জি কে শামীমের সুন্দরী নায়িকার তালিকায় যারা ছিলেন

ডেস্ক

‘টেন্ডার কিং’ জি কে শামীম র‌্যাবের হাতে ধরা পর থেকেই একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ পাচ্ছে। নিজের মনোরঞ্জন থেকে শুরু করে টেন্ডার বাগিয়ে নিতে ব্যবহার করতেন সময়ের আলোচিত মডেল, অভিনেত্রীদের। উচ্চ পদস্থ বিভিন্ন কর্মকর্তারা শামীমের পাঠানো তালিকা দেখেই বাছাই করে নিতেন মডেল, নায়িকাদের। জিজ্ঞাসাবাদে জি কে শামীম ও যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া ডিবি পুলিশের কাছে এসব তথ্য স্বীকার করেছেন বলে সূত্রে জানা গেছে।


শামীম জানায়, অনেকে কর্মকর্তারাই টাকার সঙ্গে নারীসঙ্গ চাইতো। পাঁচ তারকা হোটেলে কক্ষের ব্যবস্থাও করতে হতো। শামীমের সঙ্গে সখ্যতা অর্ধশতাধিক সুন্দরী তরুণীর। এরমধ্যে এক ডজনেরও বেশি পরিচিত নায়িকা ও মডেল। টেন্ডার বাগিয়ে নিতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, নেতাদের কাছে পাঠানো হতো তাদের।

দেশের বাইরের পার্টিতে নিয়মিত উপস্থিত থাকতেন যুবলীগ দক্ষিণের শীর্ষ এক নেতা। কখনও কখনও হাজির হতেন ঢাকা মহানগর যুবলীগের সাবেক প্রভাবশালী এক নেতা ও সংসদ সদস্য। বেশ কয়েক পার্টি হয়েছে থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায়। পার্টিতে পশ্চিমা পোশাকে হাজির হতেন সুন্দরীরা। মাদকে বুঁদ হয়ে সুন্দরীদের মধ্য থেকে যাকে খুশি কাছে টেনে নিতেন। দেশের মধ্যে গুলশান ও বনানীর একটি তারকা হোটেল ও কাকরাইলের একটি হোটেল ব্যবহার করা হতো একান্তে সময় কাটানোর জন্য।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৫ কোটি টাকার টেন্ডার বাগিয়ে নিতে সন্ত্রাসীদের পাশাপাশি কয়েক নায়িকাকে ব্যবহার করেন জি কে শামীম। মোটা অঙ্কের টাকার পাশাপাশি সংশ্লিষ্টরা এসব নায়িকা-মডেলদের চাইতেন। এরমধ্যে এক নায়িকা রয়েছেন। জি কে শামীম তাকে নিয়েই বেশি সময় কাটাতেন। যুবলীগের এক প্রভাবশালী নেতাও এই নায়িকাকে ডাকতেন। ওই নেতার কাছেও পাঠিয়ে দেয়া হতো তাকে। পার্টিতে তাল মিলিয়ে এ্যালকোহল পান করেন এই নায়িকা। প্রকাশ্যেই শামীমকে তুমি বলে সম্বোধন করেন। শামীমের সঙ্গে পরিচয়ের পর দ্রুত ভাগ্য পরিবর্তন হতে থাকে খুলনার এই মেয়ের। শামীমের দরবারের আর্শীবাদের বদৌলতে রাতারাতি বদলে যায় তার আর্থিক অবস্থা। ২০১৪ সালে তার ঢাকাই চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে। যিনি অভিষেকেই মেরিল-প্রথম আলো শ্রেষ্ঠ নবীন শিল্পী হিসেবে পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন লাভ করেন। এই নায়িকা গুলশানে একটি ফ্যাশন হাউজ ও ধানমন্ডিতে একটি রেস্টুরেন্টের মালিক হয়েছেন। পাশাপাশি হয়েছেন প্রযোজক। ডেন্টাল কলেজের প্রাক্তন এই ছাত্রী অভিনয় ছাড়াও ভারত-বাংলাদেশের যৌথ প্রযোজনায় আত্মপ্রকাশ করেন প্রযোজক হিসেবে। অভিনয় করেছেন ভোজপুরি চলচ্চিত্রেও। পাঁচটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন এই নায়িকা।

শামীমের প্রতিটি টেন্ডারে মোটা অঙ্কের ভাগ পেতেন যুবলীগের দক্ষিণের এক শীর্ষ নেতা। ওই নেতার নিজেরও ছিলো সুন্দরী কানেকশন। যদিও তার ঘনিষ্ঠরা জানান, কাউকে ডাকতে হয় না। স্বেচ্ছায় হাজির হন সুন্দরীরা। ওই শীর্ষ নেতার হয়ে এই অপরাধ সাম্রাজ্য দেখাশোনা করতেন মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। তাদের দরবারে প্রায়ই হাজির হতেন পরিচিত এক মডেল, উপস্থাপিকা। অবশ্য চারটি চলচ্চিত্রেও দেখা মিলেছে এই মডেলের। এখন তার যাত্রাপথ চলচ্চিত্র কেন্দ্রিক। নৃত্যে তার রয়েছে ভালো দখল। ওয়ার্ল্ড ডান্স পারফরম্যান্সে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হয়ে পারফর্ম করেছেন তিনি। আলোচিত এই মডেলের একটি সেলফি বেশ আলোচিত হয়েছিলো। সেলফিতে তার সঙ্গে ছিলো বনানীর রেইনট্রি হোটেলে ধর্ষণের ঘটনায় অন্যতম আসামি নাঈম আশরাফ। নায়ক শাকিব খানের সঙ্গে নায়িকা হিসেবে অভিনয় করার ইচ্ছে ছিলো এই মডেল উপস্থাপিকার। সেই ইচ্ছে পূরণ করতে হাজির হয়েছিলেন ওই নেতার দরবারে। ঘনিষ্ঠ মুহূর্ত শেষে দাবি জানিয়েছিলেন শাকিবের সঙ্গে মুভিতে অভিনয় নিশ্চিত করার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই চলচ্চিত্রটি আর নির্মাণ হয়নি। বর্তমানে টিভি নাটক ও সিনেমার কাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় করছেন এ নায়িকা।

সূত্রমতে, এই দরবারের নেতাদের উৎসাহে দশম জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছিলেন এক নায়িকা। ২০০২ সালে সপ্তম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় চলচ্চিত্রে আগমন ঘটে তার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। অশ্লীল জগতের নায়িকা হিসেবে অনেকের মধ্যে একজন হিসেবে পরিচিতি রয়েছে তার। চলচ্চিত্র প্রযোজনায় নিজেকে নিয়োজিত করেছেন, নিজস্ব প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের চেয়ারপারসন তিনি। তার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা। আজ থেকে কয়েক বছর আগে শীর্ষ ওই নেতার দরবারে বেশ কদর ছিলো এই নায়িকার। দরবার থেকে ডাক না এলেও নিজ থেকেই যোগাযোগ রক্ষা করার চেষ্টা করেন এই নায়িকা। তবে দরবারের নতুনদের আগমনে ঈর্ষা কাজ করতো পুরাতনদের মধ্যে।

এই সাম্রাজ্যের প্রমোদ সঙ্গী হিসেবে পরিচিত আরেক নায়িকা। রূপালি পর্দায় আসার পূর্বে তিনি গুলশান এভিনিউ, রঙের মেলা, বনবালা ও পণ্ডিতের মেলার মত টিভি নাটকে কাজ করেছেন। ২০১৪ সালে রোজার ঈদে একটি চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তার রূপালি পর্দায় অভিষেক ঘটে।চলচ্চিত্রটির জন্য তিনি ‘সেরা নবীন অভিনয়শিল্পী’ বিভাগে মেরিল প্রথম আলো পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে তার অভিনীত দ্বিতীয় চলচ্চিত্র মুক্তি পায়। ২০১৬ সালের ১৮ মার্চ ও ২ এপ্রিল দুটি মুক্তি পায়। অভিনয়ের পাশাপাশি তাকে দেখা গিয়েছে মডেলিংয়ে। তিনি ব্রিটল বিস্কুট ও প্রাণ ফ্রুটোর বিজ্ঞাপনচিত্রে মডেল হিসেবে কাজ করেছেন। এছাড়া তিনি আসিফের গানের মিউজিক ভিডিওতে মডেল হয়েছেন। শীর্ষ নেতার দরবারে তাকে ডাকা হতো প্রায়ই। দরবারের ডাক এলে যে কাজই থাকুক তা ফেলে ছুটে যেতেন। দরবারের ডাককে আর্শীবাদ মনে করতেন এসব নায়িকা, মডেলরা।

‘টেন্ডার শামীম’ নামে পরিচিত জি কে শামীম গ্রেপ্তারের পর জানা যায়, তিনি নিজেই ১৪টি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার ঠিকাদারি করছেন। ক্ষমতার পটপরিবর্তনে যুবদল থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দেয়া শামীম নিজেকে পরিচয় দিতেন যুবলীগের সমবায় সম্পাদক হিসেবে।

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।