স্কুলের শিক্ষক তপু রায় এবং চেয়ারম্যান অলিউর রহমান নয়নকে গ্রেফতার ও শাস্তি’র দাবীতে মানববন্ধন এবং সংবাদ সম্মেলন হয়েছে।
এ ঘটনায় দিনাজপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল জজ আদালতে ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধিত/০৩) আইনের ১০ ধারা ও দন্ডবিধি আইনে ৫১১ ধারায় এবং দিনাজপুর কোতয়ালী থানায় পর্ণোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে পৃথক মামলা দায়ের করা হয়েছে।
২৪ মে দিনাজপুর প্রেসক্লাবের সামনে সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত প্রায় ২ ঘন্টা ব্যাপী মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, নারী নেত্রী ও সদর উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান হাসমিন লুনা, নারী নেত্রী খ্রিষ্টীনা লাভলী দাস, ছবি সিনহা, হাসিনা আক্তার শিউলি, মাসুদা বেগম মুক্তা, রানী ইসলাম প্রমুখ। পরে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আলেয়া বেগম স্বপ্না। বিভিন্ন স্তরের প্রায় ৩ শতাধিক নারী মানববন্ধনে অংশগ্রহন করে। মানববন্ধন চলাকালীন বক্তারা বলেন, শিক্ষকদের উপর ভরসা করেই মেয়েদের স্কুলে পাঠানো হয়। আর সেখানেও মেয়েদের নিরাপত্তা নেই। নারী পিপাসু, লম্পট ও চরিত্রহীন শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে শিশু মেয়েদের (ছাত্রীদের) নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে হবে। এ সব শিক্ষকদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে শাস্তি দিতে হবে।
ঘটনার ভিকটিমের নামসহ ওই ঘটনার নেপথ্য কারণ উল্লেখ যে লিফলেট ছেড়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ।তা নিয়ে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়েছে। বিশেষ করে লিফলেটে ভিকটিমের নাম উল্লেখ করায় প্রতিবাদের ঝড় বইছে। একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ কিভাবে একজন ভিকটিমের নামসহ লিফলেট বাজারে ছাড়ে তা নিয়ে বির্তকের সৃষ্টি হয়েছে।
এ ঘটনার ভিকটিমের নামসহ ওই ঘটনার নেপথ্য কারণ উল্লেখ করে একটি লিফলেট ছেড়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ।
বিশেষ করে লিফলেটে ভিকটিমের নাম উল্লেখ করায় প্রতিবাদের ঝড় বইছে। একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ কিভাবে একজন ভিকটিমের নামসহ লিফলেট বাজারে ছাড়ে তা নিয়ে বির্তকের সৃষ্টি হয়েছে।
স্কুলের অধ্যক্ষের ববাত দিয়ে ওই লিফলেট ছাড়া হলেও এ বিষয়ে অধ্যক্ষ মুখ খুলছেন না। তিনি দেখাও দিচ্ছেন না সাংবাদিকদের। মুঠো ফোনে তাকে পেতে কল দিলেও স্কুলের হিসাব রক্ষক পরিচয়দান কারী একজন নারী অপর প্রান্ত থেকে বলছেন স্যার নেই। স্কুল কর্তৃপক্ষের বাজারে বিলি করাসেই বিতর্কিত লিফলেটটি’র শুধু ভিকটিমের (ছাত্রী) নাম ব্যতি রেখে ছদ্ম নাম দিয়ে নিচে হ্বুহু দেয়া হলো।
শিক্ষক লাঞ্ছনাকারী শিক্ষার্থী নওশীন রানা চৌধুরী’র বহি:ষ্কার সংক্রান্ত রিজ স্কুলের বক্তব্য:
কল্পনা (ছদ্ম নাম) পিতা: সামসুজ্জোহা চৌধুরী, মাতা: সৈয়দা সেলিনা মমতাজ, চলতি ২০১৬ শিক্ষাবর্ষে রিজ স্কুলে ভর্তি হয়। স্কুলের ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থী থাকাকালীন অতি অল্প সময়ের মধ্যেই তার নামে স্কুলের নানা নিয়ম ভঙ্গের অভিযোগ উঠতে থাকে। তন্মধ্যে প্রেম ঘটিত সম্পর্ক (যা ছবি থেকে সনাক্ত করা হয়), নেশা জাতীয় দ্রব্য গ্রহণ ও অন্য সহপাঠীদের উৎসাহী করার মতো ঘটনা ঘটে। এ বিষয়গুলো তার অভিভাবককে ভর্তি ফরমে সরবরাহ করা মোবাইল নম্বরে জানানো হয় এবং এ বিষয়ে সর্তক থাকতে বলা হয়।
এমতাবস্থায়, গত ১৪ মার্চ ২০১৬ খ্রি: তারিখে স্কুলের রুটিন অনুসন্ধানে কল্পনার ব্যাগ থেকে ৩৫০০/- টাকা পাওয়া যায়। স্কুলের নিয়ম অনুযায়ী একজন শিক্ষার্থী সর্বোচ্ছ ১০০/- রাখতে পারে বিধায় সেই টাকা স্কুল কর্তৃপক্ষ রেখে দেয় এবং অভিভাবককে স্কুলে উপস্থিত হতে বলা হয়। সে প্রেক্ষিতে পরদিন ১৬ মার্চ ২০১৬ খ্রি: তারিখে শিক্ষার্থী কল্পনা একজনকে তার বাবা পরিচয় দিয়ে সেই টাকা স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে গ্রহণ করে। কিন্তু পরবর্তীতে তথ্য পাওয়া যায় যে, সে মিথ্যা পরিচয়ে অন্য একজনকে তার বাবা বানিয়ে স্কুলে নিয়ে আসে।
এরকম মিথ্যা পরিচয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষের সাথে প্রতারণা করায় শিক্ষার্থী কল্পনা ও তার অভিভাবককে লিখিত ভাবে সতর্ক করা হয়। একই সাথে পরবর্তীতে যে কোন প্রকার অসদাচরণ স্কুল কর্তৃপক্ষ মেনে নেবেনা এবং তার বিরুদ্ধে স্কুল কর্তৃপক্ষ যে কোন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবে বলে জানানো হয়।
সে প্রেক্ষিতে, স্কুল কর্তৃপক্ষ কল্পনার আচরণ নিয়ন্ত্রনের জন্য বিশেষ দৃষ্টি রাখতে দুইজন শিক্ষক জনাব তপু রায় ও ফয়সল মাহবুব রব্বানি চৌধুরী কে বিশেষ দায়িত্ব দেয়। সে মোতাবেক, উক্ত শিক্ষকগণ তার প্রতি বিশেষ নজর রাখে এবং যে কোন ব্যত্যয় ঘটলেই সাবধান করতে থাকে।
গত ২৫.০৪.১৬ খ্রি: তারিখ আনুমানিক রাত ৮.১৫ থেকে ৮.৩০ ঘটিকায় স্কুলের উক্ত দুইজন শিক্ষক জনাব তপু রায় ও জনাব মোঃ ফয়সল মাহবুব রব্বানি চৌধুরী স্কুল ছুটির পর বাড়ি ফেরার পথে মুন্সিপাড়া বুটিবাবুর মোড়ে পৌছালে হঠাৎ করে কয়েকজন ছেলে তাদের অশ্লিল ভাষায় গালাগালি করে ও শারীরিক ভাবে লাঞ্ছিত করে। এ বিষয়ে সুষ্ঠ তদন্তের প্রয়োজনে স্কুল কর্তৃপক্ষ তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে।
তদন্ত চলাকালীন কল্পনার ফেসবুক-এ (বাদ দেয়া হলো) উক্ত শিক্ষক লাঞ্ছনাকারী বহিরাগত দুইজনকে সনাক্ত করা হয়।
উল্লেখ্য, ঘটনার পরদিন ২৬ এপ্রিল ২০১৬ তারিখে থেকে কল্পনার স্কুলে অনুপস্থিত থাকলে কল্পনা ও তার অভিভাবকদের ২৯ এপ্রিল ২০১৬ তারিখে স্কুলে ডাকা হয়। কল্পনা সব দেখে ও শুনে স্কুল কর্তৃপক্ষের সম্মুখে নিজ মুখে উক্ত ঘটনায় তার সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে। পরবর্তী দিন ৩০ এপ্রিল২০১৬ তারিখে শিক্ষক লাঞ্ছনার জন্য মাফ চাইতে কল্পনার মা ঐ দুই বহিরাগতসহ স্কুল ক্যাম্পাসে আসে। এতে করে নিশ্চিত ভাবে প্রমাণ হয় যে, কল্পনার ঐ শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত ছিল।
এমতাবস্থায় স্কুলের শৃঙ্খলা কমিটির সিদ্ধান্ত এবং আরো প্রায় তিন শতাধিক শিক্ষার্থীর চরিত্রগত ও মানসিক উন্নয়নের স্বার্থে ৩০ এপ্রিল ২০১৬ তারিখে কল্পনাকে রিজ স্কুল হতে বহি:ষ্কার করা হয় এবং বহি:ষ্কার আদেশ ডাকযোগে প্রেরণ করা হয়।
যার প্রেক্ষিতে কল্পনার মা ও বাবা গত এক মাস যাবৎ এলাকার রাজনৈতিক ও সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গদের মাধ্যমে তার সন্তানকে পূণ:ভর্তির জন্য চেষ্টা চালাতে থাকে। স্কুল কর্তৃপক্ষ কোনভাবেই রাজি না হলে তিনি চেয়ারম্যানকে বিশেষ অনুরোধ করেন। কিন্তু চেয়ারম্যান বিষয়টিতে রাজি না হওয়ায় গত ২৫ মে ২০১৬ তারিখে ঘটনার একমাস কল্পনার মা স্কুলের চেয়ারম্যান অলিউর রহমান ও আক্রান্ত শিক্ষক তপু রায় এর বিরুদ্ধে মামলা করে। যা মিথ্যা, বানোয়াট, উদ্দেশ্যপ্রোণোদিত এবং হয়রানিমূলক। আমরা এ মিথ্যা মামলার তীব্র নিন্দা জানাই এবং অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি রাখি।
একই সাথে বহি:স্কৃত শিক্ষার্থী কল্পনা ও শিক্ষকদের প্রহারকারী তার সহযোগীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। আশা রাখছি সম্প্রতি নারায়নগঞ্জে ঘটে যাওয়া শ্যামল কান্তি স্যারের মত শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনা যেন এই দিনাজপুরের মাটিতে না ঘটে।