বিসিএস পরীক্ষা দিতে যাওয়ার পথে প্রাণ গেল পিংকীর

Image

গাজীপুর প্রতিনিধি,২৭ মে ২০২২
স্বপ্নবাজ পিংকী রাণী বর্মণ, বয়স ২৫। প্রখর মেধার অধিকারী পিংকী শিক্ষাজীবনে সফলতার স্বাক্ষর রেখে বাবা নারায়ন চন্দ্র বর্মণ, মা মণিকা রাণী বর্মণ ও শিক্ষকসহ প্রতিবেশীদের স্বপ্ন জাগিয়ে রেখেছিলেন। সেই স্বপ্নের সিঁড়ি বেয়ে পেরুচ্ছিলেন এক একটি ধাপ। সফলতার সাথে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে মেধার স্বাক্ষর রেখে ভর্তি হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানেও মেধার স্বাক্ষর রেখে স্বাতক সম্মান ও স্বাতকোত্তর সম্পন্ন করেন পিংকী।

সেই স্বপ্ন পূরণে ৪৪তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় অংশ নিতে সকল প্রস্তুতিও শেষ করেন। শুক্রবার সকালে ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজ কেন্দ্রে বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিতে বাবার সাথে মোটরসাইকেলে রওনা হয়েছিলেন। পথিমধ্যে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ যায় পিংকীর। মহাসড়কের কালো পিচ রক্তাক্ত হয় তার রক্তে। অঙ্কুরেই বিনষ্ট হলো একটি স্বপ্ন। আর একটি দুর্ঘটনায় মিলিয়ে গেলো পিংকীর স্বপ্ন।

শুক্রবার সকালে ৪৪তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিতে বাবার সাথে মোটরসাইকেলে কেন্দ্রে যাওয়ার পথে এক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন পিংকী। তিনি গাজীপুর সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের তালতলী গ্রামের নারায়ন চন্দ্র বর্মণ ও মণিকা রাণী বর্মণ দম্পতির দ্বিতীয় সন্তান।

পিংকীর বাবার বরাত দিয়ে বড় ভাই নিতাই চন্দ্র বলেন, ৪৪তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল পিংকী। দিন-রাত বইয়ের সাথে মিতালী গড়ে তুলেছিল। বিসিএস পরীক্ষার কেন্দ্র ছিল ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজ। পরিবারের সাথেই সে থাকতো গাজীপুরের সদর উপজেলার তালতলী গ্রামে। ময়মনসিংহ পরীক্ষা কেন্দ্র হওয়ায় বেশ কিছুদিন আগে ভালুকার নানাবাড়িতে গিয়েছিল, সেখান থেকেই চলছিল তার বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নেয়ার প্রস্তুতি।

তিনি আরও বলেন, শুক্রবার খুব ভোরে বাবা নারায়ন চন্দ্র বর্মণ গাজীপুর থেকে মোটরসাইকেল যোগে ভালুকার নানাবাড়িতে যায়। সেখান থেকে পিংকীকে মোটরসাইকেলে উঠিয়ে ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। পথিমধ্যে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চুরখাই পৌঁছলে পেছন থেকে একটি ড্রাম্পট্রাক তাদের মোটরসাইকেলকে ওভারটেক করে সামনে গিয়ে হার্ড ব্রেক করে। এতে চালকের আসনে থাকা বাবা নিয়ন্ত্রণে হারিয়ে ফেললে পিংকী মোটরসাইকেলের পেছন থেকে পড়ে গিয়ে গায়ে আঘাত পায়। এ সময় পেছন থেকে ময়মনসিংহগামী অপর আরেকটি বাস তাকে চাপা দিলে গুরুতর আহত হয়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।

পিংকীর বাড়ির পাশেই তালতলী মডার্ন স্কুল এন্ড কলেজ। সেখানেই প্রাথমিক শিক্ষাজীবনের তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে পড়েছে সে। ওই বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও অধ্যক্ষ কে এম জাহিদুল ইসলাম। তিনি জানান, প্রাথমিক স্তরের শিক্ষাজীবন শেষে পিংকী ২০১৪ সালে স্থানীয় মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে মাধ্যমিক শিক্ষাজীবন শেষে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হয় গাজীপুর মহিলা কলেজে। সবগুলো শিক্ষাবর্ষে সফলতার স্বাক্ষর রেখেছে পিংকী। সবশেষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্বাতক সম্মান ও স্বাতকোত্তর সম্পন্ন করে বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিতে প্রস্তুতি নিচ্ছিল।

তিনি বলেন, ক্লাসে অত্যন্ত শান্ত ও মেধাবী হিসেবে সকলের কাছে পরিচিত ছিল পিংকী। সে খুব বিনয়ী ছিল। সবাইকে নোনা জলে ভাসিয়ে আজ চলে গেছে। পিংকীর মৃত্যু আমাদের হৃদয় ছুয়ে গেছে।

পিংকীর মৃত্যুতে ওই এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। পিংকীর প্রতিবেশী আমিনুল ইসলাম বলেন, পিংকী ছিল সম্ভাবনায় একজন মেয়ে। তার শিক্ষা জীবনে সে মেধার স্বাক্ষর রেখেছিল। তার এমন মৃত্যু আমাদের মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে।

জয়দেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহতাব উদ্দিন বলেন, ঘটনাস্থল ময়মনসিংহে হওয়ায় সেখানকার পুলিশ এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

ময়মনসিংহ কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ কামাল আকন্দ বলেন, ঘটনাটি শোনার পরপরই ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘাতক ড্রাম্পট্রাকটিকে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। চালককে আটক করা সম্ভব হয়নি। ছাত্রী নিহতের ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।