মাদারীপুরের বাস দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া সুইটি ঢাবি ছাত্রী ছিলেন না

Image

নিজস্ব প্রতিবেদক,২০ মার্চ ২০২৩: মাদারীপুরের শিবচরে বাস দুর্ঘটনায় নিহত ১৯ জনের মধ্যে একজন সুরভী আলম সুইটি (২২)। আজ রোববার সকাল পৌনে ৮টার দিকে বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়ের শিবচরের কুতুবপুর এলাকায় রেলিং ভেঙে খাদে পড়া ইমাদ পরিবহনের বাসটি খুলনা থেকে ঢাকায় যাচ্ছিল। আহত হয়েছেন অন্তত ৩০ জন।

এদিকে, দুর্ঘটনার পর থেকে সুইটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ইংরেজি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী বলে অধিকাংশ গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। তবে সুইটির মৃত্যু সম্পর্কে তথ্য নেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) প্রক্টর অফিস কিংবা ইংরেজি বিভাগের চেয়ারম্যানের কাছে। তাছাড়া সুইটি নামে কোন শিক্ষার্থী বাস দুর্ঘটনায় নিহত হয়নি বলে বিভাগের সহপাঠীদের পক্ষ থেকেও নিশ্চিত করা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সুইটি ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজিতে অনার্স করছিলেন। রাতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের চেয়ারম্যান।

জানা যায়, রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকার অবস্থিত ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ‘বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি’। রাত সাড়ে আটটার দিকে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের চেয়ারম্যান শেখ আলাউদ্দিন বলেন, মাদারীপুরের শিবচরে মারা যাওয়া সুইটি আমাদের বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের নিয়মিত ছাত্রী ছিলেন। তাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা অন্যকোন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী বলে গণমাধ্যমে নাম আসাটা অপ্রাসঙ্গিক।

রাত ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগ থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে গভীরভাবে শোক প্রকাশ করে বলা হয়, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি’র ইংরেজি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী সুইটি আলম সুরভী (২২) আজ রোববার সকালে মাদারীপুরের শিবচরের কুতুবপুর এলাকায় এক মর্মান্তিক বাস দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

“তার এ অকাল মৃত্যুতে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি পরিবার গভীরভাবে শোকাহত। আমরা মরহুমের আত্নার মাগফিরাত কামনা করছি এবং শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। মহান আল্লাহতায়ালা যেন তাদের এ শোক কাটিয়ে উঠার শক্তি দেন। আমীন।”

গোপালগঞ্জ শহরের পাচুড়িয়া এলাকার বাড়ি সুইটির। দেড় বছর আগে রংপুরের রেজাউর রহমানের সঙ্গে বিয়ে হয় তার। রেজাউর ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তাদের সংসারে আনাহিতা নামে ৫ মাসের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। পড়ালেখার কারণে দুই মাস বয়স থেকে আনাহিতাকে মায়ের কাছে রেখে ঢাকার মিরপুরে স্বামীর সঙ্গে থাকতেন সুইটি।

এদিকে, দুর্ঘটনার পর বিকেলে সুইটির লাশ অ্যাম্বুলেন্সে করে গোপালগঞ্জ শহরের পাচুড়িয়া এলাকার বাড়িতে পৌঁছালে সেখানে হৃদয় বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। সকালে বাবা তার মেয়েকে নিয়ে গিয়েছিলেন ঢাকায় পৌঁছে দিতে, কিন্তু ফিরলেন মেয়ের মরদেহ নিয়ে। এদিকে ছোট মেয়ে আত্মহত্যা করেছে ৪ বছর আগে, আর আজ বড় মেয়ের মৃত্যু শোকে নির্বাক সুরভীর মা বিউটি খানম।

জানা যায়, সুইটিকে নিয়ে আজ ভোর ৬টায় ইমাদ পরিবহনের একটি গাড়িতে গোপালগঞ্জ থেকে ঢাকায় যাচ্ছিলেন বাবা মাসুদ আলম। দুর্ঘটনায় ভাগ্যক্রমে মাসুদ বেঁচে গেলেও বাঁচেননি সুরভী।

চোখের সামনে মেয়েকে হারিয়ে নির্বাক বাবা। এদিকে মেয়ের মৃত্যুর কথা শুনে গোপালগঞ্জের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। একমাত্র মেয়ের মৃত্যুর কথা যেন মেনে নিতে পারছে না নিহত সুইটির মা। মেয়ের মৃত্যুর কথা মনে পড়লে বার বার অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছেন তিনি।

এদিকে, সুইটির বাবা মাসুদ আলম আহতাবস্থায় গোপালগঞ্জ ২৫০-শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। মাসুদ আলমের গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার মেরি গোপিনাথপুর গ্রামে হলেও দীর্ঘ বছর আগে শহরের পাচুড়িয়া এলাকার বাড়িতে থাকতেন।

নিহত সুইটির মামা নুরু মিয়া বলেন, আমার দুলাভাই এসেনশিয়াল ড্রাগসে নিরাপত্তারক্ষীর চাকরি করেন। ওর বাবা সকালে মেয়েকে ঢাকায় পৌঁছে দিতে গিয়েছিলেন। দশটার আমাদের কাছে ফোন আসে আমার মেয়ে নাই।

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।