ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি

Image

এক কন্যার বাবা তার কন্যাকে ভিকারুননিসায় ভর্তি করতে প্রকৃত জন্মসনদ ছাড়া আরো তিনটি ভুয়া জন্মসনদ তৈরি করেন। আর এই চারটি জন্মসনদ দিয়ে ভিকারুননিসায় প্রথম শ্রেণিতে ভর্তিতে লটারির জন্য আবেদন করেন।

অভিভাবকের কৌশল হলো, চারটি আবেদনের মধ্যে যে কোনো একটি টিকে গেলেই হলো, ভর্তি করা যাবে। লটারির ফলে দেখা যায়, ঐ শিক্ষার্থী চার বার ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়েছে। ফলে সৌভাগ্যবান পিতা প্রকৃত জন্মসনদ দিয়ে যে আবেদন করেছিলেন, সে আবেদনের ভিত্তিতে ভর্তি হন। ভুয়া সনদগুলো এড়িয়ে যান।

চলতি বছরের ভিকারুননিসা নূন স্কুলের বসুন্ধরা শাখার ঘটনা এটি।

ভিকারুননিসার মূল শাখায় প্রায় একই ধরনের জালিয়াতি হয়েছে। এক জন শিক্ষার্থীর অভিভাবক তার সন্তানের দুটি জন্মসনদ তৈরি করে একই শাখায় পৃথক দুটি আবেদন করেছে। ঐ শিক্ষার্থী দুটি আবেদনের বিপরীতেই লটারিতে উত্তীর্ণ হয়েছে। কিন্তু একটিতে সে ভর্তি হয়েছে। এমন কৌশল নিয়ে আরো বেশ কয়েক জন অভিভাবক তার সন্তানকে ভর্তি করিয়েছেন। বিষয়গুলো প্রমাণ পাবার পর সংশ্লিষ্ট ভর্তি কমিটি ও অধ্যক্ষের কাছে লিখিত জবাব চেয়েছে ভর্তি অনিয়মে গঠিত তদন্ত কমিটি।

দৈনিক শিক্ষাবার্তার হাতে থাকা নির্বাচিত হওয়া ছাত্রীদের তথ্য যাচাই করে দেখা গেছে, এমন ছাত্রীও ভর্তি হয়েছে, যাদের জন্মসনদ অনলাইনে পাওয়া যায়নি। বা কারো কারো জন্মসনদের একটি সংখ্যা ভুল। কারো আবেদন করা বয়সের সঙ্গে জন্মসনদের বয়সের মিল নেই। কোনো কোনো ছাত্রীর জন্মসনদের স্থলে বাবার জন্ম সনদ নম্বর দেওয়া হয়েছে। কেউ বাবার নামের বানান পরিবর্তন করে একাধিক আবেদন করেছেন।

এভাবে এনআইডি জালিয়াতির মাধ্যমে অন্তত ৩৬ জনের ভর্তির বিষয়ে তথ্য মিলেছে। এর মধ্যে মূল প্রভাতি বাংলা ভার্শনে ৯ জন, মূল দিবা বাংলা ভার্শনে দুই জন, মূল দিবা ইংরেজি ভার্শনে চার জন, ধানমন্ডি প্রভাতিতে এক জন, ধানমন্ডি দিবায় তিন জন, বসুন্ধরা প্রভাতি দুই জন, বসুন্ধরা দিবা তিন জন, আজিমপুর প্রভাতি তিন জন এবং আজিমপুর দিবা শাখায় সাত জন।

ভিকারুননিসায় ভর্তিতে অনিয়মের বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোমিনুর রহমান এসব অনিয়মের কারণে ভিকারুননিসার ভর্তি কমিটির সদস্যদের কাছে চার কর্মদিবসের মধ্যে লিখিত জবাব চেয়েছেন। তথ্য অনুযায়ী, ভিকারুননিসা ভর্তির জন্য একটি পৃথক নীতিমালা জারি করে।

সেখানে বলা হয়েছে, সব শিক্ষার্থীর জন্মনিবন্ধনের ফটোকপি/অনলাইন কপি আবেদনকৃত ফরমের সঙ্গে জমা দিতে হবে। সব জন্মসনদ অনলাইনে যাচাই করা হবে। আবেদনকারীর অনলাইন জন্মনিবন্ধনের সঙ্গে আবেদন ফরমের কোনো ভুল বা তথ্যে গড়মিল থাকলে ভর্তির জন্য অযোগ্য বিবেচিত হবে।

এছাড়া মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর তাদের নীতিমালায় বলেছে, কোনো তথ্য পরিবর্তন করে একাধিক বার আবেদন করে থাকলে তার ভর্তির নির্বাচন বাতিল হবে। এছাড়া মিথ্যা তথ্য দিয়ে কোনো শিক্ষার্থী নির্বাচিত হয়ে থাকলে তাকে ভর্তি করা যাবে না। ভিকারুননিসার এক অভিভাবক হাবিবুর রহমান বলেন, এভাবে জালিয়াতির মাধ্যমে ভর্তি হওয়ায় প্রকৃত ছাত্রীরা ভর্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এই অনিয়ম ও জালিয়াতির দায় প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ও ভর্তি কমিটি কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না।

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।