কলেজ নয়, অধ্যক্ষের আগ্রহ চেম্বারে

Image

কুষ্টিয়া মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের ২০ অক্টোবর যোগদান করেন রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান খান। কুষ্টিয়ায় বদলি হলেও তিনি রাজশাহীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত রোগী দেখেন। এ কারণে তিনি নিজ কর্মস্থল কুষ্টিয়া মেডিক্যালে নিয়মিত অফিস করেন না।

এ দিকে, কলেজের সর্বোচ্চ অভিভাবকের এমন অনিয়মে ব্যাহত হচ্ছে প্রশাসনিক ও শিক্ষা কার্যক্রম। অব্যবস্থাপনা ও তদারকির অভাবে নষ্ট হচ্ছে শিক্ষার মান।

কলেজ সূত্রে জানা গেছে, অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমান রাজশাহীর পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে প্রতিদিন বেলা আড়াইটা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত রোগী দেখেন। সপ্তাহে এক দিন কুষ্টিয়ায় এসে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রে স্বাক্ষর করে আবার চলে যান।

আর অধ্যক্ষের না আসার সুযোগে অফিস সহকারী জামান আহমেদসহ কয়েকজনও নানা অনিয়ম করে যাচ্ছেন। অধ্যক্ষ নিজে যেহেতু থাকেন না, তাই তাঁদেরও কিছু বলছেন না তিনি। অফিস সহকারীসহ অন্যদের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থী ভর্তির সময় সরকারি ও বেসরকারি খাতে বাড়তি অর্থ আদায়ের অভিযোগ রয়েছে।

শিক্ষকেরা বলছেন, প্রাইভেট প্র্যাকটিসের ক্ষেত্রে তেমন কোনো বিধিনিষেধ না থাকলেও একজন অধ্যক্ষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। দায়িত্ব পালনে তাঁর অবহেলায় প্রশাসনিক ও শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হয়।

গত ২৭ মার্চ, বুধবার সকাল ৯টায় কুষ্টিয়া মেডিক্যাল কলেজে গিয়ে অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমানকে পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া কলেজে বেলা ১টা পর্যন্ত শিক্ষকদের উপস্থিতিও কম দেখা গেছে। কখন এলে অধ্যক্ষকে তাঁর অফিসে পাওয়া যাবে—জানতে চাইলে কয়েকজন কর্মচারী জানান, অধ্যক্ষ রাজশাহী থেকে আসেন, আবার চলে যান। সর্বশেষ গত ২৬ মার্চ কলেজের ইফতার মাহফিলে এসেছিলেন।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিতে গত ২৮ মার্চ বিকেলে রাজশাহীর পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে এ প্রতিবেদক দেখতে পান, চতুর্থ তলার ৪১৮ নম্বর কক্ষের সামনে রোগীদের ভিড়। কক্ষের দরজায় লেখা আছে অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান খান, ইউনিট প্রধান, মেডিসিন ইউনিট-৪, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল, রাজশাহী। রোগী দেখার সময় প্রতিদিন দুপুর ২টা ৩০ মিনিট থেকে রাত ১০টা। এ সময় কথা হয় কক্ষের বাইরে রোগীর সিরিয়াল দেওয়ার দায়িত্বে থাকা রতনের সঙ্গে। তিনি জানান, শুক্রবার ছাড়া সপ্তাহের সব দিন রোগী দেখেন মাহবুবুর রহমান।

কুষ্টিয়া মেডিক্যাল কলেজের কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মচারী জানান, নতুন অধ্যক্ষ যোগদানের পর থেকে সপ্তাহে এক দিন রাজশাহী থেকে কুষ্টিয়ায় এসে অফিস করেন। এ ছাড়া রাষ্ট্রীয় কোনো অনুষ্ঠান থাকলে তখন আসেন। সে সময় জরুরি প্রয়োজনীয় কাগজপত্রে স্বাক্ষর করে যান।

কলেজ সূত্রে জানা গেছে, কুষ্টিয়া মেডিক্যালে চিকিৎসক ও শিক্ষকদের জন্য ডিজিটাল হাজিরা ব্যবস্থা থাকলে অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমানের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। আর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে প্রেষণে আসা অফিস সহকারী জামানের বিরুদ্ধেও রয়েছে নানা অভিযোগ।

কলেজে অনুপস্থিত থাকার ব্যাপারে অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ ও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের থিসিস পরীক্ষা নিতে যেতে হয়, এ ছাড়া মন্ত্রণালয়ে অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের কাজ থাকে।’ তিনি দাবি করেন, ‘আমি ম্যাক্সিমাম দিনই থাকি। আমি না থাকলে শিক্ষকেরা উনাদের মতো কাজ করে নিতে পারেন।’

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।