গ্রেড উন্নীত হলেও শিক্ষকদের নেই উচ্ছ্বাস বরং ক্ষুব্ধ

Image

নিজস্ব প্রতিবেদক,১১ফেব্রুয়ারীঃ
প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন গ্রেড ১৪ ও ১৫তম থেকে ১৩তম গ্রেডে উন্নীত করেছে সরকার। রবিবার এ সংক্রান্ত আদেশ জারি হয়। কিন্তু গ্রেড উন্নীত হলেও শিক্ষকদের কোনো উচ্ছ্বাস নেই বরং ক্ষুব্ধ হয়েছেন তারা। এমনকি আন্দোলনের কথাও বলেছেন। তারা বলছেন, গ্রেড উন্নীত করে সহকারী শিক্ষকদের মধ্যেই একপ্রকার বৈষম্য তৈরি করা হয়েছে।

শিক্ষকরা বলছেন, আমরা বেতন বৃদ্ধি নয়, গ্রেড বৈষম্য নিরসনের দাবি জানিয়েছি। প্রধান শিক্ষকদের একধাপ নিচে সহকারী শিক্ষকদের গ্রেড নির্ধারণের জন্য আন্দোলন করেছি। প্রধান শিক্ষকদের বেতন ১১তম গ্রেড থেকে ১০তম গ্রেডে এবং সহকারী শিক্ষকদের বেতন ১৫ ও ১৪তম গ্রেড থেকে ১১তম গ্রেডে উন্নীত করার দাবি করেছিলাম। কিন্তু সরকার আমাদের দাবি মানেনি। গ্রেড উন্নীত করায় নতুন নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের সুবিধা বাড়বে। কর্মরতদের নগণ্য পরিমাণ বাড়বে, কারো কমতেও পারে।

তথ্য অনুযায়ী, এতদিন সহকারী শিক্ষকদের মধ্যে প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরা ১৪তম গ্রেডে (১০ হাজার ২০০ টাকা) এবং প্রশিক্ষণবিহীন ১৫তম গ্রেডে (৯ হাজার ৭০০ টাকা) বেতন পেতেন। তাদের দাবি ছিল ১১তম গ্রেড প্রদান। এই গ্রেডে বেতন স্কেল ১২ হাজার ৫০০ টাকা। শিক্ষকরা বলছেন, তাদের বেতন বৃদ্ধির পরিমাণ খুবই নগণ্য। যা মেনে নেওয়া যায় না। ১৩তম গ্রেডে উন্নীত হওয়ায় তারা ১১ হাজার টাকা স্কেলে বেতনভাতা পাবেন।

শিক্ষকদের অভিযোগ, পদমর্যাদা অনুযায়ী প্রধান শিক্ষকদের নিচের ধাপে সহকারী শিক্ষকদের অবস্থান হলেও বেতন তিন ধাপ নিচে।

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. শামছুদ্দিন মাসুদ বলেন, একই যোগ্যতায় অন্য মন্ত্রণালয়/অধিদপ্তরের সরকারি চাকরিরত সবার বেতন গ্রেডই তাদের তুলনায় তিন থেকে চার ধাপ ওপরে। ক্ষেত্রবিশেষে শিক্ষকদের চেয়ে কম শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে অন্য মন্ত্রণালয়/অধিদপ্তরে সহকারী শিক্ষকদের তুলনায় বেশি বেতনে চাকরি করেন।

প্রধান শিক্ষকের গ্রেড উন্নীত সংক্রান্ত মামলা চলমান রয়েছে। প্রধান শিক্ষকরা ১১তম গ্রেড থেকে ১০তম গ্রেডে উন্নীত করার জন্য উচ্চ আদালতে মামলা করেন। আদালত শিক্ষকদের পক্ষে রায় প্রদান করেন। কিন্তু সরকার পক্ষ ঐ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করলে প্রক্রিয়াটি ঝুলে যায়। এ কারণে আদালতে বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত প্রধান শিক্ষকরা ১১তম গ্রেডেই বেতন পাবেন।

শামছুদ্দিন মাসুদ বলেন, গ্রেড উন্নীত করায় শিক্ষকদের বেতন কমার আশঙ্কা আছে। তিনি বলেন, উচ্চ ধাপে বেতন পুনর্নির্ধারণ করলে দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত শিক্ষকদের বেতন সামান্য বাড়বে। তা ২০০, ৫০০ টাকা হতে পারে। নিম্নধাপে বেতন পুনর্নির্ধারণ অনেকের বেতন কমবে।

শিক্ষক নেতারা জানিয়েছেন, এতদিন প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের মধ্যে বৈষম্য ছিল। এবার বৈষম্য নিরসনের কথা বলে তাতে নিয়োগ বিধি ২০১৯ এর তপশিল ২(গ) এর শর্ত জুড়ে দিয়ে খোদ সহকারী শিক্ষকদের মধ্যেই বৈষম্য সৃষ্টি করা হচ্ছে।

বর্তমানে প্রাথমিকে নিয়োগের জন্য সব শিক্ষকের (নারী ও পুরুষ) শিক্ষাগত যোগ্যতা ডিগ্রি পাশ নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু এর আগে নারীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ ছিল এসএসসি/এইচএসসি। ফলে আগের বিধিমালায় যারা নিয়োগ পেয়েছেন তাদের গ্রেড উন্নীত হবে না।

গ্রেড উন্নীতকরণে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে একইসঙ্গে তুলে দেওয়া হয়েছে প্রশিক্ষণ আর প্রশিক্ষণবিহীনদের গ্রেড পার্থক্য। এরও প্রতিবাদ জানিয়েছেন শিক্ষকরা।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে সারাদেশে ৬৫ হাজার ৯০২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এগুলোতে ৩ লাখ ৭৫ হাজার সহকারী শিক্ষক ও ৪২ হাজার প্রধান শিক্ষক রয়েছেন।

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।