সাম্প্রদায়িক শিক্ষায় নত জানু দুই বাংলা

সরিতা আহমেদ : ‘বৃহত্তর বাংলাদেশ ‘ গঠনের যে প্রয়াস জেহাদি-সন্ত্রাসীরা এদ্দিন মানুষ মেরে, বোমা ফাটিয়ে করে আসছিল, তার মান্যতায় মমতাজ বানু সরকার কয়েক কদম এগিয়ে।

মানুষকে পঙ্গু করে দিতে প্রধান মারটা দিতে হয় তার শিক্ষায়। কচি মগজে পাখি-পড়ার মতো করে ঢুকিয়ে দিতে হয় সন্ত্রাসের বিষাক্ত সীসা। জঙ্গিবাদ হলে তা খুলে-আম।

আর সরকারি স্তরে হলে … হ্যাঁ , অবশ্যই ধর্ম-নিরপেক্ষতার ‘সুগার কোটিং’ দিয়ে। নইলে পাবলিক খাবে না, উলটে সংবিধানের ঝাঁজে হাঁচতে হাঁচতে উল্টাবে।

কিছুদিন আগে এই ফেসবুকেই বাংলাদেশের বর্ণপরিচয়ের ভয়ংকর ইসলামাইজেশান, ছবিসহ দেখেছিলাম। হাসিনা-জামাত-মোল্লাতন্ত্রের এই ঘৃণ্য মুসলিমিফিকেশান এবার পশ্চিমবঙ্গেও ঘটতে চলেছে তৃণোমূলী শিক্ষাবিদদের হাত ধরে। ভাষা সন্ত্রাসের মাধ্যমে। তোষণের রাজনীতি যে কতোটা নীচ হতে পারে তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ আজকের পশ্চিমবঙ্গ। স্কুলের পাঠ্যপুস্তকও রাজনীতির বিষাক্ত ছোবল থেকে রেহাই পায়নি।

Rainbow= ‘রামধনু’ ব্যকরণ সম্মতভাবেই এতোদিন ছিল।

এখন নাকি তাতে বাবরিকাণ্ডের ‘বদবু’ উঠছে ; তাই ‘রাম’ কেটে ‘রং’ ভরা হলো (রংধনু)।

নাহ, বাবরি মসজিদ বা অযোধ্যার তাতে কী এল গেল জানি না, কিন্তু ১০০% সরলতায় বাচ্চাদের সরল মনে ইচ্ছাকৃত ঢুকিয়ে দেওয়া হলো মানবজগতের এক ঐতিহাসিক ঘৃণ্য সাম্প্রদায়িকতার বীজ।

একটা বাচ্চা, এডাল্ট হওয়ার পরে নিজ বোধবুদ্ধি দিয়ে যে ইতিহাসটা জানতে পারতো, বোঝার চেষ্টা করতে পারতো ঠিক-বেঠিক ইত্যাদি, সেটা ক্লাস সিক্স-সেভেনেই সুচতুরভাবে জানিয়ে দেওয়া হলো। সৌজন্য — ধর্ম-নিরপেক্ষতা।

তারমানে ‘রাম’ একটা ধর্ম-অনিরপেক্ষ শব্দ ।

তাহলে রাম-নামের লোকগুলোকে কী অনিরপেক্ষ নামের দোষে পশ্চিমবঙ্গ থেকে ছাঁটাই করা হবে! নাকি এক্কেবারে ‘মরা’!! প্রশ্ন জাগে। সাথে বিতর্কও দানা বাঁধে।

Light Blue : Sky colour = আকাশি রং।খুব সহজ এই অর্থকে নতুন বইয়ে বলা হচ্ছে, ‘আসমানি রং’।

ইচ্ছাকৃত ফারসি, ঊর্দু শব্দ জোর করে বাংলার পরিবর্তে ঢোকানোর চেষ্টা খুব সাধুবাদ যোগ্য?

আজকের ছাত্র খুব সরল মনেই প্রশ্ন তুলবে… ”রামছাগল ‘কে তাহলে কি এবার থেকে ‘রংছাগল’ বলবো স্যার?” অকাট্য যুক্তি। খণ্ডাবে কোন শ্লা …
প্রশ্ন জাগে, আমরা, বা আমাদের মা-দিদিমা-বাপ-দাদারা যে মানে বই পড়ে জীবন কাটালাম .. তারা কি তাহলে ধর্ম-নিরপেক্ষ ছিলেন না? আমরা কি ভুল পড়েছি?

নাকি আমরা সব ধর্ম উন্মাদ?? প্রশ্নটা শিক্ষক-শিক্ষাবিদ সবার কাছে ।

এর সপক্ষে, শাক দিয়ে মাছ, থুড়ি, কাঁকড় ঢাকার মরিয়া চেষ্টায়, কিছু পণ্ডিত ইন্টারনেটের ‘বাংলা উইকি’ থেকে ‘মানে’ দেখাচ্ছে।
আজকের দিনে সামান্যতম নেট ঘাঁটা অভ্যাস হলে এটা জানা উচিৎ, ইন্টারনেটের বাংলা ওয়েবপেজের প্রধান কারবারিই হলো বাংলাদেশ (রাষ্ট্র-ভাষা বাংলা)।

সেখানে ‘৮০ সালের আগে থেকে এই ভাষার নেট ভার্সান নিয়ে নানা গবেষণা চলছে। প্রচুর সফটওয়ার হয়েছে। ফলে তাদের জাতীয় সিলেবাস অনুযায়ী উচ্চারণ ও অর্থের কপি-পেস্ট দেওয়া উইকিপিডিয়াই এখনো নেটিজেন-দের কাছে যাচ্ছে।

একটা শরিয়া-অধ্যুষিত, মুসলিম প্রধান দেশের ওয়েবপোর্টালকেই ‘বাংলা ব্যকরণে’র একমাত্র আকর ভেবে নিলে বলতেই হয়, পবিত্র সরকারের মস্তিষ্কের পবিত্রতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। কারণ তাঁর মতো শিক্ষাবিদদের কলম ও মগজ বিক্রিই শুধু হয়নি, বিকৃতও হয়েছে ষোল আনা।
রাজনীতি এখন স্কুলপাঠ্যে ঢুকে বর্ণ পরিচয় শিক্ষা- ভাষা শিক্ষার ইতিহাসে লজ্জাজনক অধ্যায় রচনা করছে।

ব্যক্তিগতভাবে আমি ছাত্রদের বলবো “বইয়ে মানে ভুল দিয়েছে। তাড়াহুড়ায় প্রিন্টিং মিস্টেক হয়েছে সরকারের। ‘রংধনু আর আসমানি’ কেটে বাংলা অর্থ হিসাবে ‘রামধনু’ আর ‘আকাশি রং’ লিখৱ।”

হ্যাঁ, দায়িত্ব নিয়েই বলছি … ছাত্রদের মধ্যে নিজ মুখে সরকার-প্রণোদিত জঘন্য সাম্প্রদায়িক ষড়যন্ত্রের মন্ত্র শিখিয়ে দিতে পারি না।

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।