চার বছরেও বেসরকারি শিক্ষকদের এসিআর চালু হয়নি, বদলি নীতিমালার সভা কাল

নিজস্ব প্রতিবেদক | ০২ এপ্রিল, ২০১৯

আদেশ জারির চার বছরেও চালু হয়নি বেসরকারি স্কুল-কলেজ-মাদরাসা শিক্ষকদের এসিআর। ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে তৎকালীন শিক্ষাসচিব মো. নজরুল ইসলাম খান এসিআরের আদেশ জারি করেন। কিন্তু ওই সময়ের শিক্ষামন্ত্রী ও বাড়ৈ সিন্ডিকেট এসিআর চালুর উদ্যোগ আটকে রেখেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। 

২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে মন্ত্রণালয়ের জারি করা আদেশ অনুযায়ী সংশ্নিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা এই এসিআর লিখবেন। তাতে প্রতিস্বাক্ষর করবেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক। সারাদেশে মাউশির ৯ জন আঞ্চলিক পরিচালক রয়েছেন। আর প্রতিষ্ঠান প্রধানদের (অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, প্রধান শিক্ষক) এসিআর লিখবেন মাউশির আঞ্চলিক পরিচালক। তাতে প্রতিস্বাক্ষর করবেন মাউশির কলেজ ও প্রশাসন শাখার পরিচালক। এরপর তা সরকারের কাছে (মাউশিতে) জমা দেওয়া হবে। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের জবাবদিহি নিশ্চিত করা ও যোগ্যদের মূল্যায়নের জন্য এ উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বেসরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের এসিআর চালু করা গেলে পদোন্নতিসহ শিক্ষকদের সার্বিক উন্নয়নে তা কাজে লাগানো হবে। বেতন স্কেলের পরবর্তী উচ্চতর ধাপে যেতেও তা প্রয়োজন হবে। মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বেসরকারি শিক্ষকদের সংখ্যা বিপুল হওয়ায় তাদের এসিআরের বিষয়টি কাগজে-কলমে না করে অনলাইনে ‘ই-এসিআর’ করার কথা ভাবছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ জন্য পৃথক নতুন একটি সফটওয়্যার তৈরির কথা ভাবা হচ্ছে। আর সহযোগী অধ্যাপকদের এমপিওভুক্তির জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হবে।

জানা গেছে, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা এখন থেকে চাকরির ৬ ও ১০ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড পাবেন। আগে শিক্ষকরা চাকরির ৮ ও ১৬ বছর পূর্তিতে দুটি টাইমস্কেল পেতেন। অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেল চালুর সময় টাইমস্কেল উঠিয়ে দেওয়া হয়। এতে শিক্ষকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিলেন। এ জন্য এখন চাকরির ১৬ বছরের মধ্যে অন্তত দুটি ধাপে উচ্চতর স্কেল চালু করা হচ্ছে। পাশাপাশি বেসরকারি কলেজের পদোন্নতির সোপান তৈরি করতে সহযোগী অধ্যাপকদেরও এমপিওভুক্ত করার কথা ভাবা হচ্ছে। এ জন্য গত বছরের ১২ জুন জারি করা এমপিওভুক্তির নীতিমালা ও জনবল কাঠামোতেও প্রয়োজনীয় সংশোধন আনা হচ্ছে। 

বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের বদলি ও এসিআর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য গত ২৭ মার্চ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব (বেসরকারি মাধ্যমিক)  মো. জাবেদ আহমেদ সভায় সভাপতিত্ব করেন। সভায় আগামী ৩ এপ্রিলের মধ্যে বেসরকারি শিক্ষকদের বদলির খসড়া নীতিমালা তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে মাউশিকে।

জানতে চাইলে অতিরিক্ত সচিব মো. জাবেদ আহমেদ বলেন, ‘এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামোতে কিছু সুনির্দিষ্ট সংশোধনী আনা হচ্ছে। বেসরকারি শিক্ষকদের পদোন্নতি, এসিআরসহ নানা বিষয়ে পরিবর্তন আসবে। চাকরির ১৬ বছরে দুটি উচ্চতর গ্রেড শিক্ষকরা পাবেন। বেসরকারি শিক্ষকদের বদলির জন্য নীতিমালা করা হচ্ছে। সহযোগী অধ্যাপকদের এমপিওভুক্ত করার বিষয়টিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাগবে। এ জন্য প্রস্তাব তৈরি করে পাঠানো হবে।’

বদলি নীতিমালা হচ্ছে: বেসরকারি শিক্ষকদের বদলির জন্য নীতিমালা তৈরি করছে মাউশি। এতে বদলির ক্ষেত্রে প্রার্থীরা নিজ জেলায় ফিরতে অগ্রাধিকার পাবেন। তবে একই প্রতিষ্ঠানে কমপক্ষে তিন বছর না থাকলে কেউ বদলির যোগ্য হবেন না।

এতদিন বেসরকারি শিক্ষকদের বদলি প্রথা চালু না করার পক্ষে সরকারি কর্মকর্তাদের যুক্তি ছিল, এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা বেতন-ভাতা অনেক কম পান। বাড়ি ভাড়া পান নামকাওয়াস্তে কিছু টাকা। এ অবস্থায় নিজ জেলা থেকে অনেক দূরে কাউকে বদলি করলে নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যোগ দিয়ে বাড়ি ভাড়া করে থাকা তার জন্য কষ্টকর হবে। কিন্তু এখন সময় বদলে গেছে। সরকারি শিক্ষকদের মূল বেতনের শতভাগ পান এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা। চিকিৎসা ও বাড়ি ভাড়াও আগের চেয়ে বেড়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব আয়ও রয়েছে। এ ছাড়া সম্প্রতি এনটিআরসিএর সুপারিশ পাওয়া প্রায় ৪০ হাজার শিক্ষকের অধিকাংশকেই নিজ জেলার বাইরে চাকরিতে যোগ দিতে হচ্ছে। তারা যাতে নিজ জেলায় ফেরত আসতে পারেন, সেদিকটাও বিবেচনায় রয়েছে সরকারের। সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষকদের পক্ষ থেকেই জোরালো দাবি উঠেছে বদলির নিয়ম চালু করার।

Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।