সু চির নোবেল কেন ফিরিয়ে নেওয়া হবে না?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :

রাখাইনে মিয়ানমার বাহিনী রোহিঙ্গাদের নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করছে, ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিচ্ছে। সেনাবাহিনীর বর্বর নির্যাতনে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে রোহিঙ্গারা। কয়েক শ রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছে। পালাতে গিয়ে নদীতে ডুবে মরছে তারা। নদীতে ভাসছে রোহিঙ্গা নারী-শিশুদের লাশ । জাতিসংঘের হিসেবে প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।

কিন্তু এত কিছুর পরও নির্বিকার সে দেশের অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে পরিচিত শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অং সান সু চি। গণতন্ত্রের জন্য যিনি দীর্ঘদিন অহিংস লড়াই করেছেন, সেই সু চির রহস্যজনক নিরবতা তাকে প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়েছে। রাখাইনে সামরিক অভিযান বন্ধে সোমবার বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে তার প্রতি আহ্বান জানানো সত্ত্বেও সু চি নিরব ভূমিকা পালন করছেন। এ ব্যাপারে সু চির কোনো উদ্যোগ ও পদক্ষেপ নেই।

সাংবাদিকরা এ বিষয়ে সু চিকে প্রশ্ন করলে তিনি সামরিকবাহিনীর পক্ষেই কথা বলেছেন। রোহিঙ্গারা সে দেশের নাগরিক নয় বলে সামরিকবাহিনী যে দাবি করছে, সু চি রাখাইনে অভিযানের ব্যাপারে পদক্ষেপ না নিয়ে তাদের সেই দাবিকেই সমর্থন করছেন।

এ অবস্থায় বিভিন্ন দেশে বিক্ষোভকারীরা অং সান সু চির নোবেল পুরস্কারের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। বলা হচ্ছে, সু চির নোবেল কেন ফিরিয়ে নেওয়া হবে না?  সু চির প্রতি নিন্দা জানানো বা তার নোবেল পুরস্কার কেড়ে নেওয়া যায় কিনা সে বিষয়ে নোবেল কমিটির পদক্ষেপ চেয়েছে তারা।

সোমবার নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরায়, ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় বিক্ষোভকারীরা সু চির পদক কেড়ে নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। জাকার্তায় বিক্ষোভকারীরা সু চির ছবি পুড়িয়েছেন এবং মিয়ানমার দূতাবাস লক্ষ্য করে গ্যাসোলিন বোমা ছুঁড়েছেন। বিক্ষোভকারীদের একজন বলেন, রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর গণহত্যা চলার সময় সারা বিশ্ব নীরব ভূমিকা পালন করছে, যা দুখঃজনক।

malala suchi120170905151658

রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর সহিংসতার নিন্দা জানিয়ে এই সহিংসতার দ্রুত অবসানের আহ্বান জানিয়েছেন শান্তিতে নোবেলজয়ী পাকিস্তানের  নারী শিক্ষা আন্দোলনকর্মী মালালা ইউসুফজাই। রোহিঙ্গাদের ওপর অমানবিক নিপীড়নের ঘটনায় মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চিকে নিন্দা জানানোরও আহ্বান জানিয়েছেন মালালা। এক টুইটে তিনি বলেন, বিগত কয়েক বছর ধরে আমি বারবার রোহিঙ্গাদের প্রতি মিয়ানমারের ‘মর্মান্তিক ও লজ্জাজনক’ আচরণের নিন্দা জানিয়ে আসছি। আমি এখনো অপেক্ষা করছি; আমার মতো শান্তিতে নোবেল জয়ী অং সান সু চি রোহিঙ্গা নিপীড়নের বিরুদ্ধে একই ধরনের নিন্দা জানাবেন। সু চির নিন্দার জন্য বিশ্ব এবং রোহিঙ্গা মুসলিমরা অপেক্ষা করছেন।

টুইটে মালালা আরো বলেন, ‘যেখানে রোহিঙ্গারা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বসবাস করছেন, সেখানে যদি তাদের আবাস না হয় তাহলে কোথায় তাদের আবাস?’ তিনি বলেন, রোহিঙ্গা মুসলমানদেরকে মিয়ানমারের নাগরিকত্ব দেওয়া উচিত, যেখানে তারা জন্মগ্রহণ করেছেন।’ তিনি বলেন, সহিংসতা বন্ধ না হলে মানবতা বিপন্ন হবে।

গত বছর মিয়ানমারে গণহত্যার পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করে মালালা ইউসুফজাই, ডেসমন্ড টুটু ও আরো ১১ জন নোবেল বিজয়ী একটি খোলা চিঠিতে স্বাক্ষর করেন। সু চির উদ্দেশ্যেই মূলত তারা এ পদক্ষেপ নেন। তারা সু চির বন্দি জীবন যাপনের কথা স্মরণ করেন।

১৯৮৮ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি জয়লাভ করলেও সরকার গঠন করতে না দিয়ে তাকে গৃহবন্দি করে রাখে সামরিক জান্তা। টানা ১৫ বছর তিনি গৃহবন্দি ছিলেন।

এরপর ২০১৫ সালে সু চির দল নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করার পর ক্ষমতা ভাগাভাগির চুক্তিতে তিনি স্টেট কাউন্সিলর হন। বর্তমানে সু চি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করছেন।

তাদের আক্ষেপ- যে সু চি অধিকার আদায়ে লড়াই করেছেন, গণতন্ত্রের জন্য সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে লড়েছেন, সেই সু চি রাখাইনদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের ঘটনায় কী করে নির্লিপ্ত আছেন?

malala suchi20170905151703

এ অবস্থায় সু চির নোবেল শান্তি পুরস্কার কেড়ে নেওয়ার কথা বলেছেন বিক্ষোভকারীরা। তবে এ নিয়ে বিতর্ক এই প্রথম নয়। যদিও নোবেল পুরস্কার প্রদান করে তা কেড়ে নেওয়া হয়েছে, এমন রেকর্ড এখন পর্যন্ত নেই। তবে এর আগেও বিভিন্ন জনের এই পুরস্কার ফিরিয়ে নেওয়ার দাবি উঠেছিল।

যেমন- এর আগে হেনরি কিসিঞ্জার ও বারাক ওবামার নোবেল কেড়ে নেওয়ার দাবি উঠেছিল। এ ছাড়া ১৯৯৪ সালে যে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল তার প্রতিবাদে নোবেল কমিটির এক সদস্য পদত্যাগ করেছিলেন। ওই বছর যৌথভাবে ইসরাইলি নেতা শিমন পেরেস, আইজাক রবিন ও ফিলিস্তিন নেতা ইয়াসির আরাফাতকে এ পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল। তখন কমিটির সদস্য কারে ক্রিস্টিয়ানসেন এই বলে পদত্যাগ করেন যে ইয়াসির আরাফাত একজন ‘সন্ত্রাসী’ এবং তিনি এ পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য নন।

গুনার স্টলসেট নামে নোবেল কমিটির প্রাক্তন এক সদস্য যিনি ১৯৯১ সালে সু চিকে নোবেল প্রদানের কমিটিতে ছিলেন, তিনি বলেন, নোবেল পদক দেওয়ার পর তা কখনো ফিরিয়ে নেওয়া হয় না। এমনকি পুরস্কারপ্রাপ্ত কারো ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিলে কিংবা তার সম্পর্কে কোনো বিতর্ক উঠলে সে বিষয়ে কমিটি কোনো নিন্দাও জানায় না। তিনি বলেন, ‘যখন সিদ্ধান্ত হয় এবং পদক দেওয়া হয়, তখনই কমিটির দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়।’

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।