‘ক্যাম্পাসে যেমন ইচ্ছা তেমন করব বলে সব জায়গায় পেটানো হয়’

Image

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর প্রতিবাদ করায় বেধড়ক মারধরের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন এক ছাত্র।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি জসীম উদ্দীন হলের সামনে রোববার সন্ধ্যায় এই ঘটনা ঘটে।

আরো পড়ুন: ভাই বলায় শিক্ষকের উপর ক্ষেপে উঠলো সরকারি কর্মকর্তা!

সেই ছাত্রকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসা শেষে তিনি হলে অবস্থান করছেন।

ওই ছাত্রের নাম জুবায়ের ইবনে হুমায়ুন। তিনি অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী, যিনি থাকেন স্যার এ. এফ রহমান হলে।

জুবায়েরের অভিযোগ

জুবায়ের জানান, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী এবং শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের ছাত্র তবারকের নেতৃত্বে তাকে পেটানো হয়। এতে শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের হেদায়েতুন নুর, জিয়া হলের বিপ্লব হাসান জয়, মোহাম্মদ শোভন, সাকিব, সিফরাত সাহিল, মাস্টারদা সূর্যসেন হলের লাবিব, কবি জসীমউদ্দিন হলের সাদ ও রহমান জিয়া এবং হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের অর্ণব খান জড়িত ছিলেন। তারা সবাই ২০২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী।

ঢাবি ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরাসহ আরও কয়েকজন মিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একটা গ্যাং পরিচালনা করে, যার নাম ‘প্রলয়’। গ্যাংয়ের সদস্যদের অনেকেই ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ঢাবির ছাত্র জুবায়ের বলেন, ‘আজকে (রোববার) আমি সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সামনে আমার অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের বন্ধুদের সাথে ইফতার করছিলাম। ইফতার শেষে যখন আমরা কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে বসার জন্য যাচ্ছিলাম, এ সময় একটা প্রাইভেট কার খুব বেপরোয়া গতিতে চালিয়ে আমাদের অতিক্রম করছিল। বৃষ্টি পড়ায় রাস্তা পিচ্ছিল হয়েছে। সে জন্য রাস্তার সব কাদা রাস্তার পাশে থাকায় সবার ওপর ছিটকে পড়ছে। আমাদের গায়েও পড়েছে।

‘এরপর তাদের থামিয়ে আমরা জিজ্ঞাসা করি আপনারা এ রকম উগ্র আচরণ করছেন কেন? পরে তাদের সাথে কথা বলে জানতে পারি, তারা সবাই আমাদের ব্যাচমেট এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এরপর আমরা তাদের এভাবে গাড়ি না চালাতে বলে ছেড়ে দিছি।’

এ শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমি যখন তাদের সাথে কথা বলছি, তাদের মুখ থেকে একটা স্মেল আসছিল, যেটাতে আমরা প্রায় নিশ্চিত হয়েছি তারা ড্রাংক ছিল। গাড়িতে থাকাদের পরে আমরা চিহ্নিত করতে পেরেছি। তারা হলেন জিয়া হলের সাকিব, জসিম উদ্দীন হলের দুর্জয় আর রহমান জিয়া, জগন্নাথ হলের প্রত্যয় আর জহুরুল হক হলের আব্দুল হাই।’

তিনি আরও বলেন, “তাদের সাথে কথা শেষ করে আমরা জসিম উদ্দীন হলে এসে ফ্রেশ হচ্ছিলাম। এরপর আমার মোবাইলে একটা অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন আসে। পরে আমরা জানতে পারি এই নম্বরটা জিয়া হলের সাহিলের নম্বর। ফোনে আমরা কই আছি সেটা জানতে চাওয়া হয়। আমি আমার লোকেশন বলি। এ সময় আমরা তিনজন ছিলাম। হঠাৎ দেখি, ২০/৩০ জন ছেলে স্টাম্প, বাঁশ, রড হাতে নিয়ে আমাদের দিকে তেড়ে আসছে। তারপরও আমরা দাঁড়িয়ে ছিলাম। তারা এসে ‘ক্যাম্পাসে আমরা যেমন ইচ্ছা তেমন করব। তোরা কে ঠেকাবার?’ এই কথা বলে আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। পাঁচ থেকে সাত মিনিট ধরে আমাকে হাত, পা, মাথাসহ শরীরের সব জায়গায় পেটানো হয়। পরে কয়েকজন বড় ভাই আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান।”

অভিযুক্তদের ভাষ্য

এ ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত তবারক হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘আমি বরং তাদেরকে পেটানোর হাত থেকে রক্ষা করছি।’

ঘটনার ভিন্ন বর্ণনা দিয়ে তবারক বলেন, ‘জুবায়েরের সাথে প্রাইভেট কারে থাকা আমাদের যেসব বন্ধুদের মধ্যে ঝামেলা হয়েছে, সেটা আমাদের কানে আসে। যেহেতু এটা আমাদের ব্যাচের ঘটনা, তাই জুবায়ের আমাদের বন্ধুদের গাড়ি কেন থামিয়েছে সেটা জিজ্ঞস করতে আমাদের একজন সাহিলের ফোন থেকে জুবায়েরকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করে, তারা কই আছে। এরপর আমরা তাদের বলা লোকেশন জসিম উদ্দীন হলের সামনে যাই। এ সময় তাদের সাথে আমাদের কথা বলার একপর্যায়ে জুবায়ের আমাদের বন্ধু হেদায়েত নুরকে থাপ্পড় দেয়। পরে সাথে থাকা বাকি বন্ধুরা ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে মারধর করে। আমিসহ আরও কয়েকজন তাদেরকে থামিয়ে হাসপাতালে পাঠাই।’

আরেক অভিযুক্ত সাহিল বলেন, ‘আমার মোবাইল থেকে ফোন দেয়া হয়েছে, এটা ঠিক। আমার কয়েকজন বন্ধু এই ফোন দিয়েছে। আমি দেইনি। আর আমি মারধরেও ছিলাম না।’

যা বললেন হলের প্রাধ্যক্ষ ও ঢাবির প্রক্টর

ঘটনার বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘ঘটনাটি শুনেছি। আমার হলের যেসব শিক্ষার্থী এই ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত, তাদের কাছ থেকে বক্তব্য নিয়েছি। শুনে বুঝেছি, এটার সাথে অনেক হলের শিক্ষার্থী জড়িত এবং আরও ডিটেইলসে এই সম্পর্কে জানা দরকার। তাই আমি তিন সদস্যের একটা কমিটি গঠন করেছি। তারা আমাকে আমি এই ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ রিপোর্ট দেবে।’

ঢাবির প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, ‘ঘটনাটি আমি শুনেছি। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী লিখিত অভিযোগ দিলে আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।’

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।