বিশ্ব মা দিবসে মায়ের ভাবনা

এস কে দাসঃ
আমার সন্তান যেন থাকে দুধে-ভাতে ,কবির এ ভাবনাটি প্রতিটি মায়েরই মনের কথা। মা শাশ্বত, চিরন্তন।সব আবদার-অভিযোগও যেন মা ছাড়া কাউকে বলা যায় না। পৃথিবীর সবচেয়ে শ্রদ্ধা এবং অকৃত্রিম ভালোবাসার স¤পদ এ মাকে সম্মান জানাতেই বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব মা দিবস। আমাদের দেশে প্রতি বছর মে মাসের দ্বিতীয় রোববার মা দিবস পালিত হলেও বিভিন্ন দেশে বছরের বিভিন্ন সময়ে পালন করা হয় মা দিবস।
মা কত কষ্ট, কত না যন্ত্রণা সহ্য করে দশ মাস দশ দিন গর্ভে ধারণ করে তার সন্তানকে জন্ম দেন। প্রসব বেদনার তীব্র কষ্ট মা ছাড়া অন্য কারও পক্ষে উপলব্ধি করা সম্ভব নয়।মা শুধু সন্তানের জন্মই দেন না, সন্তানের জন্য নিঃস্বার্থভাবে যে কোনো কিছু ত্যাগ করতে কেবল মাই পারেন। কত ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করে মা তার সন্তানকে নিজের শরীরের রক্তবিন্দু দিয়ে তিল তিল করে বড় করে তোলেন। শুধু তাই নয়, সন্তান জন্মের পর খেয়ে না খেয়ে নিজের বুকের দুধ পান করিয়ে বড় করে তোলেন।
মা ডাকের মধ্যে কী যে পরিতৃপ্তির সুখ, অনাবিল আনন্দ তা অন্য কিছুতেই খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়।নিজের যত কষ্টই হোক, সব লাঞ্ছনা-গঞ্জনা সহ্য করে, নিজের জীবনের সব চাওয়া-পাওয়া বিসর্জন দিয়ে মা তার সন্তানকে বড় করে তোলেন। মা কখনও নিজের সুখের চিন্তা করেন না। সন্তানের সুখই মায়ের বড় সুখ, সন্তান সুখে থাকলেই মা খুশি। মায়ের ভালোবাসায় কোনো স্বার্থ নেই, কোনো প্রাপ্তির প্রত্যাশা নেই। মা তার সন্তানকে বুকভরা ভালোবাসা, প্রাণঢালা আদর বিলিয়ে দিয়ে ধন্য হন। মায়ের মমতার আঁচল সন্তানের সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাল্টিমোর ও ওহাইয়োর মাঝামাঝিতে ওয়েবস্টার জংশন। এ এলাকার বাসিন্দা অ্যান মেরি রিভস জার্ভিস সারাটা জীবন ব্যয় করেছেন অনাথ-আতুরের সেবায়। এই মানুষটি মারা গেলেন ১৯০৫ সালে। নীরবে-নিভৃতে যে মা আর্তের সেবায় ছুটে বেড়িয়েছেন এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে, তাঁকে সম্মান দিতে চাইলেন মেয়ে আনা জার্ভিস। অ্যান মেরি রিভস জার্ভিসের মতো দেশজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা সব মাকে স্বীকৃতি দিতে আনা জার্ভিস প্রচার চালাতে শুরু করলেন। সাত বছরের চেষ্টায় মা দিবস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেল।
মা দিবসের মূল উদ্দেশ্য হলো মাকে যথাযথ সম্মান দেওয়া, যে মা জন্ম দিয়েছেন, লালন-পালন করেছেন, তাঁকে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা। মায়ের প্রতি সন্তানের যে ভালোবাসা, তা প্রকাশের সুযোগ হয়ে ওঠে না সিংহভাগ মানুষেরই। মে মাসের দ্বিতীয় রোববার আন্তর্জাতিক মা দিবস সন্তানদের এ সুযোগ করে দেয়। পশ্চিমা বিশ্বে দিবসটির উৎপত্তি; উদ্যাপনের ঘটাও সেখানে বেশি। বিশ্বের বহু দেশে কেক কেটে মা দিবস উদ্যাপন করা হয়। উপহার হিসেবে সন্তানেরা মাকে দেয় কার্ড বা চকলেট। তবে মা দিবসের প্রবক্তা আনা জার্ভিস এই বাণিজ্যিকীকরণের বিরোধী ছিলেন। তিনি আক্ষেপ করে একবার বলেছিলেন,মাকে কার্ড দিয়ে শুভেচ্ছা জানানোর অর্থ হলো, মা তোমার জন্য এত কিছু করেছেন, তাঁকে দুই কলম লেখার সময় হয় না তোমার? আর যে চকলেট উপহার হিসেবেদাও, তার বেশির ভাগই চলে যায় তোমার পেটে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও মা দিবস উদ্যাপিত হচ্ছে কয়েক বছর ধরে। কিন্তু বাঙালির মাতৃভক্তির ইতিহাস বহু পুরোনো। দুর্যোগ মাথায় নিয়ে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সাঁতরে নদী পার হয়েছিলেন মাকে দেখবেন বলে।

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।