ক্রীড়া প্রতিবেদক : ষোলটি বছর কেটেছে। প্রাণান্ত চেষ্টায়ও আসেনি পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়। দীর্ঘ অপেক্ষার প্রহর কাটাল জয়ের মিছিল দিয়ে। এবার একটি নয়, দুটি নয় এসেছে তিন তিনটি জয়। টানা তিন ম্যাচ জিতে পাকি¯থানকে বাংলাওয়াশই করে ছাড়ল বাংলাদেশ। বুধবার তৃতীয় ম্যাচে পাকিস্তানকে আট উইকেটে পরাজিত করেছে বাংলাদেশ। ড্যান কেক সিরিজটা তাই ৩-০ তে জিতে নিল মাশরাফির দল। ওয়ানডে ক্রিকেটে ১৮তম ওয়ানডে সিরিজ জয়টা বাংলাদেশ রাঙালো দশম বাংলাওয়াশের গৌরবে।
প্রথমে ব্যাট করে অধিনায়ক আজহার আলীর ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি সত্ত্বেও পাকিস্তান ৪৯ ওভারে ২৫০ রান করে অলআউট হয়। জবাবে সৌম্য সরকারের প্রথম সেঞ্চুরিতে ৩৯.৩ ওভারে ২ উইকেটে ২৫১ রান করে বাংলাদেশ। ৬৩ বল আগে পাওয়া জয়ে ম্যাচ সেরা হন সৌম্য সরকার।ছন্দে থাকা বাংলাদেশের জন্য ২৫১ রানের টার্গেটটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল বলা যাবে না। ওপেনিংয়ে তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকারের ব্যাটিং সেই টার্গেটকেই পৃথিবীর সহজতম কর্ম বানিয়ে দেয়। শুরু থেকেই পাকিস্তানের বোলারদের বেশ বিচক্ষণতার সঙ্গে খেলছেন তারা দুজন। পাকিস্তানকে হতাশ করে দলকে পাইয়ে দিয়েছেন স্বস্তির অনুসঙ্গ। ১৪৫ রানের জুটি গড়েন তারা। যা ওপেনিংয়ে বাংলাদেশের পক্ষে চতুর্থ সেরা জুটি। সর্বোচ্চ ১৭০ রানের জুটি গড়েছিলেন শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুত ও মেহরাব হোসেন অপি ১৯৯৯ সালে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে। টানা তৃতীয় সেঞ্চুরির পথে থাকা তামিম কাটা পড়লেন ২৯তম হাফ সেঞ্চুরির পর। জুনায়েদের বলে এলবির ফাঁদে পড়ার আগে তিনি ৬৪ রান করেন। বিশ্বকাপ হিরো মাহমুদউল্লাহর ব্যাট অবশ্য এই সিরিজে সেভাবে জেগে উঠেনি। তিনি ৪ রান করেই জুনায়েদের বলে বোল্ড হন। তবে গোটা ইনিংস জুড়ে মিরপুরের দর্শককুলকে বিনোদন দিয়ে গেছেন তরুন সৌম্য সরকার। উচ্চতা ও ব্যাটিং টেকনিক দিয়ে সৌম্য খেলেছেন দৃষ্টি নন্দন ইনিংস। শুরুতেই আক্রমণ করলেও হাফ সেঞ্চুরি করেছেন ৬৩ বলে। ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিটি করেছেন ৯৪ বলে। আজহারের বলে ছক্কা মেরে সৌম্য পৌঁছান তিন অঙ্কের ঘরে। ম্যাচে কমিউন্টেটরা মাঝে মাঝে সচিনের সাথে তুলনা করেন। তৃতীয় উইকেটে ৯৭ রানের জুটি গড়ে দলকে নির্বিঘেœ জয়ের বন্দরে নিয়ে গেছেন সৌম্য ও মুশফিক। চার মেরে দলের জয় নিশ্চিত করলেও মুশফিক এক রানের জন্য হাফ সেঞ্চুরি মিস করেছেন। ৪৩ বলে ৬টি চারে ৪৯ রান করে অপরাজিত থাকেন তিনি। সৌম্য খেলেন ১১০ বলে অপরাজিত ১২৭ রানের অসাধারণ ইনিংস। যেখানে ছিল ১৩টি চার ও ৬টি ছক্কার মার। পাকিস্তানের পক্ষে জুনায়েদ নেন দুই উইকেট।
এর আগে পাকিস্তান দেখিয়েছে ব্যাটিংয়ে চিরাচরিত উত্থান-পতনের দৃশ্য। ২ উইকেটে ২০২ রান করা দলটার ব্যাটিং লাইন ভেঙে পড়ে হঠাৎ করেই। ইনিংসে চার ব্যাটসম্যান করেছেন ২২০ রান। বাকি সাতজন মিলে করেছেন ২৪ রান। ৬ রান আসে অতিরিক্ত থেকে। তবে ওপেনিং জুটিতে ৯১ রান তুলেছিল পাকিস্তান। ইনিংসের ১৮তম ওভারে বাংলাদেশকে ব্রেক থ্রু এনে দেন নাসির হোসেন। ব্যক্তিগত ৪৫ রানে নাসিরের বলে কট বিহাইন্ড হন অভিষিক্ত সামি আসলাম। উইকেটে এসে অস্বস্তিতে থাকা হাফিজ (৪) বোল্ড হন আরাফাত সানির বলে।
তৃতীয় উইকেটে অধিনায়কের সঙ্গে জুটি বাঁধেন হারিস সোহেল। তাদের জুটি ৯৮ রান যোগ করে। বড় স্কোরটা তখন দৃষ্টিসীমায় ছিল ভালোভাবেই। আজহার হাফ সেঞ্চুরি করেন ৬২ বলে। তার ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি আসে ১১১ বলে। এর মাধ্যমে প্রায় পাঁচ বছর পর পাকিস্তানের কোনো ওয়ানডে অধিনায়ক সেঞ্চুরি পেলেন। ২০১০ সালে সর্বশেষ সেঞ্চুরি করেছিলেন শহীদ আফ্রিদি। সেঞ্চুরি করার পরের বলেই আউট হয়েছেন তিনি। সাকিবের বলে বোল্ড হওয়ার আগে ১১২ বলে ১০টি চারে ১০১ রান করেন অধিনায়ক আজহার।পঞ্চম হাফ সেঞ্চুরির পর হারিস সোহেলও স্থায়ী হননি। ব্যাটিং পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে ৫২ রান করে মাশরাফির শিকার হন এই তরুণ। পরে রিজওয়ান কট এন্ড বোল্ড করেন সাকিব। মাশরাফির বলে ডিপ স্কয়ার লেগে নাসিরের দুর্দান্ত ক্যাচে ফিরেন ফাওয়াদ আলম। সাদ নাসিম, ওয়াহাব রিয়াজ রুবেলের শিকার হন। উমর গুল রান আউট হন। সাদ নাসিমের ২২ রানে আড়াইশোর চ্যালেঞ্জিং স্কোর পায় পাকিস্তান। জুনায়েদ খানকে বোল্ড করে
পাকিস্তানের ইনিংসের লেজটা মুড়ে দেন আরাফাত সানি। বাংলাদেশের মাশরাফি, সাকিব, রুবেল, আরাফাত ২টি করে উইকেট নেন।