করোনা ভাইরাস দূর্বল হয়ে পড়ছে -নোবেলজয়ী রসায়ন বিজ্ঞানী

করোনা-শিক্ষাবার্তা

শিক্ষাবার্তা ডেস্ক,২৪ মার্চঃ
মানব সভ্যতাকে আতঙ্কে ফেলে দেয়া করোনা ভাইরাস দুর্বল হয়ে পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী মাইকেল লেভিট। ‘করোনা মহামারি’র সমাপ্তি সন্নিকটে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

রসায়নে ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে নোবেলজয়ী মাইকেল লেভিট একজন জীব পদার্থ বিজ্ঞানী। ফেব্রুয়ারিতেই তিনি করোনা ভাইরাসের প্রকোপ কমে আসার লক্ষণের কথা জানিয়েছিলেন। যা চীনে সত্য বলে প্রমাণিত হয়।

মাইকেল লেভিট ইসরায়েলের বাণিজ্যবিষয়ক পত্রিকা ক্যালকালিস্টকে একটি সাক্ষাৎকার দেন। যা ১৩ মার্চ অনলাইনে প্রকাশিত হয়। লেভিট বর্তমানে ইসরায়েলের তেল-আবিবে বসবাস করছেন। তার ফ্লু জাতীয় সমস্যা দেখা দেয়ায় ফোনে ওই সাক্ষাৎকার নেয়া হয়।

তার স্ত্রী সসান ব্রস চীনা শিল্পের একজন গবেষক। দেশটিতে করোনা ছড়িয়ে পড়ার সময় তিনি চীনের বন্ধুদের কাছে বিষয়টি জানতে চান।

মাইকেল লেভিট জানান, তারা যখন তাদের পরিস্থিতির ভয়াবহতা বর্ণনা করলেন, তখন আমি বিষয়টি গভীরভাবে ভেবে দেখলাম। আমি আশাবাদী হওয়া যায় এমন কিছু খুঁজতে লাগলাম। হুবেই প্রদেশে যখন দিনে ৩০ ভাগ মানুষ আক্রান্ত হচ্ছিল তখন তা ছিল খুব আতঙ্কজনক পরিসংখ্যান। এই হারে চলতে থাকলে ৯০ দিনে গোটা পৃথিবীর মানুষ তাতে আক্রান্ত হতো। আমি একজন ইনফ্লুয়েঞ্জা বিশেষজ্ঞ নই। কিন্তু আমি সংখ্যা ও তার বৃদ্ধি বিশ্লেষণ করতে পারি।

লেভিট জানান, ফেব্রুয়ারির ১ তারিখ তিনি দেখেন সেখানে ১৮০০ নতুন রোগী রয়েছে। ষষ্ঠ দিনে তা ৪৭০০ তে পৌঁছায়। কিন্তু ফেব্রুয়ারির ৭ তারিখে এসে নতুনভাবে আক্রান্তের সংখ্যা কমতে থাকে এবং তা অব্যাহত ছিল। আরও এক সপ্তাহ পর উল্লেখযোগ্যভাবে কমতে থাকে মৃতের সংখ্যাও। আক্রান্তের পরিসংখ্যানের এই নাটকীয় পরিবর্তনের একটি মধ্য বিন্দু পাওয়া যায় যা থেকে এই মহামারির পরিসমাপ্তির একটা আশা করা যায়। আমি তখন এই উপসংহারে পৌঁছাই যে চীনে দু সপ্তাহের মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি হবে, এখন সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা আরও কমে আসছে।

লেভিট এর ব্যাখ্যায় বলেন, যদি কোনো ব্যক্তি ব্যাংকে তার জমা দেয়া অর্থের বিপরীতে প্রথম দিন ৩০ শতাংশ সুদ পান, আর দ্বিতীয় দিন পান ২৯ শতাংশ, তাহলেই বুঝতে পারা যায় যে ওই ব্যক্তি শেষ পর্যন্ত খুব বেশি পাবেন না।

লেভিটের এই বক্তব্য দ্রুতই চীনা ভাষায় তার বন্ধুরা অনুবাদ করে ছড়িয়ে দেন। তার বক্তব্য তখন চীনের মানুষের মনে আশা জাগায়। তার বক্তব্যের সত্যতা প্রমাণিত হওয়ায় রাতারাতি তিনি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন সেখানে। চীনের বিভিন্ন মাধ্যমে এরপর তার সাক্ষাৎকারও প্রকাশিত হয়। তিনি বলেন, মার্চের শেষে চীন থেকে এ ভাইরাস নির্মূল হয়ে যাবে।

এ বিষয়ে লেভিট আরও বলেন, চীনে শুরুতে প্রত্যেক কভিড-১৯ রোগী দিনে দুই দশমিক দুজনকে আক্রান্ত করেছে। এই উচ্চমাত্রার সংক্রমণ বড় বিপর্যয়ের দিকেই নিয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু যখন আক্রান্তের হার কমতে থাকল এবং এখন দিনে আক্রান্তের সংখ্যা শূন্যের কাছাকাছি।

তিনি ব্যাংকের উদাহরণ টেনে আবার বলেন, যদি সুদ কমতে থাকে, তখনো কিন্তু টাকা উপার্জন অব্যাহত থাকবে। যে আসল জমা ছিল তা কিন্তু কমবে না। এতে সুদের জোগান যোগ হবে খুব ধীরে। রোগের ক্ষেত্রেও এ পরিসংখ্যান আলাপ করা যায়, কারণ মানুষ তখন প্রতিদিনের নতুন নতুন আক্রান্তের খবরে খুব আতঙ্কে থাকে। অথচ প্রকৃত চিত্র হচ্ছে আক্রান্তের সংখ্যা কমে আসা মানে এর বিস্তৃতি এক দিন নাই হয়ে যাবে।

লেভিট যুক্তি দেখিয়ে বলেন, ক্রমবর্ধমান মডেল অনুযায়ী আপনি ভেবে থাকেন যে নতুন লোক প্রতিদিনই আক্রান্ত হবে, কারণ আপনি প্রতিদিনই নতুন মানুষের সঙ্গে দেখা করছেন। কিন্তু যদি আপনি নিজের সামাজিক পরিসর চিন্তা করে দেখেন, আপনার আসলে প্রতিদিন একই মানুষদের সঙ্গে মূলত দেখা হয়। আপনার নতুন মানুষদের সঙ্গে দেখা হয় ধরা যাক পরিবহনে। কিন্তু বাসেও (পরিবহনে) কিছুদিন পর দেখা যাবে হয় সব যাত্রী আক্রান্ত অথবা তারা সেরে উঠেছেন।

আরও একটি কারণ দেখিয়ে তিনি বলেন, আপনি সব সময় সবাইকে জড়িয়ে ধরেন না। এ ছাড়া আপনি যার একটু ঠান্ডা লেগেছে তাকে এড়িয়ে চলবেন- যা আমরা এখন করছি। যত অসুস্থতা দেখা যাবে তত সংক্রমণ এড়াতে আপনি সচেতন হবেন। এভাবে প্রতি তিন দিনে একজন ব্যক্তি দেড়জনকে আক্রান্ত করতে পারবে, যা ক্রমে আরও কমে আসবে।

তিনি আরও যোগ করে বলেন, আমরা জানি চীন প্রায় পুরোটাই কোয়ারেন্টাইনে ছিল, মানুষ শুধু জরুরি কেনাকাটা করতে বের হয়েছে এবং অন্যকে এড়িয়ে চলেছে। উহানে, যেখানকার হুবেই তে সর্বোচ্চ আক্রান্ত ধরা পড়ে, সেখানে সবার আক্রান্ত হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু আক্রান্ত হয়েছে মাত্র ৩ শতাংশ। প্রমোদতরী ডায়মন্ড প্রিন্সেস এ করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ২০ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়নি।

এর কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, অনেক মানুষের শরীরই এই রোগ প্রতিরোধের জন্য উপযুক্ত ছিল।

তবে ইতালির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইতালিতে সামাজিক সম্পর্ক খুব উষ্ণ, তাদের খুব সমৃদ্ধ সামাজিক ইতিহাস আছে। যে কারণে, যিনি আক্রান্ত হবেন তাকে সুস্থদের থেকে দূরে রাখতে হবে।

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।