প্রধান শিক্ষকের দুর্নীতি ঢাকতেই স্কুল হিজাব বিতর্ক

Image

ডেস্ক, ০৯ এপ্রিল, ২০২২ ঃ নওগাঁর মহাদেবপুরের দাউল বারবাকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে হিজাব বিতর্কে শিক্ষক আমোদিনী পালকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক ধরণীকান্ত বর্মণ। গেল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দেয়া নোটিশে সাত দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে।

এদিকে ঘটনা তদন্তে মহাদেবপুর উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। ওই কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। কমিটি তদন্তের কাজ শুরু করেছে।

এমন পরিস্থিতির মধ্যেই বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক ধরণীকান্তের বিরুদ্ধে অভিযোগ, নিয়োগ বাণিজ্যসহ লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে নিজের দুর্নীতি আড়াল করতেই আমোদিনী পালকে তিনি পরিকল্পিতভাবে ফাঁসিয়েছেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, এর আগে গত বুধবার বিদ্যালয়টির সমাবেশে নির্ধারিত পোশাক না পরে আসায় ছাত্রদের শরীরচর্চার শিক্ষক বদিউল আলম এবং ছাত্রীদের শাসন করেন সহকারী প্রধান শিক্ষক আমোদিনী পাল।

পরে ছাত্রীরা বাড়িতে গিয়ে পরিবারের অভিভাবকদের কাছে অভিযোগ করে হিজাব পরায় তাদের মারপিট ও অশালীন ভাষায় গালাগাল এবং হিজাব পরে বিদ্যালয়ে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। অন্য শিক্ষার্থীরা জানায়, স্কুল পোশাক না পরে আসায় কিছু ছাত্র-ছাত্রীকে সামান্য শাসন করা হয়। তবে হিজাব পরে আসা যাবে না, এমন ধরণের কোনো বক্তব্য কোনো শিক্ষকই রাখেননি।

অন্যদিকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে অভিভাবকেরা ক্ষোভে ফেটে পরেন। পরদিন বৃহস্পতিবার সকালে এর জেরে কয়েকশ’ অভিভাবক স্কুলে গিয়ে এর প্রতিবাদ জানান। অভিযুক্ত শিক্ষিককে না পেয়ে তারা স্কুলের আসবাবপত্র ভাঙচুর করেন। খবর পেয়ে থানা পুলিশের দুটি ভ্যান ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সাবেক সভাপতি পবিত্র পাল অভিযোগ করে বলেন, ধরণীকান্ত বর্মণ প্রধান শিক্ষক থাকাকালীন বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্যের লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়াসহ বিদ্যালয়ের টাকা লুটপাট করেন। তিনি কয়েক দিনের মধ্যেই অবসরে যাবেন।

তার ভয়, সরকারি নিয়ম অনুসারে পদাধিকার বলে সহকারী প্রধান শিক্ষক আমোদিনী পাল ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পাবেন। তিনি যদি সব অনিয়ম ফাঁস করে দেন তাহলে তিনি বিপদে পড়বেন। আমোদিনী পালের সাথে অন্যায় সমঝোতা করতে না পেরে হিসাব দিতে গড়িমসি শুরু করেন প্রধান শিক্ষক।

পরে বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকসহ অন্যরা আমোদিনীকে পরিকল্পিতভাবে হিজাব বিতর্কে ফাঁসিয়েছেন। বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শাহাদত হোসেন রতন জানান, ছাত্রদের শরীরচর্চার শিক্ষক বদিউল আলম ও ছাত্রীদের শাসন করেন সহকারী প্রধান শিক্ষক আমোদিনী পাল। সে সময় হিজাবের কোনো কথা হয়নি।

পবিত্র পাল জানান, পূর্ব পরিকল্পিতভাবে প্রধান শিক্ষক যোগসাজশে বুধবার রাতে বিদ্যালয়ের দুই একজন শিক্ষক ও অফিস সহকারী মিলে হাসেমপুর গ্রামে গোপন বৈঠক করেন।

এরপর বৃহস্পতিবার হিজাব বিতর্ক অর্থাৎ ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগ তোলা হয়। এই অভিযোগে এলাকার কয়েকশ’ লোকজন বিদ্যালয়ে এসে আসবাবপত্র ভাঙচুরও করেন।

তিনি বলেন, প্রধান শিক্ষক তার চাকরির ১২ বছর দায়িত্বকালীন লাখ লাখ টাকা বিনিময়ে ১০ শিক্ষকসহ অফিস সহকারী নিয়োগ দিয়েছেন। বিদ্যালয়ে কোনো হিসাব বই তিনি রাখেননি।

সহকারী প্রধান শিক্ষক আমোদিনী পাল জানান, প্রধান শিক্ষক ধরণীকান্ত বর্মণ কয়েক দিনের মধ্যেই অবসরে যাবেন। এ জন্যে গত কয়েক দিন থেকে ধরণীকান্তের কাছে ধীরে ধীরে হিসাব বুঝে নেয়ার জন্যে অনুরোধ জানানো হয়। কিন্তু তিনি হিসাব দিতে রাজি হচ্ছিলেন না।

তিনি দাবি করেন বলেন, প্রধান শিক্ষক তার লাখ লাখ টাকার অনিয়ম আড়াল করতেই চক্রান্ত করে তাকে ফাঁসিয়েছেন।

তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করে প্রধান শিক্ষক ধরণীকান্ত বর্মণ বলেন, বিদ্যালয় পরিচালনা আহবায়ক কমিটির পরামর্শে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও অশালীন ব্যক্য প্রয়োগের অভিযোগ তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পরামর্শে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাৎক্ষণিক অভিযুক্ত সহকারী প্রধান শিক্ষককে শোকজ করা করেছেন।

বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির আহবায়ক মাহাবুব হাসান সুমন জানান, নতুন কমিটি গঠন হয়েছে। এখনো সভা করা সম্ভব হয়নি। সহকারী প্রধান শিক্ষককে নতুন কমিটিকে না বলে শোকজ করতে পারেন কি না, এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে তিনি জানান।

সহকারি প্রধান শিক্ষককে শোকজের বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে মহাদেবপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার হাবিবুর রহমান জানান, বিষয়টি নিয়ে প্রাথমিকভাবে তার সন্দেহ রয়েছে। তবে রবিবার ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করা হবে।

মহাদেবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিজানুর রহমান বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা ও পুলিশ কর্মকর্তাদের নিয়ে ওই এলাকায় যান। সহকারী প্রধান শিক্ষক এবং কয়েকজন ছাত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা ওই এলাকাবাসীকে শান্ত থাকার অনুরোধ করেছি।

এ ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা থাকলেও প্রশাসন তৎপরতায় রয়েছে। তবে সহকারী প্রধান শিক্ষক আমোদিনী পালের বাড়িতে পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে। মহাদেবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ আজম উদ্দিন মাহমুদ বলেন, যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে প্রশাসন সজাগ।

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।