শিক্ষিকা অঞ্জনার রানীর আবিস্কার সহজে পড়া মনে রাখার শতাধিক ফর্মুলা

1472146737898সিলেট: ‍ আনুপাতিক হারে লেখাপড়ায় যারা দূর্বল যাদের মুখস্তবিদ্যা কম কিংবা যাদের প্রাইভেট পড়ার সামর্থ্য নেই মৌলভীবাজারের বাজার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক সহকারী শিক্ষিকা তাদের জন্য আবিস্কার করেছেন শতাধিক টেকনিক।

কোনটা ছড়া দিয়ে, কোনটা খেলার ছলে, কোনটা মজার বাক্যে, আবার কোনটা সুত্র হিসেবে। বর্তমানে তিনি এই টেকনিকগুলো নিজের ক্লাসের ছাত্রদের শিখিয়ে দিচ্ছেন।

তবে এই টেকনিকগুলো সকল ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হলে প্রয়োজন সরকারের সহায়তায় এগুলো পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা।
একটি ছড়ার মাধ্যমে ৭টি মহাদেশের নাম, অনেক গুলো মাছের নাম, সব গুলো মৌলিক সংখ্যা, ৭টি বাক্যে দেশের ৬৪টি জেলার নাম, ভাজ্য ভাজক, ইংরেজী প্রশ্নের উত্তর কিভাবে তৈরী করতে হয়, জ্যামিতি ও ত্রিকোনমিতিসহ বিভিন্ন বিষয়ের প্রায় শতাধিক টেকনিক আবিস্কার করেছেন অঞ্জনা ঘোষ।
অঞ্জনা ঘোষ মাছের নাম মনে রাখার জন্য লিখেছেন মাছের ছড়া- টেংরা পুটি চিংড়ি ছড়ি চিতল,কাতল,রুই ইলিশ বোয়াল ফাইসা কই, মাগুর, সিং।
মৌলিক সংখ্যা- ও যৌগিক সংখ্যা- ৯ যুক্ত ৯টি সংখ্যার মধ্যে ৪টি সংখ্যা মৌলিক নয়। যা তিনি শিখিয়েছেন ছড়ার মাধ্যমে। ৩৯,৪৯,৬৯, ও ৯৯- এ গুলোর গুননিয়ক আছে। এরা যৌগিক। ছড়ার ভাষায়- তিন নয়, চার নয়, ছয় নয়, নয় নয় এরা মৌলিক নয় এরা মৌলিক নয়, চারটি সংখ্যা মৌলিক নয় যৌগিক হয় এরা যৌগিক হয়।

দুই তিন পাঁচ সাত, এগার তের, সতের, তেইশ একত্রিশ, সাতত্রিশ, একচল্লিশ ও তেতাল্লিশ । সাতচল্লিশ তিপ্পান্ন আরও আছে সাতান্ন । একষট্টি, সাতষট্টি, একাত্তর ও তেয়াত্তর আরও আছে তিরাশী আর সাতানব্বই ।
একটি বাক্যের মাধ্যমে ৮টি বিভাগের নাম- “ঢাকার খুচরা বিক্রেতা বসির মিয়া” (ঢাকার)- ঢাকা, (খুচরা) খুলনা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী (বসির) বরিশাল, সিলেট, রংপুর (মিয়া) ময়মনসিংহ।
একবাক্যে ৭টি মহাদেশের নাম- “অজগর ঐ আসছে তেরে- একে একে মিলে এক ঝাঁক পাখি দল বেঁধে উড়ে”- অষ্ট্রেলিয়া, আফরিকা, ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা, এশিয়া,এন্টারর্কটিকা ও দক্ষিন আমেরিকা।
ধারাবাহিক ভাবে ৭টি বড় শহরের নাম- ঢাকায় চটপটি খেয়ে সিলেট গেলো রাজা। ঢাকা, চট্টগ্রাম,খুলনা,সিলেট ও রাজশাহী।
সরল অংকের ধারাবাহিকতা- সরল অংকের জন্য এই সুত্রটি মনে রাখতে পারলে সরল অংকে ভুল হবে না। সুত্রটি হলো- সকালে বন এ ভাল্লুক গুলো যোগাযোগ বিনিময় করে ( সম, বন্দনী, এর, ভাগ, গুণ, যোগ ও বিয়োগ)
প্রশ্নে যদি (who,what,where,when, how, howmuch, howmaû & why) হেুা, হয়াট, হয়ার, হয়েন, হাও, হাওমাচ, হাওমেনি ও হওয়াই থাকে তাহলে বুঝতে হবে এগুলো প্রশ্ন। প্রশ্নে যদি ডিড থাকে তাহেল বুঝতে হবে এটি ফাস্ট টেন্স।

প্রশ্নে যদি ডাজ থাকে তাহলে মুল ভার্বের সাথে (ং বা বং) এস বা ইএস যোগ হয়। এভাবে তিনি অনেক গুলো ইংরেজী শিখার টেকনিক বের করে ছাত্রদের শিখাচ্ছেন। তিনি সহজ পদ্দতিতে শিখিয়েছেন ভাজ্য ভাগফল ভাজক, শিখিয়েছেন মুনাফা ও ঐকিক নিয়মের অংক। জ্যামিতি ও ত্রিকনোমিতির বেশ কয়েকটি সুত্র। যা ছাত্রদের জন্য বয়ে সুফল।
তিনি আবিস্কার করেছেন এক সুত্রে বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার নাম । সূত্র: মা ভোলা রাজ ফেনি-কুমিলøা ঢাকা লাল। (১) মামামু নাকি গো ফনটা সুনে বলতে পারবে সিরাজকে :- মাদারিপুর, মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, নরাইল, টাঙ্গাইল, সুমানগঞ্জ, নেত্রকোণা, বগুড়া, পাবনা, সিরাজগঞ্জ। (২) ভোলা, দিনা, চাপা, চুয়া নওয়া মৌলভী কুষ্টি করে:- ভোলা, দিনাজপুর, নাটোর, চাপাইনবাবগঞ্জ, চুয়াডাঙ্গা, নওগাঁ, মৌলভীবাজার, কুষ্টিয়া, কক্সবাজার। (৩) রাজ, ল²ী, চাঁদ, গাজী, জামাল শরিশের মেহের জয়:- রাজবাড়ি, ল²ীপুর, চাঁদপুর, গাজিপুর, জামালপুর, শরিয়তপুর, শেরপুর, মেহেরপুর, জয়পুর। (৪) ফেনীর যশো ঝিনাই রাঙ্গা খাগড়া নোয়া বাগে:-ফেনী, যশোর, ঝিনাইদহ, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, বাগেরহাট। (৫) কুমিল্লার কুড়িয়া বাহাদুর ব্রাহ্মণ ঠাকুর পঞ্চ গাইয়ের সাত লিটার দুধ হবে:- কুমিল্লা, কুড়িগ্রাম, বান্দরবান, ব্রাহ্মণ বাড়িয়া, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, গাইবান্ধা, সাতক্ষীরা, হবিগঞ্জ। (৬) ঢাকার খুচরা বিক্রেতা বসির মিয়া :- ঢাকা, খুলনা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল, সিলেট, রংপুর, ময়মনসিংহ। (৭) লাল নীল পিয়াজ পটল বর মাগুর ঝাল নয়:- লালমনিরহাট, নীলফামারী, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, বরগুনা, মাগুরা, ঝালকাঠি, নরসিংদি।
অঞ্জনা ঘোষ জানান, বাংলা ইংরেজী, অংক, ভূগল, সমাজ বিজ্ঞানসহ বিভিন্ন বিষয়ে এভাবে তিনি শতাধিক কৌশল বের করে তার ক্লাস ছাত্রদের শিখিয়ে দিয়েছেন।
এদিকে অঞ্জনা ঘোষের এই বিশেষ ফরমুলার পাঠ দানে খুশি তার ক্লাসের ছাত্রছাত্রীরাও। তারা জানায়, মেডামের এই কৌশলে ছড়ার মাধ্যমে ও খেলার মাধ্যমে সহজেই তারা অনেক কিছু শিখতে পেরেছে যা তাদের পরীক্ষায়ও কাজে লেগেছে।
আর মৌলভীবাজার সরকারী প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও বাজার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা রেহেনা আক্তার এ জানান, তার বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা অঞ্জনার এ আবিস্কার নিঃসন্দেহে ধন্যবাদ পাওয়ার দাবীদার। অঞ্জনার এই আবিস্কার সারা দেশের সকল ছাত্রদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে প্রয়োজন সরকারের শিক্ষা বিভাগের হস্তক্ষেপ।
অঞ্জনা ঘোষ জানান, তার এ আবিস্কৃত কৌশল যদি সরকারের শিক্ষা বিভাগ নিতে চান তা হলে তিনি তা দিতে প্রস্তুুত।
অঞ্জনা ঘোষ শ্রীমঙ্গল শহরতলী সন্ধানী আবাসিক এলাকার পংকজ কুমার দত্তের স্ত্রী। বর্তমানে তিনি মৌলভীবাজারে স্বামী নিয়ে বসবাস করছেন।

তার একমাত্র মেয়ে পিয়াংকা দত্ত মৌ স্বামী এডভোকেট প্রিতম দত্ত সজীবের সাথে মৌলভীবাজারেই বসবাস করছে এবং এলএলবি পড়ছে। তবে শিক্ষিকা অঞ্জনা ঘোষ জানান, তার প্রস্ফুটিত জীবনের জন্য তিনি তার স্কুল জীবনের শিক্ষক ফরেস্টার শিব প্রসাদ ভট্টাচার্য্যরে কাছে ঋণি।

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।