প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা প্রতি ক্ষেত্রে লাঞ্চনা ও বঞ্জনার শিকার?

প্রাথমিক শিক্ষা জাতি গঠনের prysikkha_24445_169861মূল ভিত্তি। আর প্রাথমিক শিক্ষকরা হলেন শিক্ষিত নাগরিকের জনক। অথচ তারাই সরকারিভাবে অবহেলিত ও সুবিধাবঞ্চিত। দেশের মানুষ তাদের প্রায় সব ধরনের সমস্যায় প্রাথমিক শিক্ষকদের পরামর্শ গ্রহণ করে। যেমন- বিয়ে-সাদী, কলহ-বিবাদ মেটানো ইত্যাদি। অথচ শিক্ষকদের বেঁচে থাকার মতো বেতন স্কেল, প্রথম শ্রেণীর মর্যাদা দিতে সরকারের অনীহা দেখা যায়।
প্রাথমিক শিক্ষকদের টাইমস্কেল, ইবিক্রস, বদলি জেলা সদরে অনুষ্ঠিত হয়। কমিটির দোহাই দিয়ে টাইমস্কেল ১ থেকে ২ বছর পর দেয়া হয়। এরপর শুরু হয় বকেয়া প্রাপ্তির বিড়ম্বনা। হিসাবরক্ষণ অফিস থেকে বেতন নির্ধারণ করে বকেয়া বিলসহ প্রেরণ করতে হয় মহাপরিচালকের দফতরে। তাছাড়া বকেয়া বিল উত্তোলন করতে উপজেলার অফিস সহকারীদের কাছে ধন্যা দিতে হয়, না হলে তার বিল পাশ হয় না। একজন ২য় শ্রেণির কর্মকর্তা ৩য় শ্রেণির কর্মচারীর পাশে বছরের পর বছর ঘুরলেও ফল হয় শূন্য।
সরকারি অন্য সব চাকরিজীবীর বরাদ্দ নিতে এত সময়ক্ষেপণ হয় না। তাদের বরাদ্দ নেয়ার জন্য বিলের কপি সংযুক্ত করতে হয় না। অনেক ক্ষেত্রে অফিসে ঘুরতে ঘুরতে অর্থবছর শেষ হয়ে যায়। অনেক ক্ষেত্রে মহাপরিচালকের দফতর থেকে একাধিকবার আপত্তি দিলে বিলের নাজুক অবস্থা সৃষ্টি হয়। শিক্ষকদের গুনতে হয় চক্রবৃদ্ধি হারে পকেটের টাকা। অনেক শিক্ষক বছর ঘুরতে ঘুরতে বকেয়া টাকার আশা ছেড়ে দেন। শিক্ষকদের বকেয়া টাকা প্রাপ্তি- এ এক দুঃসহ যন্ত্রণাদায়ক অভিজ্ঞতা। অর্থ, সংস্থাপন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এক বছর আগে প্রধানমন্ত্রী প্রদত্ত আদেশের পরও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের আদেশের অপেক্ষায় প্রধান শিক্ষকদের দ্বিতীয় শ্রেণীর মর্যাদায় ৬ হাজার ৪০০ টাকার ও সহকারী শিক্ষকদের ১ গ্রেড ওপরে হতাশাব্যঞ্জক বেতন স্কেল প্রাপ্তির আশা করা যেন অন্যায়। এ ব্যাপারে যেন কারও কোনো দায় নেই। উচ্চ ধাপ প্রাপ্তিতে টাকা লাগে ইত্যাদি কৃত্রিম আশ্বাসে প্রধান শিক্ষকদের কাছ থেকে ২০০-২৫০ টাকা ও সহকারী শিক্ষকদের কাছ থেকে ১০০-২০০ টাকা চাঁদা তোলা হয়।সারা দেশে জাতীয়করন প্রধান শিক্ষকরা ২০০৮ সালের জুলাই মাসে প্রধান শিক্ষক হিসাবে সরকারী অনুমোদন পেলেও টাকার বিনিময়ে উপজেলা শিক্ষা অফিস এবং হিসাব রক্ষক অফিস প্রধান শিক্ষক হিসাবে টাইম স্কেল দেবার পরিকল্পনা নিয়েছে। যা সম্পুর্ন আইনত অবৈধ। ভবিষ্যতে ঐ সব শিক্ষকরা ক্ষতির সম্মুখিন হবার সম্ভবনা আছে।
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ প্রাথমিক শিক্ষকদের যৌথ কোনো প্রাপ্তি পেতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কপি না পৌঁছাতেই অনেকে টাকা উত্তোলন করে খরচ করে ফেলেন। শিক্ষকদের প্রথম শ্রেণীর মর্যাদা ও বেতন স্কেল না দিয়ে আলাদা বেতন স্কেলের স্বপ্ন দেখিয়ে শুভঙ্করের ফাঁকির পথ খুঁজছে একটি মহল, যাতে প্রাথমিক শিক্ষকদের প্রাপ্য বিলম্ব করা যায়। এতে প্রাথমিক শিক্ষকদের পদোন্নতির দাবির অবসান হবে। শতভাগ পদোন্নতির মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা শিক্ষাবান্ধব হবে, মেধাবীরা পদোন্নতির আশায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা পেশায় আকৃষ্ট হবে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও সরকারের অন্যদের মতো ঞযব ইধহমষধফবংয ঝবৎারপবং (জবপৎবধঃরড়হ অষষড়ধিহপব) জঁষবং ১৯৭৯ মোতাবেক প্রত্যেকে ৩ বছর পর এক মাসের সমপরিমাণ মূল বেতনসহ ১৫ দিনের শ্রান্তি ও চিত্তবিনোদন ছুটি ও ভাতা প্রাপ্য হবেন। বিলম্বে দেয়ার কৌশল হিসেবে এ বছর গ্রীষ্মকালীন ছুটি প্রাথমিক শিক্ষকদের তালিকায় ১৫ দিন রাখা হয়নি, যাতে প্রাথমিক শিক্ষকরা রোজার মাসে ছুটি কাটিয়ে ৩ বছরের পরিবর্তে ৪ বছরে পায়। প্রাথমিক শিক্ষকদের প্রাপ্য না দেয়া বা বিলম্বে দেয়ার অশুভ তৎপরতা আর কতদিন চলবে? প্রাথমিক শিক্ষকদের তালিকাভুক্ত ছুটি ৭৫ দিন। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তালিকাভুক্ত ছুটি ২৩ দিন। এই ২৩ দিন ৭৫ দিনের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। জাতীয় দিবস ৬ দিন সরকারি অফিস বন্ধ থাকে। অথচ প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো যথাযথভাবে খোলা রেখে জাতীয় দিবস পালন করে।এক্ষেত্রে হিসাবান্তে দেখা যায়, প্রাথমিক শিক্ষকরা অন্যান্য সরকারি বিভাগের চেয়ে ৬ দিন ছুটি কম ভোগ করেন। এছাড়া মা দিবস, উঠান বৈঠক, খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, মিলাদ, ৭ কমিটির সভাসহ অনেক আনুষঙ্গিক কাজ ছুটির দিনে করা হয়। অথচ ভাগ্যের নির্মম পরিহাস- প্রাথমিক শিক্ষকদের অবকাশ বিভাগের আওতাভুক্ত করে সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।পিআরএলে অর্ধ বেতন দিয়ে বর্তমান বেতন স্কেলে প্রায় ২ থেকে ৩ লাখ টাকা পেনশনবঞ্চিত করা হয়।
সরকারি চাকরিজীবী হিসেবে প্রাথমিক শিক্ষকরা অন্যদের মতো সুবিধা ভোগ করবেন। এটাই স্বাভাবিক। অথচ একটি মহল তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে যাচ্ছে। প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনগুলো বিভিন্ন অজুহাতে দ্বিধাবিভক্ত। অনেকটা ব্যক্তিস্বার্থে বিভোর। তাদের অধিকারগুলো সুরক্ষা ও আদায় করার লক্ষ্যে সব সংগঠনের নেতা ও শিক্ষকের ঐকান্তিক আগ্রহে যাত্রা শুরু করেছে প্রাথমিক প্রধান শিক্ষক সমিতি। প্রাথমিক প্রধান শিক্ষক সমিতির খুলনা বিভাগের আহবায়ক এবং দামুড়হুদা উপজেলার সাধারন সম্পাদক স্বরুপ দাসের কাছে জানতে চাইলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে শিক্ষকদের অধিকার নিয়ে জনমত সৃষ্টির পাশাপাশি আন্দোলন ও আইনের মাধ্যমে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। সরকারের সংশ্লিষ্টরা শিক্ষকদের অধিকার আদায়ে সহযোগিতা করবেন। শিক্ষকদের ঐক্যবদ্ধ উদ্যোগের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হোক তাদের অধিকার- এটাই প্রত্যাশা। লেখক, স্বরুপদাস : আহ্বায়ক, বাসপ্রাবিপ্রশিস,খুলনা বিভাগ ,০১৮১১৮৯৮০৬১

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।