সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষাদানে আনন্দ মৌসুমী ও শাকিলার

‘প্রাইভেট পড়লে মেলা টেহার দরহার। গরিব মানুষ এত টেহা কইত্তে আনুম। দুই আপা হুনলাম পোলাপানরে বিনামূল্যে পড়ায়, তাই আমিও পড়তে আসি।’ এভাবেই বলছিল শিক্ষার্থী আরমান। তার মতো আরো অনেকের ভরসা ওই দুই আপু- মৌসুমী ও শাকিলা।

গুরুদয়াল সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মৌসুমী ও শাকিলা পড়ালেখা করছেন হারুয়ায় অবস্থান করে। নিজেরা পড়ার পাশাপাশি চিন্তা করেন যারা অর্থাভাবে পড়তে পারে না তাদের জন্য কিছু করার। মাত্র একজন ছাত্র নিয়ে শুরু করেছিলেন, এখন সংখ্যাটা প্রায় অর্ধশত।

মৌসুমী ও শাকিলা নিজের প্রচেষ্টায় কিশোরগঞ্জের অসহায় সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে জেলা শহরের হারুয়ায় একটি বাড়িতে বিনামূল্যে পাঠদান কার্যক্রম শুরু করেছেন। গেল ইংরেজি নববর্ষের দিনটি তারা পালন করলেন ‘সমাজসেবা ফাউন্ডেশন’ নামে একটি সংগঠনের সূচনা করে। এ সংগঠনের মাধ্যমে চালু করেন ‘বিনামূল্য শিক্ষাদান কর্মসূচি’ সেবা। একজন ঝরে পড়া শিশুকে দিয়ে কেক কেটে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয় পাঠদানের। ঘরোয়া পরিবেশে আবৃত্তি, গান, সূরা ও গজল প্রতিযোগিতারও আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠান শেষে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষার প্রতি উৎসাহী করা হয়।

শাকিলা জানান, প্রতিদিন বিকেলে তারা সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পাঠদান করেন। এ থেকে আনন্দ পান তিনি। অসহায় ও গরিব শিক্ষার্থীদের পড়াতে পারার আনন্দই আলাদা।

ঝরে পড়াদের শিক্ষাদানের মূল উদ্যোক্তা মৌসুমী তার এই যাত্রার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, ‘দিনটি ছিল ১ নভেম্বর। বাসা থেকে বের হয়ে ভাবছিলাম আজ যেখানেই একটি পথশিশু পাব, সেখানেই শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেব। কলেজের মাঠে পা দিতেই আমার দিকে আসা একটি মেয়ে বলতে লাগল, ‘আপু, পেটে খুব ক্ষুধা। কয়েকটা টেহা দিবেন কিছু খাইতাম।’ আমি সেই পথশিশুকে টাকা দিলাম আর জানতে চাইলাম পরিবারে কে আছে। তার কেউ নেই। পথই বাড়ি, পথই ঘর। ভিক্ষা করে খাবার জোটে।’ সেদিনই শুরু বিনামূল্যে শিশুদের মধ্যে পাঠদান। বর্তমানে আমাদের কাছে ৩৪ জন শিক্ষার্থী পড়ছেন।’

স্থানীয় এলাকাবাসী ও সুধী মহল দুই শিক্ষার্থীর এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে। সচেতন মহলের প্রত্যাশা, সরকারি ও সচ্ছল ব্যক্তিদের সহযোগিতা পেলে তাদের পাঠদানস্থলটি একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে। পথশিশুরা ফিরে পাবে তাদের ঠিকানা, সবার এটাই ভাবনা।’

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।