সেরা কলেজকে বিবেচনায় নিয়ে ১৯৯ কলেজ জাতীয়করণে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন- শিক্ষামন্ত্রী

govt.অভিজিৎ ভট্টাচার্য : সারা দেশের ১৯৯টি বেসরকারি কলেজকে জাতীয়করণে অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত বৃহস্পতিবার রাতে তিনি দুটি তালিকায় অনুমোদন দেন। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পাওয়া একটি তালিকায় রয়েছে ১৫৪টি এবং আরেকটি তালিকায় রয়েছে ৪৫টি কলেজ। ১৯৯টি কলেজকে সরকারি করার বিষয়টি অনুমোদন দিলেও মাধ্যমিক স্কুলের বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত দেননি তিনি। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন সংবলিত কলেজগুলোর তালিকা কঠোর গোপনীয়তায় গত বৃহস্পতিবারই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পৌঁছেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শীর্ষপর্যায়ের একটি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা গতকাল শুক্রবার  বলেন, কলেজগুলোকে জাতীয়করণের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) এ এস মাহমুদকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। গত মে মাসের শেষের দিকে কলেজ সংক্রান্ত জাতীয়করণ কমিটি যেসব কলেজকে বাছাই করে সরকারি করার জন্য পাঠিয়েছিল প্রধানমন্ত্রী সেসব কলেজকেই অনুমোদন দিয়েছেন। তবে দেশের আর কতগুলো বেসরকারি কলেজকে সরকারি করার অনুমতি দেয়া হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে ওই কর্মকর্তা বলেন, সময়ই এই প্রশ্নের উত্তর দেবে।

তবে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পাওয়া কলেজগুলোর সংখ্যা জানালেও সেগুলোর নাম জানাতে রাজি হননি ওই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, এখন মন্ত্রণালয় থেকে বিভিন্ন প্রক্রিয়া অনুসরণ করে কলেজগুলোকে সরকারি করার ঘোষণা দেয়া হবে। এই ১৯৯টি কলেজ এখন থেকে আর কোনো নিয়োগ কার্যক্রম চালাতে পারবে না।

উল্লেখ্য, বেসরকারি স্কুল এবং কলেজ সরকারি করার জন্য দুটি কমিটি গঠন করেছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। স্কুল পর্যায়ের সরকারি করা সংক্রান্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক) চৌধুরী মুফাদ আহমেদ এবং কলেজ পর্যায়ের জন্য অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) এ এস মাহমুদ।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্মকর্তাদের মতে, দেশের ইতিহাসে এই প্রথম একসঙ্গে এতগুলো কলেজকে সরকারি করা হচ্ছে। এর আগে বঙ্গবন্ধু ১৯৭৩ সালে ৩৭ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারি করেছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কয়েক বছর আগে ২৬ হাজার বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করেন। আর এবার একসঙ্গে ১৯৯টি কলেজকে সরকারি করার অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে ২০০৯ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত ধাপে ধাপে প্রায় ৫০টি স্কুল এবং কলেজ জাতীয়করণ হয়েছে।

এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ গতকাল শিক্ষাবার্তাকে বলেন, বিভিন্ন বিষয় যাচাই-বাছাই করে বেসরকারি কলেজগুলোর তালিকা প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী সেই তালিকা ধরেই কলেজগুলোকে সরকারি করার অনুমোদন দিয়েছেন। এখন শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিভিন্ন প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বাকি কাজ শেষ করবে।

তিনি বলেন, যেসব উপজেলায় সরকারি কলেজ নেই সেসব উপজেলার একটি কলেজকে সরকারি করা হচ্ছে। সরকারি করার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট উপজেলার সেরা বেসরকারি কলেজকে নির্বাচিত করা হয়েছে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বেসরকারি কলেজের জমি, অবকাঠামো, কলেজের ফলাফল, খেলার মাঠ, এক্সট্রা কারিকুলাম এক্টিভিটি, উপজেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ আরো বেশ কিছু বিষয় বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। সর্বোপরি স্থানীয় সংসদ সদস্যদের মতও প্রাধান্য দেয়া হয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ঈদুল ফিতরের ছুটি কাটিয়ে আগামী ১০ জুলাই সরকারি অফিস খুলবে। এর পর থেকে ১৯৯টি কলেজে শিক্ষা মন্ত্রণালয় চিঠি পাঠানো শুরু করবে। এতে বলা হবে, সংশ্লিষ্ট কলেজটি উপজেলার সেরা কলেজ হিসেবে সরকারিকরণের জন্য বিবেচিত হয়েছে। এসব কলেজে এখন থেকে সর্বপ্রকার নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। অর্থাৎ চিঠি পাওয়ার পর থেকে কলেজগুলো সরকারিকরণের প্রক্রিয়ার মধ্যে পড়ে যাবে।

এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক) চৌধুরী মুফাদ আহমেদ গতকাল বলেন, প্রধানমন্ত্রী কলেজগুলোর সরকারিকরণের অনুমোদন দিলেও স্কুলগুলোর এখনো দেননি। অনুমোদন পাওয়া কলেজগুলোর সরকারিকরণের প্রক্রিয়া মন্ত্রণালয়ের কলেজ শাখা সম্পন্ন করবে।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) অধ্যাপক এস এম ওয়াহিদুজ্জামান জানান, প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন সংক্রান্ত চিঠিটি দুটি তালিকায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এসেছে। ১০ জুলাইয়ের পর থেকে অনুমোদন পাওয়া কলেজগুলোকে নিয়ে সরকারিকরণের কাজ শুরু হবে। তার মতে, এই প্রক্রিয়া শিক্ষা মন্ত্রণালয় নিজেই শুরু করতে পারে অথবা মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরকে দায়িত্ব দিতে পারে। যা-ই হোক না কেন, প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দেয়ায় বিষয়টিতে আর কোনো জটিলতা থাকল না বলে মনে করেন শিক্ষা প্রশাসনে কর্মরত এই অধ্যাপক কর্মকর্তা।

প্রতারকরা সক্রিয় : বেশ কিছুদিন ধরেই স্কুল-কলেজ জাতীয়করণের নামে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নাম ভাঙিয়ে একটি চক্র প্রতারণা করছে বলে অভিযোগ রয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। এ কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের জন্য কোনো প্রতিষ্ঠান যেন কাউকে টাকা পয়সা না দেয়ার কথা বলে আসছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। গতকাল এই সতর্কবার্তা নতুন করে ফের বলে দেয়া হয়েছে সংশ্লিষ্টদের।

এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক) চৌধুরী মুফাদ আহমেদ বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের জন্য কাউকে কোনো টাকা পয়সা দেয়ার প্রয়োজন নেই। এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কেউ যেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের জন্য কাউকে টাকা পযসা না দেন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, সরকারের নীতি অনুযায়ী দেশের প্রতিটি উপজেলায় একটি করে মাধ্যমিক স্কুল ও একটি কলেজ পর্যায়ক্রমে জাতীয়করণ করা হবে। শুধু জাতীয়করণ নয়, ভবন নির্মাণ, এমপিওভুক্তি, বিষয় খোলা, প্রকল্প অনুমোদনসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কাজের কথা বলে একটি প্রতারক চক্র দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অর্থ দাবি করছে।

উল্লেখ্য, ভবন নির্মাণ, এমপিওভুক্তি, বিষয় খোলা, প্রকল্প অনুমোদন প্রভৃতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের রুটিন কাজ। নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করে মন্ত্রণালয়ে এ ধরনের কাজ শেষ হয়। এসব সরকারি কাজের জন্য অর্থ আদায়ের কোনো বিধান নেই। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোনো কর্মকর্তা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ বা এ ধরনের কোনো কাজের জন্য অর্থ নেয়ার বিষয় প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। কেউ এ ধরনের কাজের কথা বলে টাকা দাবি করলে তাকে নিকটস্থ থানায় সোপর্দ করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।