৫ বছরে ১৪ কোটি বই ছাপার কাজ নিয়েছে ভারত

imagesনিজস্ব প্রতিবেদক: গত পাঁচ বছরে প্রাথমিক স্তরের ১৪ কোটি পাঠ্যবই ছাপা হয়েছে ভারতে। বঞ্চিত হয়েছে দেশের মুদ্রণ শিল্প, গরিব শ্রমিক এবং ছোট ছোট অনেক ব্যবসায়ী। এ বাবদ ভারতে চলে গেছে দেশের কয়েক শ’ কোটি টাকা।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) ২০১০ সালে সর্বপ্রথম প্রাইমারি স্কুলের বই ছাপার জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহবান করে। সেই থেকে প্রতি বছর ভারতীয় কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কাছে চলে যায় দেশের পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ কাজের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ।
এনসিবিটি সূত্র জানায়, ২০১০ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর জন্য তিন কোটি বইয়ের মধ্যে ভারত এক কোটি ৯৮ লাখ বই ছাপার কাজ পায়।
২০১১ সালে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত সমস্ত বই (৮ কোটি) ছাপার জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহবান করে এনসিটিবি। সেবার ভারত তিন কোটি বই ছাপার কাজ পায়।
২০১২ সালেও প্রাইমারি স্কুলের সব বই (১০ কোটি ৭১ লাখ) ছাপার জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহবান করা হয় এবং ভারত তিন কোটি ৮৭ লাখ বই ছাপার কাজ পায়।
২০১৩ সালে প্রাথমিকে ১২ কোটি বইয়ের মধ্যে ভারত দুই কোটি ৩১ লাখ বই ছাপার কাজ পায়।
২০১৪ সালে ১১ কোটি ৫১ লাখ বইয়ের মধ্যে ভারত পায় ৩ কোটি বই ছাপার কাজ।
শুরু থেকেই আন্তর্জাতিক দরপত্রের তীব্র বিরোধিতা করে আসছেন দেশীয় মুদ্রণ শিল্প মালিকেরা। কিন্তু তাদের সব দাবি উপেক্ষা করে আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে গত পাঁচ বছর ধরে ভারতের হাতে তুলে দেয়া হয় দেশের পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণের কাজ। নিজের দেশকে উপেক্ষা করে এভাবে প্রতি বছর ভারতে পাঠ্যপুস্তক ছাপার কাজ তুলে দেয়ায় তীব্র ক্ষোভ এবং হতাশা নেমে আসে দেশের প্রেসমালিকদের মধ্যে। দেশের বিকাশমান মুদ্রণ শিল্প রক্ষায় প্রেসমালিকেরা বিদেশে পাঠ্যবই ছাপার অবসান দাবি করে আসছেন বারবার। এ জন্য বিভিন্ন সময় প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী বরাবর লিখিত চিঠিতে এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতি।
তাদের দাবি এনসিটিবির চাহিদা অনুযায়ী পাঠ্যবই ছাপার শতভাগ যোগ্যতা বাংলাদেশের রয়েছে। তাই তারা ভারতে পাঠ্যবই ছাপার বিরুদ্ধে। তাদের দাবি দেশের কাজ দেশে থাক। দেশের মুদ্রণ শিল্প এবং গরিব শ্রমিকেরা কিছু কাজ পাক। এতে দেশের মানুষ লাভবান হবে। এ দেশের প্রেসমালিকেরা সারা বছর অপেক্ষা করে থাকেন সরকারি বই ছাপার কাজ পাওয়ার জন্য। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠানকে কাজ না দিয়ে বিদেশের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে পাঠ্যবই ছাপার কাজ। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক দরপত্রে বিদেশী প্রতিষ্ঠানের চেয়ে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে নানা ধরনের বৈষম্য বিদ্যমান রয়েছে বলে অভিযোগ প্রেসমালিকদের।
প্রেসমালিকেরা বলেন, বই ছাপার ক্ষেত্রে আগে যেসব নিয়মকানুন দেশের প্রেসমালিকদের জন্য প্রযোজ্য ছিল তার অনেক কিছু শিথিল করা হয়েছে আন্তর্জাতিক দরপত্রের ক্ষেত্রে। আন্তর্জাতিক দরপত্রের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে নিজস্ব প্রেস না থাকলেও চলবে এবং অন্য প্রেসের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে সরবরাহের ব্যবসায় করে এমন প্রতিষ্ঠানও অংশ নিতে পারবে। বিগত বছরগুলোতে ভারতের যতগুলো প্রতিষ্ঠান কাজ পেয়েছে তাদের মধ্যে দুয়েকটি প্রতিষ্ঠান মুদ্রণ শিল্পের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। বাকি সবগুলোই ছিল সরবরাহকারী। তারা নিজেরা সরাসরি বই ছাপার কাজ করে না। যেমনÑ ভারতীয় একটি প্রতিষ্ঠান পেঁয়াজ এবং ডাল সরবরাহ করে বাংলাদেশে। সেই প্রতিষ্ঠানও অতীতে পেয়েছে বই ছাপার কাজ। আর বাংলাদেশের প্রেসমালিকেরা বঞ্চিত হয়েছেন বই ছাপার কাজ থেকে। নয়া দিগন্ত

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।