সাত দিনের ছুটিতে শিক্ষক শ্যামল কান্তি

নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত দুই মাস পর কর্মস্থলে যোগদান করার পর আবারও সাত দিনের ছুটিতে গেছেন।

রোববার পুলিশ পাহারায় স্কুলে যোগদান শেষে জেলা প্রশাসকের সাথে সাক্ষাৎ করেন। এরপর শারিরীক অসুস্থতা দেখিয়ে ৭দিনের ছুটি আবেদন করেন প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত।

তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ১৮ জুলাই পর্যন্ত ছুটি মঞ্জুর করেন স্কুলটির বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান মিঞা।

সোমবার রাতে মোবাইল ফোনে ছুটির বিষয়ে শ্যামল কান্তি ভক্ত জানান, ‘১৩ মে ঘটনার দিন চোখের চশমা ভেঙে যায়। এছাড়াও মাথায় আঘাতের কারণে চোখের বেশ কিছু সমস্যায় ভুগছেন। যার কারণে তিনি জেলা প্রশাসকের কাছে চোখের সমস্যার কারণে সাতদিনের ছুটির আবেদন করেন। মঙ্গলবার (১২ জুলাই) থেকে তিনি ছুটিতে থাকবেন।’

শ্যামল কান্তির ছুটির ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আ ক ম নুরুল আমিন জানান, গত ১৩ মে পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ে ঘটনার পর সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে ম্যানেজিং কমিটি বিলুপ্ত করে জেলা প্রশাসককে দায়িত্ব দেয়া হয়। প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত রোববার পুলিশি পাহারায় কর্মস্থলে যোগদান করেন। একই দিন তিনি জেলা প্রশাসকের সাথে সাক্ষাৎ করে শারিরীক অসুস্থতা দেখিয়ে সাতদিনের ছুটির আবেদন করলে জেলা প্রশাসক তার ছুটি মঞ্জুর করেন।

এদিকে, ছুটি মঞ্জুর হওয়ার পরও ওই প্রধান শিক্ষক সোমবার সকালে পুলিশ পাহারায় বিদ্যালয়ে যান।

উল্লেখ্য, গত ১৩ মে নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তির অভিযোগ এনে স্কুল কমিটির লোকজন ও স্থানীয় জনগণ প্রথমে মারধর করে। পরে স্থানীয় জাতীয় পার্টির নারায়ণগঞ্জ-৫ (শহর ও বন্দর) আসনের সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমান কানধরে উঠবস করান। তবে এ বিষয়ে তিনি লজ্জিত ও দুঃখ প্রকাশ করে শিক্ষকের প্রাণ বাঁচাতে এ কাজ করেছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন।

পরে ওই রাতেই শ্যামল কান্তি ভক্তকে প্রথমে বন্দর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরদিন শহরের খানপুরে নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। প্রথমে তাকে হাসপাতালের ২০নং ওয়ার্ডে শয্যা দিলেও পরে উন্নত কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে ডা. শফিউল আজমের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন থাকার পর গত ২০ মে পুলিশের প্রহরায় শ্যামল কান্তি ভক্তকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। ওই বোর্ডের অধীনেই তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন।

গত ৯ জুন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে রিলিজ দেয়ার পর ওইদিন বিকেলে নারায়ণগঞ্জ শহরের নগর খানপুরে মোকরবা সড়কের বাসায় উঠেন। সেই থেকে তিনি দীর্ঘদিন পুলিশি নিরাপত্তায় ছিলেন।

এছাড়াও শ্যামল কান্তিকে বরখাস্ত করে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি। কিন্তু পরে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সাময়িক বরখাস্ত হওয়া প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে স্বপদে বহাল রাখার সিদ্ধান্ত জানান। সেই সঙ্গে এই ঘটনায় ওই স্কুল পরিচালনা কমিটিকে বাতিলের ঘোষণা দেন শিক্ষামন্ত্রী।

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।