শিক্ষার্থী নির্যাতন বন্ধে শিক্ষক নিয়োগে ‘অঙ্গীকারনামা’

ঢাকা: প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশু-শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন বন্ধে আরও কঠোর হয়েছে সরকার।

খুদে শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষক নিয়োগের সময় তাদের কাছে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন না করার জন্য অঙ্গীকারনামা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

শারীরিক ও মানসিক শাস্তি বন্ধে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জেলা-উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় আলোচ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরকে নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হুমায়ুন খালিদের সভাপতিত্বে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সভায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরকে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে  জানান মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) মো. আলমগীর মঙ্গলবার (০৩ মে)  বলেন, শারীরিক নির্যাতনের বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে নির্দেশনা রয়েছে। শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের বিষয়ে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।

মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ‘বিদ্যালয়কে শিশু-বান্ধব এবং শিশুদের দ্বিতীয় বাসস্থান হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। তাই মানসিক ও শারীরিক শাস্তি দেওয়ার মাধ্যমে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষাদানের কোনো সুযোগ নাই।’

মন্ত্রণালয়ের ১১ দফা নির্দেশনায় বলা হয়েছে, শিক্ষক নিয়োগের সময় তাদের নিয়োগপত্রে বিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থীদের ওপর শারীরিক ও মানসিক শাস্তি প্রদান/নির্যাতন করা যাবে না- মর্মে শর্ত অন্তর্ভুক্ত করতে হবে এবং এ মর্মে নিয়োগকালে শিক্ষকদের কাছ থেকে অঙ্গীকারনামা গ্রহণ করতে হবে।

অন্যান্য নির্দেশনায় বলা হয়, ছাত্র-ছাত্রীদের শারীরিক শাস্তি বন্ধে বিভিন্ন ধরনের সচেতনতামুলক স্লোগান সম্বলিত পোস্টার, ব্যানার প্রস্তুতপূর্বক তা সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দৃশ্যমান স্থানে লাগাতে হবে।

‘শিক্ষার্থীদের ওপর শারীরিক ও মানসিক শাস্তির বিষয়টি অসদাচরণ হিসেবে গণ্য করে শাস্তি প্রদানকারী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা।’

নির্দেশনায় আরও বলা হয়, মাঠ পযায়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাসহ অপরাপর যেকোনো কর্মকর্তা বিদ্যালয় পরির্দশনকালীন উক্ত বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর শারীরিক শাস্তি দেন কিনা- সে বিষয়টি যাচাই বাছাই করে দেখবেন এবং পরির্দশন প্রতিবেদনে সুপারিশ করবেন।

‘শ্রেষ্ঠ বিদ্যালয় নির্বাচনের মানদণ্ড শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শারীরিক শাস্তি দেওয়া হয় না- এ বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।’

বিভাগীয় উপ-পরিচালক এবং জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের নিয়ে অনুষ্ঠিত সমন্বয়  সভাসহ প্রতিটি উপজেলায় প্রধান শিক্ষকদের নিয়ে অনুষ্ঠিত মাসিক সমন্বয় সভায় শারীরিক শাস্তি দেওয়া হচ্ছে কিনা, দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে কিনা, তা আলোচনা করতে হবে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করবে বলে নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়।

অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আলমগীর বলেন, এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

শিক্ষার্থীদের নির্যাতন বন্ধে এরআগে ২০১০ সালের ২২ সেপ্টেম্বর একটি পরিপত্র জারি করেছিল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

সম্প্রতি শিশুদের  নির্যাতন বেড়ে যাওয়ায় গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালকসহ শিক্ষাবিদরা মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে তাদের ক্ষোভের কথা জানান। এর পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয়ের সভায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরকে নির্দেশনা দেওয়া হয়।

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।