৪র্থ গণবিজ্ঞপ্তির ফল বাতিলের দাবি : সুপারিশে ‘হ-য-ব-র-ল

Image

ডেস্ক,১৫ মার্চ ২০২৩: সিরাজগঞ্জের ছেলে মো. আনিছুর রহমান। বাবা বেঁচে নেই, অসহায় মাকে নিয়েই তার বসবাস। স্বপ্ন ছিল চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিজ এলাকার কোনো একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুপারিশ পাবেন। এরপর বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্ত হয়ে বৃদ্ধ মায়ের সেবা করবেন। সেই স্বপ্ন পূরণের দৌঁড়ে অনেকটা এগিয়েও গিয়েছিলেন আনিছ। ১৪তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন ৬০ নম্বর পেয়ে ।

দুঃখজনক ও তিক্ত হলেও সত্য যে, আনিছের সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। বেসরকারি স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসায় ৬৮ হাজার ৩৯০টি শূন্য পদ থাকলেও একটি প্রতিষ্ঠানেও চাকরির সুপারিশ পাননি তিনি। অথচ আনিছের চেয়ে কম নম্বর পেয়ে নামি-দামি প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুপারিশ পেয়েছেন অনেকে।

আরো পড়ুন: যোগ্য প্রার্থী না থাকায় ৩৫ হাজার শিক্ষক পদ খালি

মঙ্গলবার দুপুরে এনটিআরসিএ’র কার্যালয়ের সামনে আনিছুর জানান, মেধাতালিকায় এগিয়ে থাকলেও তাকে সুপারিশ করা হয়নি। অথচ আবেদনের সময় তিনি যে প্রতিষ্ঠানগুলো ‘চয়েস লিস্ট’-এ রেখেছিলেন সেই প্রতিষ্ঠানগুলোতে তার চেয়ে কম নম্বরধারী এবং মেধাক্রমে পিছিয়ে থাকা প্রার্থীদের সুপারিশ করা হয়েছে। চাকরি না পেলে আত্মহত্যার মত পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও জানিয়েছেন তিনি।

শুধু আনিছুর নয়; মেধাক্রমে এগিয়ে থেকেও চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে একটি প্রতিষ্ঠানেও সুপারিশপ্রাপ্ত হননি বেশ কিছু প্রার্থী। এই অবস্থায় বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন চাকরিপ্রার্থীরা। অবিলম্বে চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তির প্রাথমিক সুপারিশের ফল বাতিল করে নতুন করে সুপারিশের দাবি জানিয়েছেন তারা। এর আগে গত রোববার রাতে চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তির প্রাথমিক সুপারিশের ফল প্রকাশ করা হয়। এর পর থেকেই প্রার্থীরা ফল নিয়ে নানা অভিযোগ করেছেন।

যদিও বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) বলছে, প্রার্থীদের আবেদন এবং মেধাক্রমের ভিত্তিতে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে। এটি সম্পূর্ণ অটোমেটিক পদ্ধতিতে করা হয়ে থাকে। তবুও যদি কোনো ভুল হয়ে থাকে, তাহলে তারা তা সংশোধন করবেন। এজন্য প্রার্থীদের তথ্য-প্রমাণসহ লিখিত আবেদন জমা দিতে বলেছেন তারা।

প্রার্থীদের এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এনটিআরসিএ’র সচিব মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, প্রার্থীরা আবেদন করেছেন অনলাইনে। তাদের আবেদন যাচাই-বাছাই করা হয়েছে কম্পিউটারের মাধ্যমে। এটি অটোমেটিক প্রক্রিয়া। কিছু ভুল হতেই পারে।

ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তাদের কারো মেধাক্রম ২ হাজারের মধ্যে। নিজের বাড়ির কাছের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আবেদন করেছেন। যার মেধাক্রম ২ হাজারের মধ্যে তিনি সুপারিশ পাননি। অথচ তিনি যে প্রতিষ্ঠানে আবেদন করেছেন, সেখানে একই বিষয়ে ১৫ হাজার মেধাক্রমের প্রার্থীকে সুপারিশ করা হয়েছে।

১৬তম শিক্ষক নিবন্ধনে আইসিটি (প্রভাষক) বিষয়ে জাতীয় মেধাক্রমে পঞ্চম অবস্থানে রয়েছেন মো. আল মেহেদী। তিনি বলেন, আমার চয়েজ অর্ডারের ১ম এবং ২য় কলেজে কম্পিউটার সায়েন্সের ১৮৯ ও ৭০ মেধাক্রমকে সুপারিশ করা হয়েছে। অথচ আমি মেধাক্রমে পঞ্চম অবস্থানে থেকেও সুপারিশ পাইনি। আমি এই রেজাল্ট মানি না। চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তির প্রাথমিক সুপারিশ বাতিল করে নতুন করে সুপারিশ করতে হবে।

অন্যান্য প্রার্থীদের অভিযোগ, চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তির ৭ নম্বর পয়েন্ট অনুযায়ী আবেদনকৃতদের নিয়োগ সুপারিশ করা হয়নি। সাত নম্বর পয়েন্টে বলা হয়েছে, ‘প্রার্থীর আবেদনে বর্ণিত Choice-এর প্রেক্ষিতে প্রার্থীর মেধাক্রম ও পছন্দক্রম অনুসারে ফলাফল Process করা হবে।’’ অথচ মেধাক্রমে যারা এগিয়ে রয়েছেন তাদের সুপারিশ না করে পিছিয়ে থাকাদের সুপারিশ করা হয়েছে। এই অবস্থায় সুপারিশ বাতিল করে নতুন করে সুপারিশের দাবি জানিয়েছেন তারা।

১০ম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ মো. আবুল হাশেম জানান, ‘আমার মেধাক্রম ২১ হাজার ৪০১। আমি যে ৪০টি প্রতিষ্ঠান চয়েস লিস্টে রেখেছিলাম সেখানে ৩৫ হাজার, ২৬ হাজার মেধাক্রমে থাকা নিবন্ধনধারীদের সুপারিশ করা হয়েছে। অথচ আমাকে একটি প্রতিষ্ঠানেও নিয়োগের সুপারিশ করা হয়নি। এই ফলে নিশ্চয়ই কোনো সমস্যা রয়েছে। এই ফল বাতিল চাই।’

মো. আতাউর রহমান নামে আরেক চাকরিপ্রার্থী জানান, আমি নিবন্ধন পরীক্ষায় ৬০ নম্বর পেয়েছি। আমার মেধাক্রম ১০ হাজার ৩৪১। আবেদনের সময় আমার প্রথম পছন্দক্রমে ছিল বানছারচর দাখিল মাদ্রাসা। এই মাদ্রাসায় যাকে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে তার প্রাপ্ত নম্বর ৫৫। মেধাক্রম ১৬ হাজার ৩৩৪। এটি কীভাবে সম্ভব হলো?

তিনি আরও বলেন, আমি যে ৪০টি প্রতিষ্ঠান পছন্দক্রমে রেখেছিলাম, তার মধ্যে আরেকটি প্রতিষ্ঠান হলো- তাপুরচর নাপুরিয়া দাখিল মাদ্রাসা। ওই প্রতিষ্ঠানে যিনি নিয়োগের সুপারিশ পেয়েছেন তার প্রাপ্ত নম্বর ৪৩। অথচ একই বিষয়ে আমি ৬০ নম্বর পেয়েও আমাকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়নি। বিষয়টি মেনে নেওয়ার মতো না। অবিলম্বে মেধারভিত্তিতে নিয়োগের দাবি জানান তিনি।

যারা মেধাতালিকায় এগিয়ে থেকেও নিয়োগের সুপারিশ পাননি তাদের লিখিত আবেদনের কথা জানিয়ে এনটিআরসিএ’র সচিব মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, যাদের এমন সমস্যা হয়েছে তারা সকল তথ্য প্রমাণসহ আমাদের কাছে লিখিত আবেদন দিক। আমরা তাদের আবেদনগুলো পর্যালোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।
সুত্র: দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।