ঢাকা: বিশ্বকাপের ছোঁয়ায় বদলে যাওয়া বাংলাদেশের সামনে পাত্তাই পেলো না পাকিস্তান। ব্যাটে-বলে বাংলাদেশের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণই করেছে তারা। রোববার সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচেও পাকিস্তানকে ৭ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। তাই এক ম্যাচ আগেই তিন ম্যাচের সিরিজ জয় নিশ্চিত করল টাইগাররা। ওয়ানডে ক্রিকেট বাংলাদেশের এটি ১৮তম সিরিজ জয়। দেশের মাটিতে ১৩তম সিরিজ জয়। তবে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এটিই বাংলাদেশের প্রথম সিরিজ জয়।
প্রথম ওয়ানডের মতোই রোববার হেসেছিল তামিম ইকবালের ব্যাট। প্রথমে ব্যাট করে ৬ উইকেটে ২৩৯ রান করে পাকিস্তান। জবাবে তামিমের সেঞ্চুরিতে রান তাড়া করার বিষয়টি মামুলি হয়ে পড়ে বাংলাদেশের কাছে। ৩৮.১ ওভারে ৩ উইকেটে ২৪০ রান করে ম্যাচ জিতে নেয় মাশরাফির দল। ৭১ বল আগে পাওয়া জয়ে ম্যাচ সেরা হন সেঞ্চুরিয়ান তামিম।
রোববার মিরপুরে তামিম তুলে নিয়েছেন ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ ওয়ানডে সেঞ্চুরি। আর এই সেঞ্চুরি দিয়ে তিনি ছুঁয়ে ফেলেছেন সাকিবকে। তারা দুজন এখন যৌথভাবে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সেঞ্চুরিয়ান। এই অর্জনেই শেষ নয়। বাংলাদেশের হয়ে তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে ওয়ানডেতে ব্যাক টু ব্যাক সেঞ্চুরি করেছেন তামিম। এর আগে ২০০৬ সালে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে শাহরিয়ার নাফীস, ২০১৫ বিশ্বকাপে মাহমুদ উল্লাহ রিয়াদ পরপর দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি (ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড) করেছেন। শুক্রবার প্রথম ওয়ানডেতে ১৩২ রান করেছিলেন তামিম।
২৪০ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে ব্যাট হাতে পাক বোলারদের তুলোধুনো করেছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। পাঁচবার একই ওভারে তিনটি করে চার মেরেছেন তারা। এর মধ্যে চারবার ছিল পরপর তিন বলে চার। সৌম্য সরকার, তামিম ও মুশফিক এই ব্যাটিং শৈলী দেখিয়েছেন।
দলীয় ২২ রানে সৌম্য সরকার আউট হন জুনায়েদ খানের বলে। তিনি ১১ বলে ১৭ রান করেন। এরপর দ্বিতীয় উইকেটে জুটি বাধেন তামিম ও মাহমুদ উল্লাহ। তারা ৭৮ রান যোগ করেন। ১৭ রান করে মাহমুদ উল্লাহ বোল্ড হন আজমলের বলে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরে আজমলের এটি প্রথম উইকেট। প্রথম ম্যাচের মতোই তৃতীয় উইকেটে দলের হাল ধরেন তামিম ও মুশফিক। তাদের জুটিতে নির্বিঘ্নেই জয়ের পথে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। তারা ১১৮ রানের জুটি গড়েন। মুশফিক পূর্ণ করেন ২২তম হাফ সেঞ্চুরি। দলকে জয় থেকে ২২ রান দূরে রেখে আউট হন মুশফিক। তিনি ৭০ বলে ৬৫ রান (৮ চার, ১ ছয়) করেন।
হাফ সেঞ্চুরি করেছিলেন আত্মবিশ্বাসী তামিম মাত্র ৩১ বলে। পাক বোলারদের বেধড়ক পিটিয়ে হাফ সেঞ্চুরি করেন তিনি। তবে হাফ সেঞ্চুরির পর কিছুটা খোলসবন্দী হয়ে পড়েছিলেন তামিম। তাই সেঞ্চুরিটা তার এসেছে ১০৮ বলে। সাকিবের সঙ্গে বাকি পথটা পাড়ি দিয়েছেন তিনি স্বরূপেই। আজমলের বলে একটি সিঙ্গেল নিয়ে বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করেন সাকিব। তামিম ১১৬ বলে অপরাজিত ১১৬ রান করেন। যেখানে ১৭টি চার ও একটি ছক্কা ছিল। সাকিব অপরাজিত ৭ রান করেন। পাকিস্তানের জুনায়েদ খান, রাহাত আলী ও আজমল একটি করে উইকেট নেন।
এর আগে টস জিতে ইনিংসের সাতটা ওভার ভালোই ব্যাটিং করেছিল পাকিস্তান। নতুন বলে মাশরাফি, তাসকিনকে সহজেই সামলেছেন আজহার আলী ও সরফরাজ। তবে পাকিস্তানি ওপেনারদের দৃঢ়তার খুঁটি ভেঙে দিয়েছেন রুবেল হোসেন। অষ্টম ওভারে নিজের প্রথম বলেই রুবেল ফেরান সরফরাজ আহমেদকে (৭)। স্লিপে দারুণ ক্যাচ ধরেন সৌম্য সরকার। পরের ওভারেই আরাফাত সানি বোল্ড করেন মোহাম্মদ হাফিজকে (০)। উইকেটে স্থায়ী হতে পারেননি ফাওয়াদ আলমও। বল হাতে নিয়েই সাকিব ফেরান পাক অধিনায়ক আজহার আলীকে। মুশফিক অসাধারণ ক্যাচ নেন উইকেটের পেছনে। আজহার ৩৬ রান করেন। ১৭তম ওভারের পঞ্চম বলে নাসির বোল্ড করেন ফাওয়াদ আলমকে (০)। দলীয় ৭৭ রানে রিজওয়ান (১৩) সাকিবের বলে এলবির ফাঁদে পড়লে পঞ্চম উইকেট হারায় পাকিস্তান।
দ্রুত পাকিস্তানের ইনিংস শেষের আশা জেগেছিল তখন। কিন্তু প্রতিরোধ গড়েন হারিস সোহেল ও সাদ নাসিম। তাদের জুটিটাও জমে গিয়েছিল। ষষ্ঠ উইকেটে তারা ৭৭ রান যোগ করেন। বাংলাদেশকে ব্রেক থ্রু এনে দেন অধিনায়ক মাশরাফি। ইনিংসের ৩৯তম ওভারের শেষ বলে হারিস সোহেলের রিটার্ন ক্যাচ নেন তিনি ফলো থ্রোতে। ক্যারিয়ারের ১৫০তম ওয়ানডেতে মাশরাফির এটি প্রথম উইকেট। হারিস সোহেল ৪৪ রান করেন।
ক্যারিয়ারের অভিষেকে শুক্রবার শূন্য রানে আউট হওয়া সাদ নাসিম তুলে নেন প্রথম হাফ সেঞ্চুরি। সপ্তম উইকেটে ওয়াহাব রিয়াজের সঙ্গে জুটি গড়েন এই তরুণ। তারা শেষ ১১ ওভারে যোগ করেন ৮৫ রান। শেষ পর্যন্ত এই জুটি আর ভাঙতে পারেনি বাংলাদেশ। ওয়াহাব রিয়াজ তুলে নেন দ্বিতীয় হাফ সেঞ্চুরি। সাদ নাসিম ৯৬ বলে অপরাজিত ৭৭ রানের (৬ চার, ১ ছয়) দায়িত্বশীল ইনিংস খেলেন। ওয়াহাব রিয়াজ ৪০ বলে অপরাজিত ৫১ রান (৫ চার, ২ ছয়) করেন। বাংলাদেশের পক্ষে সাকিব ২টি, রুবেল, নাসির, আরাফাত সানি ও মাশরাফি ১টি করে উইকেট পান।
by