প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকদের টাইমস্কেল জটিলতা, কি বলছে প্রাগম?

পদোন্নতি

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা নন-গেজেটেড কর্মচারী। বিষয়টি সাফ জানিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় বলছে, দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীতকরণের সময় প্রধান শিক্ষকদের গেজেটেড হিসেবে উল্লেখ না থাকায় পদটি নন-গেজেটেড হিসেবে বিবেচিত হবে। গত রোববার জারি করা এক আদেশে এমন কথা বলেছে মন্ত্রণালয়।

আরো পড়ুন: প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকদের টাইমস্কেল কার্যকর করার দাবি

মন্ত্রণালয়ের একজন উপসচিব স্বাক্ষরিত ওই আদেশে, চাকরি (বেতন ও ভাতাদি) আদেশ-২০০৯ অনুযায়ী প্রধান শিক্ষকদের প্রাপ্য টাইমস্কেলসহ বেতন ভাতা নির্ধারণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে মাঠ পর্যায়ের হিসাবরক্ষণ অফিসগুলোতে নির্দেশনা দিতে বলা হয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চিফ অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড ফিন্যান্স অফিসারকে।

মন্ত্রণালয়ের এ আদেশটি নিয়ে প্রধান শিক্ষকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। প্রধান শিক্ষকদের কেউ কেউ দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলছেন, এ আদেশের ফলে ২০০৯ থেকে ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর পর্যন্ত টাইমস্কেল পাবেন প্রধান শিক্ষকরা।

শিক্ষকদের কেউ কেউ বলছেন, তারা ২০০৯ থেকে ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ পর্যন্ত তৃতীয় শ্রেণির পদ মর্যাদার ও ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ থেকে ওই বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত দ্বিতীয় শ্রেণির পদমর্যাদা পেয়েছেন, তাই দুই শ্রেণির চাকরিকাল গণনা করে প্রধান শিক্ষকদের টাইমস্কেলের টাকা দেবে না অর্থ মন্ত্রণালয়।

অপরদিকে এ আদেশের ফলে শিক্ষকরা টাইমস্কেলের টাকা পাবেন কি-না সে বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো মন্তব্য করতে চাচ্ছেন না প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা। বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে শিক্ষকদের মাঝে। রয়েছেন, ধন্দে।

সোমবার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে দৈনিক শিক্ষাবার্তাকে ওই আদেশ জারির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ কবির উদ্দীন। তবে, এ আদেশের ফলে প্রধান শিক্ষকরা ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের টাইমস্কেল সুবিধা পাবেন কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রধান শিক্ষকরা ওই সময়ের টাইমস্কেল পাবেন কি-না তা অ্যাকাউন্টস অফিস বলতে পারবেন’।

সারাদেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের দশম গ্রেডে উন্নীত করে দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তার পদমর্যাদা দিয়ে হাইকোর্টের রায় বহাল রেখেছিলো সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। তবে সরকারের পক্ষ থেকে তা রিভিউ করা হয়েছে।

দৈনিক শিক্ষাবার্তার এক বিশেষ সুত্রের অনুসন্ধানে জানা গেছে , তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার প্রধান শিক্ষক ওই সময় টাইমস্কেল প্রাপ্য ছিলেন। তাদের কাছ থেকে ঢাকা, রংপুর এবং সিলেটের কয়েকজন শিক্ষক নেতা বিপুল পরিমাণ টাকা ঘুষ নিয়েছেন টাইম স্কেলের টাকা পাইয়ে দেয়ার কথা বলে। তারা কোনো না কোনোভাবে ওই আদেশ জারির ব্যবস্থা করছেন যাদের কাছ থেকে ঘুষ নিয়েছেন তারা টাইমস্কেল পাবেন তা দেখাতে। তবে এ প্রক্রিয়ায় তারা প্রধান শিক্ষকদের পদমর্যাদা নষ্ট করছেন। যেটি এখনো সর্বোচ্চ আদালতে নিষ্পত্তির অপেক্ষায়। ওই শিক্ষকদের দাবি, এ ধরণের আদেশ আগেও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা হলে তা-ও কার্যকর হয়নি। ওইসব আদেশের ফলে প্রধান শিক্ষকরা টাইমস্কেলের টাকাও পাননি। এ জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা আদেশে স্বাক্ষর করলেও শিক্ষকরা টাইমস্কেল পাবেন কি-না সে বিষয়ে সাংবাদিকদের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে চাচ্ছেন না।

এসব বিষয়ে জানতে দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তার পদমর্যাদার দাবি জানানো এক প্রধান শিক্ষক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের ৯ মার্চের আগ পর্যন্ত প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা তৃতীয় শ্রেণির পদমর্যাদার ছিলেন। আবার ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ থেকে ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রধান শিক্ষকরা দ্বিতীয় শ্রেণির পদমর্যাদার। তাই ২০০৯ থেকে ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দ সময়ে প্রধান শিক্ষকরা একবার দ্বিতীয় শ্রেণি ও একবার তৃতীয় শ্রেণিতে ছিলেন। দু্ই শ্রেণির কারণে শিক্ষকদের টাইমস্কেল দেবে না অর্থ মন্ত্রণালয়।

তিনি আরো বলেন, এ ধরণের আদেশ আগে জারি হলেও তা কার্যকর করেনি অর্থ মন্ত্রণালয়। ফলে প্রধান শিক্ষকরা টাইমস্কেলও পাননি। আর ওই সময়ের টাইমস্কেল প্রাপ্তদের সংখ্যা ৩ হাজারের মতো। তিনি নিজেও তাদের একজন বলে দৈনিক আমাদের বার্তাকে জানিয়ে বলেন, কয়েকজন শিক্ষকনেতা ওই তিন হাজার প্রধান শিক্ষককে টাইমস্কেল পাইয়ে দিতে গিয়ে সব প্রধান শিক্ষকদের পদমর্যাদা নষ্ট করছেন। তবে আমরা প্রধান শিক্ষকরা চাই দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তার পদমর্যাদা। এ পদমর্যাদা দিলে আমাদের দশম গ্রেডে বেতন দিতে হবে। কয়েকজন শিক্ষক নেতা নিজেরা কিছু টাকা নিয়ে সব প্রধান শিক্ষককে বঞ্চিত করছেন।

010101

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।