স্কুল ছাত্রী জখমের রহস্য রহস্য উদঘাটন

1477944264_88মুন্সীগঞ্জ ॥ সিরাজদিখানে স্কুল ছাত্রী জখমের রহস্য উদঘাটন হয়েছে। প্রেম প্রস্তাব প্রত্যাখানের কারণেই তাহমিনা জাহান আখির মাথায় রডের আঘাত করা হয় পরিকল্পিত ভাবে। রবিবার রাতে গ্রেফতার হওয়া নাহিদ দেওয়ান (২৫) সব স্বীকার করেছে। প্রেম প্রস্তাবে ব্যর্থ হওয়া বখাটে রোমান হাওলাদারের (২৮) সাথে যুক্ত হয়ে এই হামলা চালনো হয়। এ হামলায় সাথে তাদের আরো এক বন্ধু জড়িত ছিল। পুলিশ এখন তাকে খুজছে।

বিস্ময়কর হলো-আঁখির আপন চাচাতো ভাই মালেশিয়া প্রবাসী রবিন হাওলাদার এই হামলার পরিকল্পনার সাথে জড়িত। বোনকে মারার জন্য প্রবাস থেকে রবিন ২০ হাজার টাকা পাঠায়। শনিবার গ্রেফতার হওয়া রোমানের মোবাইল থেকে রবিনের সাথে হামলা সংক্রান্ত পরিকল্পনার তথ্যাদি ফেসবুকের ম্যাসেস থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। রবিবার রাতে হামলাকারী নাহিদ দেওয়ানকে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়। সে পার্শ্ববর্তী ফুরসাইল গ্রামের দিলু দেওয়ানের পুত্র।

প্রেম প্রস্তাবে ব্যর্থ হওয়া রোমান হাওলাদার এবং নাহিদ দেওয়ানসহ তিনজন আঁখির বাড়িতে গিয়ে এই হামলা চালায়। পুলিশ হামলাকারী অপর বখাটেকে গ্রেফতারের চেষ্টা চালাচ্ছে।

এদিকে নাহিদ দেওয়ান পুলিশের কাছে জানিয়েছে, বেশ কিছুদিন ধরে রোমান হাওলাদার প্রেম প্রস্তাব দিয়ে ব্যর্থ হচ্ছিল। এর মধ্যে মাদকের সাথে জড়িত থাকায় এলাকাবাসী প্রায় দুই মাস আগে রোমানকে পিটুনী দেয়। এরপর আর আখিকে ফোন দিয়ে বিরক্ত বিরক্ত করেনি রোমান। রোমানদের সন্দেহ ছিল আঁখিকে প্রেম প্রস্তাব দেওয়ার কারণেই তাকে মার খাইয়েছে আখি। এই ক্ষোভেই আঁখির উপর হামলার পরিকল্পনা শুরু করে। জমিজমা নিয়ে আঁখিদের পরিবারের সাথে চাচাতো ভাই রবিন হালদারের (২৮) পরিবারের সাথে বিরোধ ছিল। এই বিরোধের কারণেই আপন চাচাতো বোনের উপর হামলার পরিকল্পনায় জড়িয়ে যায় প্রবাসী রবিন।

এসব বিষয়ে নাহিদ দেওয়ান জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে সোমবার বিকেলে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এদিকে শনিবারে গ্রেফতার হওয়া এই ঘটনার মূল অপরাধী রোমান হাওলাদারের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। শনিবার এই রিমান্ড মঞ্জুর হলেও জিঞ্জাসাবাদ শুরু হয়নি। তবে মঙ্গলবার জেলা কারাগার থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আজ মঙ্গলবার সিরাজদিখানায় থানায় নেয়া হতে পারে।

সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (শ্রীনগর সার্কেল) মো. সামসুজ্জামান বাবু জানান, এই চাঞ্চল্যকর ঘটনার পুরো চিত্রই পাওয়া গেছে। সবকিছুই এখন পরিস্কার। তবে প্রথম অবস্থায় এর ক্লু বের করা ছিল কঠিন। আখিঁর বাবার দায়ের করা অজ্ঞাত আসামীদের তালিকায় এখন গ্রেফতারকৃতরা ছাড়াও মালেশিয়া থাকা রবিনও আসামী হচ্ছে। আর এই হামলার সাথে থাকা অপর যুবককেও গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে।

গত ১৮ অক্টোবর সন্ধ্যায় দুর্বৃত্তরা বাড়িতে ঢুকে আঁখির মাথায় পেছন দিক দিয়ে রড দিয়ে আঘাত করে। রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পরে আঁখি। গামছা দিয়ে মুখ ঢাকা হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। বাড়িতে লোকজন না থাকায় তারা বিনা বাধায় বাড়ি ত্যাগ করে। পরে রাতেই তাকে ঢাকা মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়।

তাহমিনা জাহান আঁখি জানান, তাঁর উপর তিন ব্যক্তি আক্রমন করে। মুখে গামছা বাধা থাকায় তিনি তাদের চিনতে পারেনি।

তাহমিনার ভাই জসিম উদ্দিন জানান, হামলাকারীরা গলায় ওড়না পেঁচিয়ে তাহমিনার শ্বাস রোধ করার চেষ্টা করেছিল। একজনের হাতে কামড় দিয়ে ও আরেকজনকে ধাক্কা দিয়ে ঘর থেকে দৌড়ে বের হয়ে আসে সে। গামছা দিয়ে দুর্বৃত্তদের মুখ বাঁধা থাকায় সে তাদের চিনতে পারেনি। তাহমিনার মাথায় প্রায় পাঁচ ইঞ্চি লম্বা জখন হয়েছে। ছয়টি শিলি পড়েছে মাথায়। হাসপাতাল থেকে ছুটি নিয়ে বাড়ি এসেছে আঁখি। তবে এখনও তার চিকিৎসা চলছে। এদিকে মূল আসামী গ্রেফতার এবং ঘটনা উদঘাটন হওয়ায় আঁখির পরিবার খুশি। কিন্তু রশুনিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী আঁখি নির্বাচনী পরীক্ষায় সবগুলো দিতে পারেনি। পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফিরেই হামলার শিকার হয়। এখন সামনে তার এসএসসি পরীক্ষা। এসব নিয়ে পরিবারটি দুশ্চিন্তায়। আর এই মামলার সাথে চাচাতো ভাইয়ের যোগসাজসও বেশ পীড়া দিচ্ছে পরিবারটিকে।

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।