সুগারমিল সংযুক্ত বিদ্যালয়গুলোতে ক্লাস বাদ দিয়ে চলছে কোচিং বাণিজ্য

নাটোরের লালপুর উপজেলার নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলস হাই স্কুলে অতিরিক্ত ক্লাসের নামে বিদ্যালয়ের নির্ধারিত ক্লাস বাদ দিয়ে চলছে কোচিং বাণিজ্য। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গাউছুল আজম, তার পছন্দমত দুই থেকে তিনজন শিক্ষক দিয়ে এ বাণিজ্য পরিচালনা করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর এভাবে প্রতি মাসে অবৈধভাবে আয় করছেন প্রায় লাখ টাকা। এটা শুধু নাটোরের চিত্র নয়। এটা কেরু উচ্চ বিদ্যালয়,দর্শনা জগতী সুগার মিল হাই স্কুল, কলিগঞ্জ সুগার মলি হাই স্কুলসহ দেশের প্রায় সব বিদ্যালয়গুলোতে একই চিত্র।

জানা যায়, বিদ্যালয়টিতে সকাল ৮ টা থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত ক্লাস চলে। তবে অষ্টম ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বেলা পৌনে ১২ টার সময় ছুটি দিয়ে অতিরিক্ত ক্লাসের নামে কোচিং পরিচালনা করে আসছে প্রধান শিক্ষকসহ কয়েকজন শিক্ষক। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে কয়েকজন শিক্ষক বিদ্যালয়ে ছুটির আগে ও পরে প্রতি ব্যাচে ৪০-৬০ জন শিক্ষার্থীকে নিয়ে একাধিক ব্যাচ প্রাইভেট পড়িয়ে আসছেন। অথচ ঐ একই ছাত্র দিয়ে তারা ক্লাসে পড়ান। তখন তাদের পড়া হয়না বলে অতিরিক্ত ক্লাসের নামে কোচিং চালান। মাস শেষে ছাত্র প্রতি নেন ৯০০ থেকে ১০০০ টাকা।

অষ্টম ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীর জানায়, এই দুই শ্রেণির প্রায় দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী পড়ে। বিদ্যালয় চলাকালীন সময়ে তাদের দেড়টা পর্যন্ত ক্লাস না নিয়ে পৌনে ১২ টায় ছুটি দেয়া হয়। এরপর ওই সময় থেকে ২ টা পর্যন্ত কোচিং করানো হয়। অষ্টম শ্রেণির কোচিং ফি ৫শ টাকা এবং পঞ্চম শ্রেণির কোচিং ফি ৩শ টাকা করে নেয়া হয়।

ওই শিক্ষার্থীরা আরো জানায়, গত মে মাস থেকে আর্ট শেখানোর নামে তাদের নতুন আর একটি কোচিং চালু হয়েছে। আর এ জন্য নাটোরের সুজন নামের একজনকে খন্ডকালীন মৌখিকভাবে নিয়োগ দিয়েছে প্রধান শিক্ষক। আর্ট শিক্ষক সপ্তাহে মঙ্গল ও বুধবার দু দিন দুটি ক্লাস নেন। তার প্রতি ১৫ টি ক্লাসের জন্য শিক্ষার্থীদের দিতে হবে মাথা পিছু ৩শ টাকা করে।

আর্টের শিক্ষকের সাথে কথা বলে জানা যায়, এ খাতে আদায়কৃত সমস্ত অর্থ তিনি পাবেন না। তবে কত পাবেন তা তিনি জানাননি। এসব অতিরিক্ত ক্লাসের নামে কোচিং থেকে ওই শিক্ষকরা অবৈধ্যভাবে মাসে প্রায় ১ লাখ টাকা অতিরিক্ত আয় করছে।

এবিষয়ে অভিভাবকরা জানান, ছেলে মেয়েদের কোচিং মৌখিকভাবে বাধ্যতামূলক করে দিয়েছে শিক্ষকরা। বিদ্যালয়ে ক্লাসে আগের মত পড়াশুনা হয়না, এখন বিদ্যালয়টি প্রাইভেট ও কোচিং নির্ভর হয়ে উঠেছে। বিদ্যালয়ের এ কর্মকান্ডে তাঁরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন অভিভাবকরা। তারা দ্রুত এর প্রতিকার দাবি করেন।

এবিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গাউছুল আজম বিদ্যালয়ের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোচিং চালানোর কথা অস্বীকার করলেও ওই ফি নেয়ার কথা স্বীকার করেণ। তিনি জানান, বিদ্যালয়ের ক্লাস শেষে অতিরিক্ত ক্লাস নেয়া হয় আর এর জন্য ওই ফি আদায় করা হয়। তিনি আরো জানান গত সোমবার (৩০ মে) থেকে অতিরিক্ত ক্লাস নেয়াও বন্ধ আছে।

নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসএম আব্দুল আজিজ জানান, বিদ্যালয়ে অতিরিক্ত ক্লাস নেয়ার কথা জানা আছে। কিন্তু বিদ্যালয় চলাকালীন সময়ে ক্লাস বাদ দিয়ে কোচিং চালানোর বিষয়টি তিনি জানেন না, তবে বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।

Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।