প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দীর্ঘ সময়সূচি কেন?

এস কে দাসuntitled-50_173575

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কোমলমতি শিশুদের সকাল ৯টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত বিদ্যালয়ে থাকতে হয়। অনেক স্কুল হয়তো দুই শিফটের, সেগুলোও এক শিফটের করা হচ্ছে। ফলে যারা কম সময় থাকত তাদেরও দীর্ঘ সময় থাকতেই হবে।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ সময় বিদ্যালয়ে থাকার ফলে বাড়িতে পড়ার আর শক্তি ও ধৈর্য থাকে না। হয়তো দেশের কিছু এলাকায় স্কুল ফিডিং প্রোগ্রাম চালু আছে; কিন্তু বিশাল এলাকাই এর বাইরে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গরিব ও নিম্ন মধ্যবিত্তের সন্তানরাই পড়ে। তাই দুপুরে অনেক শিক্ষার্থীকে না খেয়ে বিদ্যালয়ে থাকতে হয়। তাছাড়া দুপুরে যে সংক্ষিপ্ত সময় বিরতি থাকে তাতে বাড়িতে গিয়ে অনেকেই গোসল করে খেয়ে আসতে পারে না। অনেকে সকালেও হয়তো কিছু না খেয়েই আসে। গরমে ঘর্মাক্ত হয়ে ক্লাস করলেও তাদের গ্রীষ্মের ছুটি নেই, তাদের বছরে তিনটি পরীক্ষার কোনো ছুটি থাকে না। মাধ্যমিক ও মহাবিদ্যালয়ে যেখানে বছরে পঁচাশি থেকে নব্বই দিনের মতো, সেখানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বছরে সত্তর দিনের মতো ছুটি। দীর্ঘ সময় বিদ্যালয়ে অবস্থানের ফলে শুধু শিক্ষার্থীদেরই কষ্টকর ও একঘেয়েমি লাগে না_ শিক্ষকদেরও পাঠদানে অনীহা ও বিরক্তিকর লাগে। এখন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনেক স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ শিক্ষক আছেন। কিন্তু তারাও দীর্ঘ স্কুল টাইমিংয়ের ফলে পাঠদানে ক্লান্তি ও একঘেয়েমির কারণে যথোপযুক্ত কর্মস্পৃহা হারিয়ে ফেলছেন, তাদের মেধা ও দক্ষতার পরিচয় দিতে পারছেন না। কেননা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একজন শিক্ষককে সব বিষয়েই পাঠ দিতে হয়। ফলে একজন শিক্ষকের চার-পাঁচটা ক্লাস নিতে হয়।
এখন সারাদেশে কিন্ডারগার্টেন, প্রিক্যাডেট, বিদেশি কিংবা বেসরকারি সংস্থার স্কুলের উপস্থিতি শহর থেকে গ্রাম সর্বত্র। পিতামাতা, অভিভাবকরা তাদের সন্তানকে ওই স্কুলেই পড়াতে আগ্রহী, খরচ বেশি হলেও। সেখানে মাত্র দুই আড়াই ঘণ্টার মতো স্কুলিং অথচ সেখানকার শিক্ষার্থীরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চেয়ে অনেক বেশি জানে এবং ভালো ফলও করে। কিন্ডারগার্টেন বা বিদেশি স্কুল কিংবা বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা পরিচালিত বিদ্যালয়গুলো যদি কম সময়ে বেশি শেখাতে কিংবা ভালো ফল করাতে পারে তাহলে কী দরকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে এই জবরদস্তিমূলক দীর্ঘ সময়ের স্কুলিং? তাই বাধ্যতামূলকভাবে বিদ্যালয়ে দীর্ঘসময় না রেখে যদি কিছু সময় কমানো হতো তাহলে বাড়িতে গিয়ে শিশুরা খেলাধুলায় সময় ব্যয় করতে পারত। কেননা অধিকাংশ বিদ্যালয়েই খেলার মাঠ নেই কিন্তু শিশুদের বাড়িতে কিংবা বাড়ির নিকটে খেলার জায়গা আছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে নেই কোনো গ্রন্থাগার। নেই কোনো শিক্ষা সফর বা চড়ুইভাতির ব্যবস্থা। ফলে দীর্ঘসময় তাদের শুধু পাঠগ্রহণেই ব্যস্ত থাকতে হয়। যদি কোনো পাঠ্যবহির্ভূত কার্যক্রম না থাকে তাহলে কী করে এই দীর্ঘ সময় শিশুরা বিদ্যালয়ে অবস্থান করতে পারে? যদি বিনোদনের কিংবা সুকুমারবৃত্তি চর্চার ব্যবস্থা থাকত তাহলে পড়াশোনাতেও উদ্যম ও আগ্রহ পেত।
Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।