প্রাথমিকে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতির জট কাটলো

Image

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পদোন্নতির জটিলতা কাটছে ১৪ বছর পর। প্রায় ২৮ হাজার সহকারী শিক্ষক পদোন্নতি পাচ্ছেন প্রধান শিক্ষক হিসেবে। এই পদোন্নতির কার্যক্রম প্রায় শেষ করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই)। শিগগির পদোন্নতি-সংক্রান্ত আদেশ জারি করা হবে। তবে তা হবে পর্যায়ক্রমে।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত বলেন, ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি-সংক্রান্ত সব জটিলতা দূর হয়েছে। শিক্ষকদের গ্রেডেশন তালিকা চূড়ান্ত করে ধারাবাহিকভাবে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হচ্ছে। আশা করছি, চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে পদোন্নতি কার্যক্রম সম্পন্ন হবে।’

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদন বলছে, বর্তমানে দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে ৬৫ হাজার ৫৬৬টি। এসব বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে ১ কোটি ৩৪ লাখ ৮৪ হাজার ৬১৭ জন। শিক্ষক আছেন ৩ লাখ ৫৯ হাজার ৯৫ জন।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ইতিমধ্যে কিশোরগঞ্জ, মেহেরপুর ও লক্ষ্মীপুর জেলার পূর্ণাঙ্গ গ্রেডেশন তালিকা এবং টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, কুষ্টিয়া ও সিরাজগঞ্জ জেলার ১১টি উপজেলার তালিকা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে যাচাই-বাছাই শেষে সরকারি কর্ম কমিশনে (পিএসসি) পাঠানো হয়। পিএসসি এর মধ্যে লক্ষ্মীপুরের পদোন্নতিপ্রাপ্ত শিক্ষকদের তালিকা চূড়ান্ত করে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।এখন নিয়ম অনুযায়ী অফিস আদেশ জারি করবে মন্ত্রণালয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, লক্ষ্মীপুর জেলার শিক্ষকদের পদোন্নতি-সংক্রান্ত অফিস আদেশ আগামী সপ্তাহে জারি হতে পারে।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্র জানায়, সারা দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গত ৩০ জুন পর্যন্ত প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদ ছিল ২৯ হাজার ৮৬২টি। এর মধ্যে নিয়ম অনুযায়ী ২৭ হাজার ৯০৭ জন সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে পদোন্নতি পাবেন। তবে অবসরের কারণে প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদ বাড়লে পদোন্নতিপ্রাপ্ত শিক্ষকের সংখ্যাও বাড়বে। আর বাকি ১ হাজার ৯৫৫টি পদ সরাসরি নিয়োগের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। এই নিয়োগ হবে পিএসসির মাধ্যমে।

বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সিনিয়র সহসভাপতি রাজেশ মজুমদার বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর সহকারী শিক্ষকদের পদোন্নতি দেওয়ার উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। একই সঙ্গে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়মিত পদোন্নতিরও দাবি জানাচ্ছি।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০০৯ সালে একটি মামলার কারণে সারা দেশে পদোন্নতির মাধ্যমে প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদ পূরণ বন্ধ হয়ে যায়।এতে হাজার হাজার প্রধান শিক্ষকের পদ বছরের পর বছর শূন্য থাকে। ২০১৪ সালে এ মামলার নিষ্পত্তি হয়। কিন্তু একই বছর প্রধান শিক্ষকের পদ দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করা হয়। এতে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ ও পদোন্নতি পিএসসির অধীনে চলে যায়। ফলে আবার বন্ধ হয়ে যায় পদোন্নতির মাধ্যমে শূন্য পদ পূরণ। পরে ২০১৭ সালের ২৩ মে থেকে প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয় সহকারী শিক্ষকদের।

এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, মূলত বর্তমান মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের বেশ কিছু উদ্যোগে পদোন্নতি-সংক্রান্ত জটিলতার নিরসন হয়। এ কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি এবং অপারেশন) মনীষ চাকমা। তিনি বলেন, মামলা ছাড়াও সারা দেশের সহকারী শিক্ষকদের গ্রেডেশন তালিকা চূড়ান্ত করা নিয়ে বড় ধরনের জটিলতা ছিল। কারণ, বিষয়টি ছিল জটিল ও সময়সাপেক্ষ। এ সমস্যা উত্তরণে ‘সমন্বিত গ্রেডেশন ব্যবস্থাপনা’ নামে একটি সফটওয়্যার তৈরি করা হয়। এরপরই ডিজিটাল পদ্ধতিতে চূড়ান্ত হয় গ্রেডেশন তালিকা।

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।