জালিয়াতি করে চাকরি, মোংলা বন্দরের ৩১২ জন কর্মচারীকে দুদকে তলব

নিজস্ব প্রতিবেদক,৪ আগষ্ট: জাল সার্টিফিকেট, কোটা ও বয়সসীমা জালিয়াতি করে মোংলা বন্দরে চাকরি নেওয়া ৩১২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এসব কর্মচারীরা কীভাবে অনিয়ম করে চাকরি নিয়েছে সে ব্যাপারে দুদক তদন্ত নেমেছে বলেও জানা গেছে।

এদিকে এ ঘটনায় মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমোডর ফারুক হাসান অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘অনিয়ম করায় যোগ্যতা অনুযায়ী মেধাবীদের চাকরিতে সুযোগ না হওয়ায় ইতোমধ্যে বন্দরের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে।’

অভিযোগ উঠেছে, অর্থ বাণিজ্যর মাধ্যমে অনিয়ম করে বন্দরের বিভিন্ন কর্মস্থলে কয়েক’শ লোকজনকে চাকরি পাইয়ে দেয় বন্দর কর্মচারীদের সংগঠন (সিবিএ)। বন্দর কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন কর্মস্থলে নিয়োগের ক্ষেত্রে ধারাবহিকভাবে সিবিএ হস্তক্ষেপ করায় এসব অনিয়ম হয়ে আসছে বলে জানান চাকরি প্রত্যাশীদের অবিভাবকরা।

মোংলা বন্দরের ব্যবসায়ী ও একজন চাকরি প্রত্যাশীর অবিভাবক শাজাহান সিদ্দিকী বলেন, ‘গত কয়েক বছর ধরে মোংলা বন্দরে যেভাবে নিয়োগ বাণিজ্য চলছে, তাতে আমাদের ছেলেমেয়েরা ভালো রেজাল্ট করেও চাকরি পাবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘বন্দরের সিবিএ নেতাদের কাছে জাল সার্টিফিকেট, বয়স নেই, কাজের অভিজ্ঞতা নেই এমন জাল সনদের সঙ্গে মোটা অঙ্কের টাকা ঘুষ নিয়ে গেলেই অনভিজ্ঞদের চাকরি হয়ে যায়।’ এতে কোনোদিন মেধাবীদের চাকরি হবেনা বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।

এদিকে জাল সার্টিফিকে দিয়ে চাকরি নেওয়া মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের নিজস্ব জলযান এম টি সারথী-২ এর ভান্ডারি (রাধুনী) ফজলুল হক, এম টি মেঘদূতের হাবিবুর রহমান এবং সরোয়ার মুন্সি বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমাদের সিবিএ’র সংগঠনের নেতা পল্টু ও সাকিবকে জিজ্ঞেস করেন। তারা আমাদের হয়ে কথা বলবেন।’

সরোয়ার মুন্সি মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ শ্রমিক কর্মচারী সংঘ রেজিঃ ১৯৫৭ (সিবিএ) এর যুগ্ন সম্পাদক মতিউর রহমান সাকিবের ভগ্নিপতি। সাকিবের ছোট ভাই মহসিন হোসেন বাদশাও জন্ম সনদ জাল করে বয়স কমিয়ে সিনিয়র আউটডোর অ্যাসিসন্টে হিসেবে চাকরি নেন বলে অভিযোগ আছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বন্দরের হারবার, মেরিন এবং যান্ত্রিক ও তড়িৎ বিভাগের একাধিক কর্মচারীরা বলেন, মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ শ্রমিক কর্মচারী সংঘ রেজিঃ ১৯৫৭ (সিবিএ) এর সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম পল্টু এবং যুগ্ন সম্পাদক মতিউর রহমান সাকিব-বন্দরের কর্মচরীর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হলেই তাদের কর্মস্থলে চাকরি ফেলে বেসামাল হয়ে ওঠেন। তারা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির তালিকা ধরে নিয়োগ বাণিজ্যে নেমে পড়েন বলে গুঞ্জন রয়েছে।

তবে পল্টু ও সাকিব এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে করা অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট। আমরা বন্দরের নিয়োগ কমিটিকে সুস্থভাবে কাজ করতে আরও সহযোগিতা করি।’

তারা আরও বলেন, ‘বন্দরে ২০১৩ ও ১৪ সালে যারা নিয়োগ পেয়েছেন তাদেরকে ডেকে হয়রানি করছে দুর্নীতি দমন কমিশন । তিন-চার বছর ধরে চাকরিতে থাকা অবস্থায় তাদের ডেকে আবার লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নেওয়ার যৌক্তিকতা নেই।’

এদিকে বৃহস্পতিবার (২ জুলাই) পর্যন্ত অনিয়ম করে চাকরি পাওয়ায় বন্দরের ৩২ জন কর্মচারীকে দুদক ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

এ প্রসঙ্গে খুলনার দুর্নীতি দমন কমিশনের ডেপুটি অ্যাসিস্টেন্ট ডাইরেক্টর নীল কমল পাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জাল সার্টিফিকেট, কোটা ও বয়সসীমা জালিয়াতি করে যারা মোংলা বন্দরে চাকরিতে নিয়োগ নিয়েছেন, তদন্তের স্বার্থে তাদের ডাকা হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘দুদকের তদন্তকারী কর্মকর্তা ফয়সাল কাদের এসব বিষয়ে তদন্ত করছেন। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলেই সংশ্লিষ্ট থানায় এজাহার (মামলা) দায়ের করা হবে।

এদিকে বন্দরের পার্সোনাল শাখার একটি সূত্র জানায়, গত ২০১৩ ও ১৪ সালে নিয়োগ পাওয়া ৩১২ জন কর্মচারীর অধিকাংশের বিরুদ্ধে অযোগ্যতার অভিযোগ ওঠায় চলতি বছরের জুলাই মাসে দু’দফায় ২৮ জনকে তলব করে পুনরায় পরীক্ষা নিয়েছে দুদক।

সূত্রটি আরও জানায়, বন্দরের নিজস্ব জলযান এম এল গাংচিল, এম টি শিবসা, এম টি সারথী-২, বি এল ভি মালঞ্চ, এম এল ঝিনুক, এম এল উষা, এম টি সারথী-১, এম ভি রুহী, এম এল রাজহংস, এম ভি তৃঞ্ষা, এফ এফ টি অগ্নি প্রহরী, এম এল ময়ীরপঙ্খী, এম এল বলাকা, এম এল পান্না, এম এল, হীরা, এম এল মতি, এম এল অনুসন্ধানী, এম এল উর্মি, ও এম এল মুক্তার “ভান্ডারী” (রাধুনী) ছাড়াও যান্ত্রিক ও তড়িৎ বিভাগের “ক্রেন হেলপার” পদের নব্বই শতাংশ ব্যক্তিই জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগ পেয়েছেন।

Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।