ডেস্ক: সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা নির্ধারণে গঠিত স্থায়ী পে-কমিশনের চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা হচ্ছে ১১ ডিসেম্বর। আর বিজয় দিবসের আগেই কর্মকর্তাদের সুখবর দিতে চায় সরকার। এ জন্য নিরন্তর কাজ করছেন কমিশন ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। নতুন বেতন কাঠামোয় মূল বেতন সর্বোচ্চ ৭২ হাজার এবং সর্বনিম্ন ১০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হতে পারে। এর সঙ্গে বিদ্যমান বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ভাতা, যাতায়াত, আপ্যায়ন, উৎসব, শান্তি বিনোদন, টেলিফোন, গাড়ি, মোবাইল ফোনসহ অন্যান্য আর্থিক সুবিধা যৌক্তিক করার প্রস্তাব থাকছে পে-কমিশনের প্রতিবেদনে। এ ছাড়া স্বাস্থ্যবীমা, জীবনবীমা ও দুর্ঘটনাজনিত অক্ষমতা বীমার সুপারিশ করতে যাচ্ছে কমিশন।
সূত্র জানায়, শতকরা হিসাবে বর্তমান কার্যকর থাকা মূল বেতনের (বেসিক) চেয়ে গড়ে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত বেতন বৃদ্ধির সুপারিশ করতে যাচ্ছে কমিশন। প্রতিবেদন তৈরির কাজ শেষ। এখন শুধু ঘষামাজার কাজ চলছে বলে জানা গেছে। বেতন-ভাতা বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রশাসনিক সংস্কারের বিষয়গুলোও যুক্ত করা হচ্ছে কমিশনের প্রতিবেদনে। অর্থাৎ দেশের প্রশাসনিক ব্যবস্থার পুনর্গঠন বা সংস্কার কীভাবে করা যেতে পারে, সে বিষয়ে সুপারিশ করবে কমিশন। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, কমিশনের প্রতিবেদনে নতুন বেতন স্কেলে ১৭টি গ্রেড নির্ধারণ করা হচ্ছে; যা বর্তমান কাঠামোয় রয়েছে ২০টি। নতুন বেতন কাঠামো পুরোপুরি বাস্তবায়নে বর্তমানের চেয়ে সরকারের অতিরিক্ত প্রয়োজন হবে ১৭ থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকা। এ টাকা জাতীয় বাজেটের মাধ্যমে সংস্থান করা হবে। রাজনৈতিক অঙ্গীকার বাস্তবায়নের পাশাপাশি জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে খুব দ্রুত নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন করতে চায় সরকার। সর্বশেষ ২০০৯ সালে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর বেতন স্কেল ঘোষণা করা হয়েছিল। সূত্রমতে, সরকারি চাকরিজীবীদের আবাসিক সংকট মোকাবিলায় সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার প্রস্তাবও থাকছে কমিশনের সুপারিশে। বর্তমানে সরকারি চাকরিজীবীরা ১ লাখ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত গৃহনির্মাণ ঋণ নিতে পারেন। তাদের জন্য কম সুদে অগ্রিম ঋণ দেওয়ার সুপারিশ করতে যাচ্ছে কমিশন। এ ক্ষেত্রে প্রত্যেকের বেতন গ্রেড অনুযায়ী নির্ধারিত অঙ্কের ঋণ দেওয়ার সুপারিশ করা হবে। পরে মাসিক হারে প্রত্যেকের বেতন থেকে তা সমন্বয় করা হবে। নিয়ম অনুযায়ী পাঁচ বছর পর পর সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য নতুন বেতন নির্ধারণ করার কথা। এখন যে বেতন কাঠামো কার্যকর রয়েছে তা ২০০৯ সালে করা, যাতে আগের চেয়ে সর্বোচ্চ ৭৪ শতাংশ পর্যন্ত বেতন বৃদ্ধি করা হয়। বর্তমান কাঠামোয় সর্বোচ্চ বেতন স্কেল ৪০ হাজার এবং সর্বনিম্ন ৪ হাজার ১০০ টাকা নির্ধারিত রয়েছে। ১ জুলাই, ২০১৩ থেকে সরকারি চাকরিজীবীরা ২০ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা পাচ্ছেন। নতুন বেতন কাঠামো কার্যকর হলে এ ভাতা সমন্বয় হয়ে যাবে।গত বছরের নভেম্বরে এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনকে চেয়ারম্যান করে পে কমিশন গঠন করা হয়। ছয় মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হলেও পরে কমিশনের মেয়াদ বাড়ানো হয়। ওই মেয়াদ শেষ হবে আগামী ১৫ ডিসেম্বর। বর্তমানে দেশে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা ১৩ লাখ। এর মধ্যে চাকরিতে সক্রিয় আছেন প্রায় ১১ লাখ।