প্রাথমিকের ৪০ হাজার প্রধান শিক্ষক হতাশাগ্রস্থ

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের প্রায় ৪০ হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে। দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তার পদমর্যাদাসহ পাঁচ দফা দাবি জানিয়ে আসছেন তারা। এ নিয়ে দীর্ঘদিন আন্দোলন করেও কোনো সাফল্য না পেয়ে ক্ষোভ ও হতাশা  বাড়ছে তাদের মাঝে। এ প্রসঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, শিক্ষকদের দাবির বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে কাজ চলছে। এ বিষয়ে দৃশ্যমান অগ্রগতি হলেই সবাইকে জানানো হবে। শিক্ষকদের হতাশ বা ক্ষোভ প্রকাশ না করে তাদের দায়িত্বে মনোনিবেশ করা উচিত।
বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সমিতির তথ্যানুযায়ী, শিক্ষকদের পাঁচ দফা দাবি হচ্ছে প্রধান শিক্ষকদের দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তার পদমর্যাদা দেওয়া; বিদ্যমান একাদশ গ্রেড থেকে বেতন কাঠামো দশম গ্রেডে উন্নীত করা; সেলফ ড্রয়িং কর্মকর্তার ক্ষমতা প্রদান; নতুন নিয়োগবিধি অনুযায়ী শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতির বিধান চালু, অষ্টম পে-স্কেলে সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল পুনর্বহাল ইত্যাদি।
বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির মহাসম্পাদক সালেহা আক্তার দৈনিক বর্তমানকে জানান, প্রাথমিক শিক্ষকদের মর্যাদা বাড়ানো এবং তাদের জীবনমানের উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী দেশের বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে সরকারিকরণের ঘোষণা দেন। প্রধানমন্ত্রী একই সঙ্গে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের বেতন স্কেল এক ধাপ এবং প্রধান শিক্ষকদের বেতন স্কেল দুই ধাপ বাড়িয়ে দ্বিতীয় শ্রেণির পদমর্যাদা দেওয়ারও ঘোষণা দেন। কিন্তু ওই ঘোষণা বাস্তবায়নে কালক্ষেপণ করছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

রাজধানীর বাইরের এক প্রধান শিক্ষক তাছলিমা আক্তার বলেন, প্রধানমন্ত্রী যেহেতু দ্বিতীয় শ্রেণির ঘোষণা দিয়েছেন, তাই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগসহ সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করবে পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)। কিন্তু এখনো তা নিয়ন্ত্রণ করছে অধিদপ্তর।

পদমর্যাদা বাস্তবায়ন এবং পদোন্নতির দাবিতে গত বছর ১ অক্টোবর চেয়ার বর্জন ও ৩ থেকে ৫ অক্টোবর সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করেছেন প্রধান শিক্ষকরা। এরপর প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমানের আশ্বাসে এসব কর্মসূচি স্থগিত করেন তারা।
বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সমিতির আহ্বায়ক রিয়াজ পারভেজ জানান, প্রধান শিক্ষকদের দশম গ্রেডে ১৬ হাজার টাকা বেতন স্কেল নির্ধারণের পাশাপাশি বৈষম্য নিরসনেরও দাবি জানানো হয়েছে। প্রধান শিক্ষক পদটি ব্লক পদ হওয়ায় বর্তমান বেতন স্কেলে টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাদ দেওয়ার কারণে প্রধান শিক্ষকরা একই পদে ও গ্রেডে থেকে চরম বেতন বৈষম্যের শিকার হবেন। এ কারণে প্রধান শিক্ষকদের মধ্যে হতাশা ও অসন্তোষ বিরাজ করছে।
বাংলাদেশ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সমিতির খুলনা বিভাগীয় সম্পাদক স্বরুপ দাস জানান, ২০১৪ সালে শিক্ষা সপ্তাহের অনুষ্ঠানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের দ্বিতীয় শ্রেণির মর্যাদা এবং স্কেল ঘোষণা করেন। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে তা বাস্তবায়ন না হওয়ায় সারা দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষদের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। আমাদের দাবির বিষয়ে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দিয়েছি। এরপর শুনছি, আমাদের নন-গেজেটেড দ্বিতীয় শ্রেণির পদমর্যাদা দেওয়া হচ্ছে। আমরা দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড পদমর্যাদা চাই।
শিক্ষকদের তথ্যানুযায়ী, সারা দেশে ৬৩ হাজার ৮৬৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৪০ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পাঁচ দফা দাবি রয়েছে। বাকি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক (সহকারী শিক্ষক) থাকায় তারা এই দাবির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করছেন না। তাদেরও দাবি আছে, সেটা হলোÑ প্রধান শিক্ষকদের এক গ্রেড নিচে বেতন স্কেল চান সহকারী শিক্ষকরা।
প্রধান শিক্ষকদের দাবির বিষয়ে নাম না প্রকাশ করার শর্তে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা আমাদের সময়কে জানান, গত ৭ ফেব্রুয়ারি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের উন্নীত বেতন স্কেলে জটিলতা নিরসনের বিষয়ে অর্থ বিভাগকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি এখনো নিষ্পত্তি না হওয়ায় কোনো ঘোষণা দেওয়া যাচ্ছে না। শিক্ষকদের দাবির বিষয়ে যেহেতু মন্ত্রণালয় কাজ করছে, তাই শিক্ষকদের আন্দোলন, ক্ষোভ-হতাশা প্রকাশ না করে স্ব-স্ব কাজে মনোনিবেশ করার তাগিদ দিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল ওই কর্মকর্তা।
এদিকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ দেশের বাইরে থাকায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের দ্বিতীয় শ্রেণির পদমর্যাদায় (দশম গ্রেড) বেতন নির্ধারণের বিষয়ে এখনই বলা যাচ্ছে না। সচিব ফিরলেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, প্রধান শিক্ষকদের গেজেটেড দ্বিতীয় শ্রেণির পদমর্যাদা দেওয়ার বিষয়ে সহকারী থানা শিক্ষা কর্মকর্তারাও আপত্তি তুলেছেন। কেননা তারা দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা। প্রধান শিক্ষকদের সমান মর্যাদা দিলে প্রতিষ্ঠান তদারকিতে বাস্তব সমস্যা দেখা দিতে পারে।psc5
Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।