‘এখানে ভর্তি হতে পারলাম না, চ্যান্সেলর হইয়া আসছি’

হাস্যরসে ঢাবি সমাবর্তন মাতালেন রাষ্ট্রপতি

ডেস্ক ,৪ ফেব্রূয়ারী : বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে লিখিত বক্তব্যের বাইরে প্রায় সময়ই রসিকতা করেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সমাবর্তনেও তার হাস্যরসে মাতলো শিক্ষার্থীরা। কখনও মুচকি হাসি, কখনও অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে উপস্থিত দর্শক শ্রোতারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য হিসেবে তিনি রাষ্ট্রপতি আজ শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে সবাইকে এই হাস্যরসে মাতিয়ে তোলেন। শুরুতেই তিনি বলেন, আল্লাহর কী লীলাখেলা বুঝলাম না, যে ইউনিভার্সিটিতে আমি ভর্তি হতে পারলাম না, সেই ইউনিভার্সিটিতেই আমি চ্যান্সেলর হইয়া আসছি। শুধু এই ইউনিভার্সটি না, বাংলাদেশের যতগুলি পাবলিক, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি আছে, সবগুলোরই চ্যান্সেলর।
হাসির রোল থামতে না থামতেই রাষ্ট্রপতি আবার বলেন, ১৯৬১ সালে আমি ম্যাট্রিক পাস করেছি, তাও থার্ড ডিভিশনে। আই এ পাস করেছি, এটাতোও এক সাবজেক্টে অর্থাৎ লজিকে রেফার্ড। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন ভর্তি হতে আসলাম, তখন ভর্তি তো দূরের কথা, ভর্তির ফরমটা পর্যন্ত আমাকে দেওয়া হল না। বন্ধু, বান্ধব অনেকে ভর্তি হল। রাষ্ট্রপতি তার বক্তব্যে প্রায় সময়ই পরিশিলীত বাংলার সঙ্গে কিশোরগঞ্জের আঞ্চলিক ভাষা মিলিয়ে কথা বলেন। ঢাবির সমাবর্তনেও এর ব্যতিক্রম হয়নি।
এক সময় সমাবর্তনের গাউন পড়ার খায়েশ থাকলেও এখন তা আর ভালো লাগে না-এমন বক্তব্য দিয়েও আবার সবাইকে আনন্দ দেন রাষ্ট্রপতি। তিনি বলেন, চ্যান্সেলর হিসেবে প্রায়ই সবখানে আমাকে যেতে হয়। তবে এই ক্যাপ আর সিনথেটিক গাউন পরে বসে থাকা খুব কঠিন। কোন বাতাসই ঢুকতে পারেনা। আর যদি গরমের দিন হয় তাহলে তো অবস্থা কাহিল। আমি আমাদের সন্মানীত ভিসি সাহেবকে অনুরোধ করেছিলাম, শীতকালে এই সমাবর্তন আয়োজন করতে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বিভিন্ন হলে রাত্রিও যাপন করতাম। এমন কোনো হল নাই, যেখানে ঢুকি নাই বা থাকি নাই। অবশ্য রোকেয়া হলে ঢুকিও নাই, থাকিও নাই। সুযোগ ছিল না। তবে রোকেয়া হলের আশপাশে ঘোরাঘুরি করসি কম না। তিনি বলেন, বন্ধু-বান্ধব তখন যারা ইউনিভার্সিটিতে পড়ে, তখন তারা কনভোকেশন, কনভোকেশন ক্যাপ, গাউন ইত্যাদি নিয়ে গল্প করে। আমরা তখন কলেজে পড়লেও সেটাও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ছিল। কিন্তু যারা অনার্স, মাস্টার্স পড়ত তাদেরকেই শুধু কনভোকেশনে ডাকা হত। ফলে কনভোকেশনের ক্যাপ, গাউন পড়ার সুযোগ ছিল না, তবে মনে বড় খায়েশ ছিল।
আবদুল হামিদ রাজনীতিতে জড়িয়েছেন ছাত্র জীবনেই। এরপর ১৯৭০ সালের জাতীয় নির্বাচনে কিশোরগঞ্জের একটি আসন থেকে আওয়ামী লীগের টিকিটে জাতীয় পরিষদের সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। এরপর থেকে ২০০৮ সালের নির্বাচন পর্যন্ত টানা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। এর মধ্যে তিনি জাতীয় সংসদের স্পিকারও নির্বাচিত হয়েছেন একাধিক বার।
রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন আবদুল হামিদ। তার রাজনীতিতে হাতেখড়ির কথা উল্লেখ করে সদা হাস্য এই রাজনীতিক বলেন, ছাত্র রাজনীতির সাথে ওই সময় থেকেই আমি জড়িত ছিলাম। যখন এখানে ভর্তি হতে পারলাম না, নিজ জেলায় দয়ালগুরুর কৃপায় গুরুদয়াল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়ে গেলাম। তবে ৬১ সালে আইয়ুববিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে, বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে ঢাবিকে যেহেতু অনুসরণ করতাম, যার জন্য প্রায়ই ঢাকায় আসতে হত, আসতাম।

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।