৬৩ বছর বয়সে পিইসি পরীক্ষা!

পরণে সাদা শাড়ি। মাথা সাদার ওপর হাল্কা প্রিন্টের ওড়না দিয়ে ঢাকা। হাতে প্রবেশপত্র নিয়ে ৬৩ বছরের বাছিরণ নেছা বসলেন প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষায়। তিনিই এখন পর্যন্ত পিইসি পরীক্ষার সবচেয়ে বয়স্ক পরীক্ষার্থী।
রোববার মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার হোগলবাড়িয়া মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে অন্যসব পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে বসে পরীক্ষা দিয়েছেন বাছিরণ। চামড়ায় ভাঁজ পড়া। সাদা চুল। দৃষ্টিশক্তিও অনেকটা ক্ষিণ বাছিরণের। পরীক্ষা কেন্দ্রে তাকে নিয়ে আসেন তার নাতি আর ভাবি।
লেখা-পড়ায় আকাশ ছোঁয়া মনোবলের অধিকারী বাছিরণ। তার এমন দৃষ্টান্ত দেশের বয়স্ক শিক্ষা কার্যক্রমকে উৎসাহিত করবে বলে মনে করছেন জেলার শিক্ষাবিদরা।
মেহেরপুর জেলা শহর থেকে ৪২ কিলোমিটার দূর মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার মটমুড়া ইউনিয়নের হোগলবাড়িয়া গ্রামের মাঠপাড়ায় বাছিরণ নেছার বাড়ি। তিনি ওই গ্রামের পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী।
রোববার পরীক্ষা শেষে বাছিরণ জানান, বৃদ্ধ বয়স দেখে প্রথমে তাকে স্কুলে ভর্তি নিতে চায়নি স্কুল কর্তৃপক্ষ। পরের বছর ফের ভর্তির জন্য আসলে ভর্তি করে নেয়।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক হেলাল উদ্দিন জানান, ইচ্ছার কাছে লজ্জা নেই, শেখার কোনো বয়স নেই। এটা চোখে আঙুল দিয়ে বাছিরণ দেখিয়ে দিলেন। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা তাকে নানী বান্ধবী বলে ডাকে। তিনি পড়াশুনায় মনোযোগী। অল্পতেই সবকিছু বুঝতে পারেন।
তিনি বলেন, সব সময় শুদ্ধ উচ্চারণে পড়া ও কথা বলেন বাছিরণ। ঝড়-বৃষ্টিতে অনেক শিক্ষার্থী অনেকদিন স্কুল কামাই করলেও স্কুলে বাছিরণের উপস্থিতি শতভাগ।
হেলাল উদ্দিন বলেন, স্কুলের সহপাঠীদের সঙ্গে বাছিরণ খুনসুটি, গলাছেড়ে পড়াশুনা করেন। টিফিনের সময় সহপাঠীদের সঙ্গে এই বয়সে খেলেন কানামাছি। ছুটির ঘণ্টা পড়লেই ক্লাসের সহপাঠীদের সঙ্গে শিশুদের মতো আচরণ করতে করতেই বাড়ি ফিরেছেন তিনি।
ইংরেজি পরীক্ষায় হোগলবাড়িয়া মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৪৩৯ জন পরীক্ষার্থী সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নেয়। এই কেন্দ্রে বাছিরণের রোল নম্বর ছিল ৫৯৪১।
মেহেরপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার তৌফিক-উজ্জামান বলেন, বাছিরণ নেছা পিএসসি পরীক্ষা দেবেন এটা উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে জানাতে ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রথমে ভয় পান। মনে করেছিলেন- বিষয়টাতে বিরক্ত হবো আমরা। বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গে তার পরীক্ষা নেয়ার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল।

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।