শনিবারে স্কুল খোলার নির্দেশ অমান্য করলে এমপিও বাতিল হতে পারে

Image

হঠাৎ গজিয়ে ওঠা চাঁদপুরভিত্তিক একটি মাধ্যমিক সহকারি শিক্ষক সমিতির নেতারা শিক্ষকদের মধ্যে রাতারাতি জনপ্রিয় হওয়ার খায়েশ মেটাতে গিয়ে এমপিও হারাতে বসছেন। শিক্ষক ও প্রশিক্ষকের মধ্যে ফারাকও বোঝেন না তারা। পাঠদান ও জ্ঞান সৃষ্টি এবং বিতরণের মধ্যকার ফারাকও বোঝেন না, তবু ফেসবুকে আর প্রেসরিলিজ প্রকাশ করিয়ে শিক্ষক নেতা হতে চেয়েছিলেন।

জানা যায়, শিখন ঘাটতি ঠেকাতে সাপ্তাহিক ছুটির একদিন শনিবার মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনার সরকারি নির্দেশ না মেনে আগামী শনিবার (১১ মে) সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত সারা দেশের মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মবিরতি পালন করার আহ্বান জানিয়েছিলেন তারা। হঠাৎ ‘বাংলাদেশ মাধ্যমিক সহকারী শিক্ষক সমিতির’ ব্যানারে এই কর্মবিরতির পর আরও কঠোর কর্মসূচিরও ঘোষণা দেওয়া হয়েছিলো। প্রয়োজনে প্রতি শনিবারই কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছিলো সংগঠনটি।

আরো পড়ুন: ৯৬ হাজার ৭৩৬ শিক্ষক নিয়োগের আবেদন শেষ হচ্ছে আজ

তবে হঠাৎ গজিয়ে ওঠা নামধারী শিক্ষকদের ভুইফোঁড় সংগঠনের এই কর্মসূচিতে সায় নেই রাজধানীসহ সারাদেশের কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের। বরং প্রতিষ্ঠান প্রধান ও পেশাদার শিক্ষক সংগঠনের নেতারা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেছেন, এমন উদ্ভট সংগঠনের নাম তারা কোনোদিন শোনেননি। আর স্বঘোষিত নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে তারা বাইচান্স শিক্ষক। শিক্ষকতা পেশা ও চাকরিবিধি সম্পর্কে তারা পুরাই চরবাসী।

শিক্ষা প্রশাসন বলছে, সরকারি আদেশ না মানলে এই ইস্যুতে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আন্দোলন করা শিক্ষক এবং প্রতিষ্ঠান প্রধানদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে এমপিও স্থগিত বা বাতিল করা হবে। শিক্ষকরা প্রতিষ্ঠান ফাঁকি দিয়ে আন্দোলনে নামলে প্রতিষ্ঠান প্রধানেরও এমপিও স্থগিত বা বাতিল হতে পারে।

আগামী শনিবার সারা দেশের মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এই কর্মবিরতি কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানান বাংলাদেশ মাধ্যমিক সহকারী শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক মো. নূরে আলম বিপ্লব। সংগঠনের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ ইয়াছিন কতিপয় ভুইফোঁড় টিভি ও পত্রিকায় প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠান। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন শিক্ষাবিদ ও শিক্ষাখাতের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের হুমকি দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে।

বাংলাদেশ মাধ্যমিক সহকারী শিক্ষক সমিতির প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সরকারের এমন একতরফা সিদ্ধান্তে (শনিবার খোলা রেখে শ্রেণি পাঠদান) শিক্ষার্থী-শিক্ষক-অভিভাবকরা সংক্ষুব্ধ। নির্ধারিত ও সাপ্তাহিক ছুটিতে শিক্ষার্থীরা পাঠ সংশ্লিষ্ট ‘বাড়ির কাজ’ সম্পন্ন করতে পারেন। অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুসরণ করে শিক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের চিকিৎসা নেওয়া, আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়ানো, আচার-অনুষ্ঠান এবং বিশ্রামসহ বিভিন্ন পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ নিয়ে থাকেন। এক দিনের ছুটিতে যাবতীয় কাজ ও সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়।

তবে অভিভাবকরা বলছেন ভিন্ন কথা। শনিবার স্কুল খোলার রাখার পক্ষে মত দিয়ে অভিভাবকরা বলেন, শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে শিক্ষকরা শনিবার কর্মবিরতি পালন করতে চাচ্ছেন। এটা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণার শামিল। কারণ করোনা মহামারি থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। অথচ শিক্ষকরা নিজেদের স্বার্থে আন্দোলন করতে চাচ্ছে, যা নীতিমালা বিরোধী। যেসব শিক্ষক আন্দোলন করবেন তাদের এমপিও বাতিল করা প্রয়োজন।

মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ অভিভাবক ফোরামের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘করোনার কারণে এমনিতেই শিখন ঘাটতিতে পড়েছে শিক্ষার্থীরা।
এছাড়া শীত, গরম ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ছুটি দিতে হয়। নতুন কারিকুলামে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া ঠিকমতো সম্পন্ন করতে হলে বেশি সময় প্রয়োজন। সরকার সে চিন্তা-ভাবনা করেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শনিবার খোলা রেখে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা জরুরি। প্রয়োজনে যেকোনও দিন হতে পারে, শুক্রবার ক্লাস করে হলেও সিলেবাস শেষ করতে হবে। আবহাওয়া ভালো থাকলে শনিবারে ক্লাস করতে শিক্ষকদের সমস্যা কোথায়?’

রাজধানীর উদয়ন উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ জোহুরা বেগম বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি কমাতে আমরা হিমশিম খাচ্ছি। এই অবস্থায় শনিবার ক্লাস চললে শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে। তাই আমরা শনিবার কর্মবিরতিতে যাবো না। শিক্ষকতা শুধুই চাকরি নয়, আমাদের একটি দায়িত্ব রয়েছে শিক্ষার্থীদের কল্যাণে।’

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা শিক্ষাবিদ রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ‘আমার তো মনে হয় শিক্ষকদেরই এটি বোঝা উচিত। শিখন ঘাটতির দায় তো তাদের ওপরই বর্তায়। অভিযোগ ওঠে শিক্ষকরা ঠিকমতো পড়ান না, কোচিং করান। শিখন ঘাটতির দায়টা শিক্ষকদের ওপরই আসে। তাদের নিজেদেরই উচিত শনিবারে ক্লাস করে এই দায় থেকে মুক্তি পাওয়া। এটি তাদের দায়মুক্তির একটি সুযোগ। ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ায় শিক্ষকরা, মন্ত্রণালয় তো পড়ায় না, তাই দায়মুক্তির জন্য শিক্ষকদের উচিত এ বিষয়টি মেনে নেওয়া। কারণ সাপ্তাহিক ছুটি তো এককালীন বাতিল হচ্ছে না।’

বাতিল হতে পারে এমপিও

সরাসরি সরকারের আদেশের বিরুদ্ধে অযৌক্তিকভাবে আন্দোলন করলে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের এমপিও বাতিল হতে পারে বলে শিক্ষা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের ক্ষতির মধ্যে রেখে শিক্ষকরা যদি আন্দোলন করেন তাহলে মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেবে। সেক্ষেত্রে শিক্ষকদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেবে বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলো। নীতিমালা অনুযায়ী এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের এমপিও স্থগিত করা হবে। প্রতিষ্ঠান প্রধানের দায়িত্ব অবহেলার কারণে এমপিও বাতিল হতে পারে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেছেন, ‘শনিবারের সাপ্তাহিক ছুটি বাতিল স্থায়ী নয়। শিখন ঘাটতি পূরণে আপাতত যে কয়দিন শনিবার ক্লাস করানো দরকার সে কয়দিন ক্লাস করানো হবে। ।’

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।