মহাপরিচালকের সাথে সিদ্ধান্তহীন বৈঠকে হতাশ প্রাথমিকের সহকারি শিক্ষকরা

1নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলমগীর এর সাথে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষকদের অষ্টম জাতীয় বেতন-স্কেলে বেতন-বৈষম্য নিরসনসহ ৫ দফা দাবি নিয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ৫টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত প্রায় তিন ঘন্টা এ বৈঠক চলে। বৈঠকে এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত না হওয়ায় শিক্ষকরা হতাশ হয়ে ফিরে যান।

এ বিষয়টি নিয়ে আজ ২৩ সেপ্টেম্বর সকাল ১০ ঘটিকায় প্রাথমিক সহকারী শিক্ষদের ৫টি সংগঠনের জোট “বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক ঐক্য জোটের নেতৃবৃন্দ জোটের পুরানা পল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক জরুরী বৈঠকে বসে।

ঐক্যজোটের সমন্বয়ক জনাব আতাউর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে জোট নেতৃবৃন্দ গতকাল রাত ৯ টা পর্যন্ত মহাপরিচালকের সাথে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে বেতন বৈষম্য নিরসনের কোন নিশ্চয়তা না পেয়ে হতশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন । ঐক্যজোটের শিক্ষক নেতৃবৃন্দ বলেন। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের পক্ষ থেকে আলোচনার ডাক পেয়ে এই ঈদেও সময়ে অবর্ণনীয় যানজট ও হাজার টাকা বাস ভাড়া দিয়ে অনেক দূর থেকে ঢাকায় ছুটে এসেছি জীবনযাত্রা নির্বাহ ও সামাজিক মর্যাদার একটা ভাল সংবাদ পাওয়ার জন্য । কিন্তু ডিজি মহোদয় বেতন-বৈষম্য নিরসনের কোন নিশ্চয়তা দিতে পারেননি। শুধু আশ^াস দিয়েছেন যে, আমাদের দাবী গুলো নিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রনালয়ের সচিবের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত পরে জানাবেন। এ অবস্থায় শূন্য হাতে অনিশ্চিত ভবিষ্যত নিয়ে সীমাহীন কষ্টের ঈদযাত্রা করতে হবে। বাড়ি ফেরার টিকিট না পাওযায় যানবাহনে দাঁড়িয়ে বাড়ি ফিরতে হবে। বিনিময়ে সাথে নিয়ে যেতে হবে বেতন-বৈষম্য নিরসনের অনিশ্চিত আশ^াস।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালকের ডাকে সাড়া দিয়ে শিক্ষকরা গত মঙ্গলবার বিকেলে প্রায় তিন ঘন্টা আলোচনা করেন। মহপরিচালক মোহাম্মদ আলমগীর শিক্ষকদের সমস্ত দাবি দাওয়া শুনেন এবং শিক্ষকদের প্রতিটি দাবি যৌক্তিক তা স্বীকার করেন। কিন্তু এ বিষয়ে তিনি কোন আশার বানী শোনাতে পারেননি। তবে শিক্ষকদের দাবিগুলো লিখিত আকারে নেন। এসব বিষয় নিয়ে আজ বুধবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিবের সাথে বৈঠক করে পররর্তী সিদ্ধান্ত জানাবেন বলে শিক্ষকদের আশ^াস দেন। এছাড়া চলমান শিক্ষকদের আন্দোলন না করার জন্য অনুরোধ করেন।

ঐক্যজোট নেতা ও বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহাম্মাদ শামছুদ্দীন, বলেন প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকদের সবাই অবহেলার চোখে দেখেন। বেতন-বৈষম্য নিরসন নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর মাননীয় অর্থমন্ত্রী পাবলিক বিশ^বিদ্যালয় ও কলেজ শিক্ষকদের ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রীর সাথে বৈঠক করলেও প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকদের চরম বেতন-বৈষম্য নিয়ে কোন আলোচনা করেননি। এমনকি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রীর সাথে আলোচনার কোন আগ্রহও দেখাননি।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রীও আজ পর্যন্ত সহকারী শিক্ষকদের বেতন-বৈষম্য নিয়ে জোরালো কোন পদক্ষেপ নেননি। এই অবস্থায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালকের অনিশ্চিত আশ^াসে আমরা আমাদের যৌক্তিক দাবি আদায়ের আন্দোলন বন্ধ করতে পারি না।

প্রাথমিক সহকারি শিক্ষক সমাজের সাধারণ সম্পাদক নুরে আলম সিদ্দিকি রবিউল বলেন, দাবি আদায়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব না আসা পর্যন্ত আমাদের চলতি কর্মসূচি অনুয়াযী প্রতি বৃহস্পতি বার অর্ধদিবস ও প্রতি শনিবার পূর্ণদিবস কর্মবিরতি অব্যহত থাকবে। এছাড়া আগামী ৫ অক্টোবরের মধ্যে দাবি বাস্তবায়ন না করলে ৬ অক্টোবর থেকে লাগাতার কর্মবিরতি পালন করা হবে। এছাড়া ১৫ অক্টোবর কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে সকাল ১০টা থেকে প্রতীকি অনশন পালনও অনশন শেষে স্মারকলিপি পেশের উদ্দেশে সকল সহকারি শিক্ষক মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে পদযাত্রা করবেন। এরপরও দাবি আদায় না হলে প্রাথমিক সহকারি শিক্ষকরা আসন্ন সমাপনী পরীক্ষা বর্জনসহ আমরণ অনশন পালন করা হবে।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারি শিক্ষক সমিতির (রেজি: নং ১২০৬৮) সভাপতি মোহাম্মদ শামছুদ্দীন, সাধারণ সম্পাদক সাবেরা বেগম, বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারি শিক্ষক সমাজের (রেজি: নং ১২০৪৮) সভাপতি আনিছুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক নুরে আলম সিদ্দিকি রবিউল, বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারি শিক্ষক সমাজের (রেজি: নং ১২১৯৮) সভাপতি তপন কুমার মন্ডল, সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান, জাতীয় প্রাথমিক সহকারি শিক্ষক ফাউন্ডেশনের (রেজি: নং ১২১৯৯) সভাপতি শাহিনুর আক্তার, সাধারণ সম্পাদক মোকাম্মেল হোসেন ও প্রাথমিক সহকারি শিক্ষক ফ্রন্টের সভাপতি ইউ এস খালেদা, সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন। এছাড়া আরো উপস্থিত ছিলেন, শিক্ষক নেতা আব্দুল কাদের জিলানী, মোহাম্মদ সালেহ উদ্দিন, শিশির কীর্তিনিয়া প্রমূখ।

দাবীসূমহ: ১। ৮ম জাতীয় পে-স্কেলে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকদের বেতন স্কেল প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বেতন স্কেলের ১ গ্রেড নিচে প্রদান করতে হবে।

২। প্রধান শিক্ষক পদে সরাসরি নিয়োগ বন্ধ করে সহকারী শিক্ষক পদকে এন্ট্রি পদ ধরে আর্থিক সুবিধাসহ শতভাগ পদোন্নতি দিতে হবে।

৩। ১৯/১০/২০১৪ তারিখে প্রাথমিক ও গনশিক্ষা মন্ত্রনালয় পরিদর্শন কালে প্রধান শিক্ষক ও সহকারি শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য নিরসনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাস বাস্তবায়ন করতে হবে।

৪। ৮ম জাতীয় বেতন স্কেলে টাইম স্কেল বহালসহ যথাসময়ে যোগদান তারিখ অনুযায়ী বর্ষিক ইনক্রিমেন্ট ১০% চক্রবৃদ্ধির হারে দিতে হবে এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রদান করতে হবে।

৫। প্রাথমিক ডিপার্টমেন্টকে নন্-ভেকেশনাল ডিপাটমেন্ট হিসাবে ঘোষণা করতে হবে।

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।