চিকিৎসা শিক্ষা : বছরে ৯ মেডিকেল-ডেন্টাল কলেজ স্থাপন

Dental-studentদেশে প্রতি বছর গড়ে  ৯টি করে সরকারি বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজ স্থাপন করা হচ্ছে। বর্তমানে দেশে ১০০টি মেডিকেল (সরকারি ৩০, বেসরকারি ৬৪ ও আমর্ড ফোর্সেস ৬টি) ও ৩৩টি ডেন্টাল (৯টি সরকারি ও ২৪টি বেসরকারি) রয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, মাত্র বছর ছয়েক আগে ২০১০ সালে সারাদেশে সরকারি বেসরকারি পর্যায়ে মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজের সংখ্যা ছিল মাত্র ৭৮টি। এর মধ্যে ১৮টি সরকারি মেডিকেল ও একটি কলেজসহ মোট পাঁচটি ডেন্টাল ইউনিট এবং বেসরকারি ৪৪টি মেডিকেল কলেজ ও ১২টি ডেন্টাল কলেজ ছিল। গত ছয় বছরে মোট ৫৫টি নতুন সরকারি বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজ স্থাপিত হয়।

মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজের সংখ্যা বৃদ্ধির সংখ্যার সঙ্গে আসন সংখ্যাও প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। ২০১০ সালে সর্বসাকুল্যে ৬ হাজার ৮৯৪টি থাকলেও বর্তমানে আসন সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ১১ হাজার ৫১১টিতে দাঁড়িয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক চিকিৎসা শিক্ষা বিশেষজ্ঞবলেন, চিকিৎসা শিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণের নামে নতুন নতুন সরকারি বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজ স্থাপিত হলেও অধিকাংশই মেডিকেল কলেজ স্থাপনের যে নীতিমালা রয়েছে (প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, পর্যাপ্তসংখ্যক শিক্ষক, শিক্ষা উপকরণ ও অন্যান্য নির্দিষ্ট সংখ্যক জনবল থাকা অত্যাবশ্যক) তা অনুসরণ করে স্থাপিত হয়নি।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদফতর, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি), ঢাকাসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন ফ্যাকাল্টির বিভিন্ন সময়ে পরিদর্শন প্রতিবেদনেও বিভিন্ন মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজের দুরবস্থা ফুটে ওঠে।

গত ২৯ জুন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় আগামী তিন মাসের মধ্যে কলেজের নামে নিজস্ব জমি নিবন্ধন না করলে ধানমন্ডির বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ এবং পপুলার মেডিকেল কলেজের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি কার্যক্রম স্থগিত করে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

অভিযোগ রয়েছে মন্ত্রী, সচিব, সাংসদ, রাজনীতিবিদ, চিকিৎসক নেতা ও ব্যবসায়ীদের চাপের মুখে নতুন নতুন মেডিকেল কলেজ স্থাপনের অনুমতি প্রদান করা হয়েছে। এসব মেডিকেল কলেজ স্থাপনের নেপথ্যে রয়েছে বাণিজ্যিক দৃষ্টিভঙ্গি।

চিকিৎসা শিক্ষা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, অ্যানাটমি, ফিজিওলজি, বায়োকেমিস্ট্রি, মাইক্রোবায়োলজি, ফরেনসিক মেডিসিন, ফার্মাকোলজি ও প্যাথলজিকে মৌলিক বিষয় বলা হয়। এসব বিষয়ে শিক্ষক স্বল্পতার কারণে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট এমবিবিএস কোর্সের শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের একজন দায়িত্বশীল ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা  বলেন, সঠিক পরিসংখ্যান বলা না গেলেও মৃত্যু, অবসর ও চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগজনিত কারণে শতকরা ৫০ ভাগের বেশি মেডিকেল কলেজে মৌলিক বিষয়ের শিক্ষকের সংকট রয়েছে। বেসরকারি মেডিকেল কলেজে শিক্ষকের সংকট আরো করুণ।

গতকাল রোববার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় ছয় বছর পর মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে ভর্তি পরীক্ষা পৃথকভাবে গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়। শুধু তাই নয়, ভর্তি পরীক্ষায় ১০০ নম্বর ও জিপিএ বৃদ্ধি করা হয়।

বিএমডিসির রেজিস্ট্রর ডা. জেড এইচ বসুনিয়া বলেন, চিকিৎসা শিক্ষার সার্বিক মানোন্নয়নের লক্ষ্যে সুষ্ঠুভাবে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের পাশাপাশি সরকারি ও বেসরকারি উভয় মেডিকেল কলেজে মন্ত্রণালয় ও বিএমডিসিসহ সংশ্লিষ্ট সবাই মনিটরিং ও সুপারভিশন জোরদার করেছে।

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।