ইবি ভিসি হতে মরিয়া প্রো-ভিসি ॥ অস্থিতিশীল ক্যাম্পাস॥ হামলায় আহত ৫॥ মামলা দায়ের

আশরাফুল ইEB Photo 01সলাম, কুষ্টিয়া ॥ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ভিসি প্রফেসর ড. আবদুল হাকিম সরকারকে ভিসি পদ থেকে সরিয়ে ভিসি হতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন প্রো-ভিসি ড. শাহিনুর রহমান। পদ রক্ষা ও পদ দখলকে কেন্দ্র করে দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছে শিক্ষক, কর্মকর্তা,কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা। ভিসি পন্থীরা প্রো-ভিসির বিরুদ্ধে ও প্রো-ভিসি পন্থীরা ভিসির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে পাল্টাপাল্টি বিভিন্ন অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন, মানববন্ধন, থানায় জিডি, উকিল নোটিশসহ বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করে আসছে।
ভিসি হওয়ার পায়তারা হিসেবে প্রো-ভিসির ইন্ধনে ৫কর্মকর্তার উপর সসস্ত্র হামলা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শাপলা ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ড. আনোয়ার হোসেন। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার বাদি হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন বলি ইবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শোণিত কুমার গায়েন নিশ্চিত করেছেন। মামলা নং ০১/০৪/০৫/২০১৬। এতে ক্যাম্পাস আবারও আস্থিতিশীল হয়ে উঠছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সুত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি প্রফেসর ড. আবদুল হাকিম সরকারের বিরুদ্ধে ইউজিসি গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন দাখিলের পর ভিসির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে তার পদচ্যূতির গুঞ্জন ওঠার পর প্রো-ভিসি ড. শাহিন ভিসি পদ দখলের জন্য ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল করাসহ বিভিন্ন পায়তারা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এতে একদিকে ভিসি সমর্থিত শিক্ষক, কর্মকর্তারা ভিসির পদচ্যুতিতে যাতে বর্তমান প্রো-ভিসি ড. শাহিন ভিসি না হতে পারে, সে জন্য তারা গত ২০এপ্রিল প্রো-ভিসি বিরুদ্ধে আর্থিক ও একাডেমিক জালিয়াতি, নারী কেলেঙ্কারী, জামায়াত-শিবির সম্পৃক্ততা, ক্যাম্পাস অস্থিতিশীলকারীসহ ১১টি অভিযোগ উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য, শিক্ষা মন্ত্রনালয়, সচিব শিক্ষা মন্ত্রনালয়, প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-০১ ও মহাপরিচালক-০২ প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে প্রদান করেন।
অপরদিকে ভিসি ড. হাকিমকে দূর্নীতিবাজ আখ্যা দিয়ে তার অপসারনের জন্য প্রো-ভিসি পন্থী শিক্ষক, কর্মকর্তারাও বিভিন্ন মন্ত্রনালয়ে ধরনা দিয়ে বেড়াচ্ছেন।
এছাড়াও গত ২৩ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি সমর্থিত আওয়ামী প্রগতিশীল শিক্ষক সংগঠন শাপলা ফোরামের সভাপতি প্রফেসর ড.মাহবুবুল আরফিন,বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি প্রফেসর ড. জাকারিয়া রহমান, ড. রাশিদ আশকারীসহ অর্ধশতাধিক শিক্ষক, কর্মকর্তা প্রো-ভিসির বিরুদ্ধে লিখিতভাবে ১১ টি অভিযোগ তুলে সাংবাদিক সম্মেলন করেন।
এদিকে প্রো-ভিসি পন্থী শাপলা ফোরামের সভাপতি প্রফেসর ড. কামাল উদ্দিন ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের আহব্বায়ক প্রফেসর ড. মাহবুবুর রহমান ভিসি পন্থী শিক্ষকেদর ওই সংবাদ সম্মেলনে মিথ্যা তথ্য পরিবেশনের প্রতিবাদে কুষ্টিয়া জেলা প্রেস ক্লাবের সামনে ও ক্যাম্পাসে প্রো-ভিসির স্ত্রীর নেতৃত্বে নারী সমাজের ব্যানারে একটি মানববন্ধন করেন। মানববন্ধনে তারা ভিসির অপসারণ দাবি করেন এবং ভিসি পন্থী ওই আ’লীগ শিক্ষকদের অশিক্ষিত, মূর্খ, দুর্নীতিবাজ ভিসির দোষর বলে আখ্যা দেন। ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত করার হুমকি দেন।
এছাড়াও প্রো-ভিসির বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করায় ভিসি পন্থী ওই ৫ শিক্ষকের নাম উল্লেখ করে তাদের বিরুদ্ধে গত ২৫ এপ্রিল ইবি থানায় জিডি করেন প্রো-ভিসি। এরপর ২৮ এপ্রিল উকিল নোটিশও পাঠায় প্রো-ভিসি। যেখানে ৫০ কোটি টাকার মানহানি মামলার উল্লেখ আছে।
এদিকে গত শুক্রবার প্রো-ভিসির অনিষ্ট থেকে নিরাপত্তারজন্য ভিসি পন্থী শিক্ষকরা ইবি থানায় একটি পাল্টা জিডি করেছেন।
এরপর গত শনিবার প্রো-ভিসি পন্থী শিক্ষক, কর্মকর্তারা ভিসির দূর্নীতি ও সেচ্ছাচারিতার অভিযোগ এনে তার অপসারন দাবিতে একটি পাল্টা সংবাদ সম্মেলন। সেখান থেকে তারা ভিসি বিরোধী মানববন্ধন ঘোষনা করে।
পূর্ব ঘোষনা অনুযায়ী গত ৩ মে ভিসি প্রফেসর ড. আবদুল হাকিম সরকারের অপসারন দাবিতে প্রো-ভিসি ড. শাহিনুর রহমানে সমর্থকরা মানববন্ধন করে।
গত মঙ্গলবারের ভিসি বিরোধী ওই মানবন্ধনের পাল্টা কর্মসূচী হিসেবে বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় ভিসি পন্থী বঙ্গবন্ধু পরিষদ ও শাপলা ফোরামের শিক্ষক কর্মকর্তারা প্রো-ভিসি ড. মো. শাহিনুর রহমানের অপসারণের দাবি করে পাল্টা মানববন্ধন কর্মসূচির ডাক দেয়।
এসময় প্রো-ভিসি ড. শাহিনের প্রত্যক্ষ ইন্ধনে তার ব্যক্তিগত পিএস আব্দুল হান্নান,কর্মকর্তা ট্রেজারার অফিসের সহকারী রেজিস্ট্রার আলমগীর হোসেন, পরিবহন অফিসের আসাদুজ্জামান মাখন ও রুহুল আমিন, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসের রাশেদ চৌধুরী, অর্থ ও হিসাব শাখার চ্যাকা জাহাঙ্গীর, মানবিক অনুষদের ডিন অফিসের গিয়াস উদ্দিন প্রেনেডের নেত্বতে ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি গ্রুপের নেতাকর্মরা শতাধিক অস্ত্রধারী বহিরাগতদের নিয়ে ভিসি পন্থী শিক্ষক কর্মকর্তাদের মানবন্ধনে সসস্ত্র হামলা চালায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি পন্থী বঙ্গবন্ধু পরিষদ ও শাপলা ফোরামের সাধারন সম্পাদক ড. আনোয়ার হোসেন ও ড. মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত একটি লিখিত বিবৃতিতে এসব উল্লেখ করেছেন।
এতে আরো উল্লেখ করেছেন, অতিদ্রুত এই হামলার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তি দাবি করছি। আর শিক্ষক কর্মকর্তাদের উপর হামলার মদদতাদা প্রো-ভিসির অপসারন করে ক্যাম্পাসে পরিবেশ ঠিক রাখার জন্য সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
হামলায় ভিসি সমর্থক কর্মকর্তা ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের সদস্য মীর মোর্শেদ খান, এস্টেট শাখার পরিচালক হারুন-উর রশিদ, ভিসির পিএস মনিরুল ইসলাম, রেজিস্ট্রারের পিএস আনোয়ার ও রেজাউল নামের ৫ কর্মকর্তা আহত হয়। আহতদের বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে প্রাথমিক চিকিৎসা শেসে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে পাঠনো হয়েছে।
পরে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অনুষদ ভবনের সামনে ভিসি পন্থী শিক্ষক কর্মকর্তারা প্রো-ভিসিকে চোর আখ্যা দিয়ে তার পদত্যাগ দাবিতে মানববন্ধন করেন। সেখানে প্রায় তিন শতাধিক শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীও শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
এই ঘটনায় ক্যাম্পাসে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে, যে কোন মুহুর্তে ক্যাম্পাসে বড় ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। পরিবেশ নিয়ন্ত্রনে রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ ও র‌্যাব মোতায়েন করা হয়েছে।
প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান বলেন, ক্যাম্পাসের স্বাভাবিক কার্যক্রম অব্যহত রয়েছে। তাই সবাই যাতে নির্বিঘেœ মত প্রকাশের স্বাধীনতা পায় সেজন্য প্রক্টরিয়াল বডি ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কাজ করে যাচ্ছে। যারা অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করবে তাদের বিরুদ্ধে সাথে সাথে এ্যাকশন নিব। এছাড়াও হামালার ঘটনার সাথে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইতমধ্যে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে হয়েছে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. শাহিনুর রহমান বলেন- ভিসি ঢাকাতে অবস্থান করায় আমি ভারপ্রাপ্ত ভিসির দায়িত্বে ছিলাম। হামলার বিষয়িটি উল্লেখ করে তিনি বলেন-আমার কথা কেউ শোনে নি। আর আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তুলে মানববন্ধন করা হচ্ছে সেগুলো মিথ্যা বানোয়াট।

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।