সালাম দ্বিতীয় দফার কারণ দর্শানোর জবাব না দিয়ে সময় প্রার্থনা করেন, যা বিধিসম্মত ছিল না। এসব কারণে তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয় বলে অফিস আদেশে উল্লেখ করেন বোর্ড কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে যশোর বোর্ডের সচিব প্রফেসর আব্দুল খালেক সরকার গতকাল রাতে গ্রামের কাগজকে বলেন, দুদক চিঠি দিয়েছে। সেই চিঠিতে কেবলমাত্র অর্থ আত্মসাতের মামলায় সাক্ষ্য দেয়ার কথা উল্লেখ করেছে। ১৫ জানুয়ারি থেকে পর্যায়ক্রমে ৩৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাক্ষ্য দিতে হবে।

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।