প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকদের পদোন্নতি: `পঁয়তাল্লিশের কাঁটা’

পদোন্নতি

নিজস্ব প্রতিবেদক,৯ নভেম্বর ২০২১ঃ
বেতন গ্রেড নিয়ে অসন্তোষের পর এবার বিভাগীয় পদোন্নতির বিষয়ে তৈরি খসড়া বিধিমালা নিয়ে ক্ষুব্ধ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকরা। অথচ তাদের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতেই হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের গেজেটেড অফিসার ও নন-গেজেটেড কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালা ২০২১।

শিক্ষক নেতাদের ভাষ্য- চূড়ান্ত হতে যাওয়া নতুন বিধিতে সহকারী শিক্ষকদের পদোন্নতির পথ রুদ্ধ করা হয়েছে। এটি কার্যকর হলে পদোন্নতি চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হবে। পাশাপাশি প্রধান শিক্ষকদের পদোন্নতিতেও ৪৫ বছরের বয়সসীমা পদোন্নতি না দেওয়ার অপকৌশল বলে মনে করছেন তারা।

জানা গেছে, স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন সহকারী শিক্ষক পদোন্নতি পেয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (ডিপিইও) পর্যন্ত হতে পারতেন; কিন্তু কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগবিধি ১৯৮৫ সেই পথ রুদ্ধ করে দেয়। পরবর্তী সময়ে পিএসসির নিয়োগবিধি ১৯৯৪ জারি হলে সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার (এটিইও) পদে সহকারী শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষকরা বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে ৪৫ বছর বয়স পর্যন্ত আবেদন করতে পারতেন। ২০০৩ সালে সরকারি গেজেটেও সেই পদে বিভাগীয় প্রার্থী বলতে প্রাথমিকের প্রধান ও সহকারী শিক্ষকদের কথা বলা ছিল এবং উপজেলা শিক্ষা অফিসার পদে বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে তাদের সঙ্গে সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বোঝানো হয়েছে। সর্বশেষ নিয়োগ পর্যন্ত এভাবেই চলছে। তবে খসড়া নিয়োগবিধি ২০২১ অনুযায়ী প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকরা আর বিভাগীয় প্রার্থীর সুযোগ পাবেন না।

আরো পড়ুনঃ প্রধান শিক্ষকদের টাইমস্কেল। মহাপরিচালক যা বললেন
নিয়োগবিধিতে আরও বলা আছে- সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারের পদে নিয়োগে ৮০ শতাংশ পদ বিভাগীয় প্রার্থীদের জন্য

সংরক্ষিত থাকবে এবং ২০ শতাংশ পদ উন্মুক্ত প্রার্থীদের মধ্য থেকে পূরণ করা হবে। বিভাগীয় প্রার্থী বলতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের বোঝাবে। তাদেরও আবার প্রধান শিক্ষক হিসেবে ন্যূনতম তিন বছর চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। তবে বিভাগীয় প্রার্থীদের জন্য সংরক্ষিত পদে যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে পদগুলো পূরণ হবে উন্মুক্ত প্রার্থীদের মাধ্যমে। সরাসরি নিয়োগে উন্মুক্ত প্রার্থীদের বয়স অনূর্ধ্ব ৩০ বছর। আর বিভাগীয় প্রার্থীদের ক্ষেত্রে ৪৫ বছর পর্যন্ত শিথিলযোগ্য।

আরো পড়ুনঃ প্রাথমিকে উন্নীত স্কেলে বেতন নিশ্চিত করতে ডিপিই’র নির্দেশনা

বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রিয় সিনিয়ার যুগ্ন সাধারন সম্পাদক স্বরুপ দাস বলেন, ‘১৯৯৪ সালে একটি আইনের মাধ্যমে প্রধান শিক্ষকদের সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার পদে পদোন্নতির পথ রুদ্ধ করে চালু হয়েছিল সরাসরি নিয়োগ পদ্ধতি। এর আগে সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার পদে সিনিয়র প্রধান শিক্ষকরা সরাসরিই পদোন্নতি পেতেন। এখন প্রধান শিক্ষকদের পদোন্নতির পথও কৌশলে রুদ্ধ করে সরাসরি এটিইও নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।’

এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সমিতির সভাপতি রিয়াজ পারভেজ বলেন, ‘এটা (বিধিমালায় যুক্ত শর্ত) প্রধান শিক্ষকদের পদোন্নতি না দেওয়ার অপকৌশল। শিক্ষকদের দাবি, ওপরের শতভাগ পদ পূরণ করতে হবে প্রধান শিক্ষকদের পদোন্নতির মাধ্যমে। নিয়োগের ক্ষেত্রে বয়সের কোনো সীমাবদ্ধতা রাখা যাবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রধান শিক্ষকরা চান অনূর্ধ্ব-৪৫ বছর বয়সের কোনো বাধা না থাকুক। সেই সঙ্গে প্রাথমিকের যেসব পদে সরাসরি নিয়োগ চালু রয়েছে, সেগুলোতে বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে আবেদনের সুযোগ দিতে হবে। সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার পদে পরীক্ষার মাধ্যমে সরাসরি নিয়োগ নয়; বরং শতভাগ পদোন্নতি দেওয়ার দাবি আমাদের।’ রিয়াজ পারভেজ জানান, সহকারী উপজেলা, থানা শিক্ষা অফিসার, উপজেলা শিক্ষা অফিসারসহ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি (নেপ), প্রাইমারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (পিটিআই), উপজেলা রিসোর্স সেন্টার (ইউআরসি), থানা রিসোর্স সেন্টারসহ বিভিন্ন দপ্তরের সংশ্নিষ্ট ঊর্ধ্বতন সব পদেই পদোন্নতির দাবি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের।

এ প্রসঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মুনসুরুল আলম শিক্ষাবার্তাকে বলেন, ‘শিক্ষকদের নিয়োগ বিধিমালা এর আগেও কয়েকবার সংশোধন করা হয়েছে। প্রধান শিক্ষক পদটি আগে থেকেই ব্লক ছিল। আমরা এবার এটাকে ব্লক পদ করিনি। একসময় তো বিভাগীয় প্রার্থিতার সুযোগই তাদের ছিল না। বিভাগীয় প্রার্থী হতে বয়স একসময় ৪০ বছর ছিল, ১৯৯৪ সালে তা ৪৫ বছর করা হয়। তার পরও বয়স বাড়ানোর বিষয়ে আমরা চেষ্টা করেছি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এতে সায় দেয়নি। তারা বলেছে- অন্যান্য সরকারি দপ্তরে বয়স এমনটাই নির্ধারিত।’

কয়েক প্রধান শিক্ষক জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের গেজেটেড অফিসার ও নন-গেজেটেড কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালা ১৯৮৫-এর অধীনেও প্রধান শিক্ষকদের পদোন্নতির বিধান ছিল। প্রধান শিক্ষকরা সহকারী উপজেলা বা থানা শিক্ষা অফিসার, উপজেলা শিক্ষা অফিসার পদে পদোন্নতি পেতেন; কিন্তু ১৯৯৪ সালের ১৯ ডিসেম্বর বিধিমালাটি সংশোধনের মাধ্যমে প্রধান শিক্ষকদের পদোন্নতি রহিত করা হয়। তাই প্রধান শিক্ষকদের দাবি- প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের গেজেটেড অফিসার ও নন-গেজেটেড কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালা ১৯৮৫ (সংশোধনী ২০২১)-এ বিভাগীয় পদোন্নতি পুনর্বহাল করতে হবে। কারণ এই বিধিমালা সংশোধন না করলে প্রধান শিক্ষকদের আর পদোন্নতি পাওয়া সম্ভব হবে না।

জানা গেছে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য পৃথক দুটি নিয়োগ বিধিমালা তৈরির কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে। এরই মধ্যে তা প্রশাসনিক উন্নয়ন-সংক্রান্ত সচিব কমিটিতে অনুমোদন হয়েছে। এতে প্রধান শিক্ষক থেকে সহকারী থানা বা উপজেলা শিক্ষা অফিসার (এটিইও) পদে পদোন্নতির সুযোগ রাখা হয়েছে। তবে শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে, এটিইও পদে পদোন্নতির জন্য পরীক্ষায় বসতে প্রধান শিক্ষকের বয়স হবে সর্বোচ্চ ৪৫ বছর। এ ছাড়া কমপক্ষে তিন বছরের প্রধান শিক্ষক পদের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। প্রস্তাবিত এই ‘সমন্বিত নিয়োগ বিধিমালা’ নিয়ে ক্ষুব্ধ সারাদেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। তারা বলছেন- এ বিধিমালায় প্রধান শিক্ষকদের পদোন্নতির সুযোগ রাখা হলেও শর্তের বেড়াজালে পদোন্নতি আটকে দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষকরা আরও জানান, প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি পেতেই বয়স হয়ে যায় ৪৭-৪৮ বছর। আরও তিন বছরের অভিজ্ঞতা প্রয়োজন হলে বয়স হবে কমপক্ষে ৫০-৫১ বছর। এতে প্রধান শিক্ষকদের আর কর্মকর্তা হওয়ার সুযোগ থাকবে না। প্রধান শিক্ষকদের একই পদে চাকরি করে অবসরে যেতে হবে। সেক্ষেত্রে ব্লক পোস্টে পরিণত হবে প্রধান শিক্ষক পদটি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এ নিয়ে শিক্ষকরা সোচ্চার হয়ে উঠেছেন। শিক্ষকদের পক্ষ থেকে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে লিখিত আবেদনও করা হয়েছে।

আপনি কি পুত্র/কন্যা সন্তান চান তাহলে জেনে নিন কি করবেন?

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।